গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ৮৩ ফিলিস্তিনি, তীব্র হচ্ছে দুর্ভিক্ষ

অনলাইন ডেস্ক: ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর টানা হামলায় আরও অন্তত ৮৩ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে অনেকেই সহায়তার আশায় বের হওয়া সাধারণ মানুষ। অনাহার ও অপুষ্টিতে মারা গেছে আরও অন্তত ৮ জন, যাদের মধ্যে রয়েছে শিশুও।
গতকাল মঙ্গলবারের (৫ আগস্ট) এই হতাহতের খবর নিশ্চিত করেছে গাজার স্থানীয় চিকিৎসা কর্মকর্তারা। সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, নিহত ৮৩ জনের মধ্যে ৫৮ জনই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমর্থনে পরিচালিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)-এর খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে যাওয়ার পথে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান।
গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকা থেকে আলজাজিরার প্রতিবেদক হিন্দ খুদারি বলেন, ‘জিএইচএফ-এর কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকেই একই ঘটনা ঘটছে। মানুষ খাবারের আশায় লাইনে দাঁড়াচ্ছে, আর তাদের ওপর গুলি চালানো হচ্ছে।’
তিনি জানান, উত্তর গাজার জিকিম ক্রসিংয়ের কাছ থেকে আহতদের আল-শিফা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুলির চিহ্ন রয়েছে— বিশেষত মাথা, গলা ও বুক। এই ক্ষতগুলো চিকিৎসার জন্য অত্যন্ত জটিল বলে জানান তিনি।
জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা জিএইচএফ-এর সক্ষমতা ও এর কার্যক্রমের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংস্থাগুলোর অভিযোগ, যথাযথ সহায়তা দিতে ব্যর্থ হওয়ার পাশাপাশি এই এলাকাগুলোতে নিরাপত্তার চরম অভাব রয়েছে। তাদের হিসেব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত গাজায় সহায়তার আশায় বের হয়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ১ হাজার ৫৬০ জন ফিলিস্তিনি।
এদিকে মানবিক সাহায্য সংস্থা ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সতর্ক করে জানিয়েছেন, গাজায় বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে দুর্ভিক্ষ ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।
৭৫ বছর বয়সী সালিম আসফুর আলজাজিরাকে বলেন, ‘গত কয়েক মাস ধরে শুধু রুটি আর পানি খেয়ে বেঁচে আছি। একসময় ৮০ কেজি ছিলাম, এখন ওজন ৪০ কেজিতে নেমে এসেছে। ছেলে আমাকে বাথরুমে নিয়ে যায়। রাফাহ থেকে খাবার আনতে হবে—২০ কিলোমিটার হেঁটে কীভাবে যাব?’
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহার ও অপুষ্টিতে আরও ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে একজন শিশু রয়েছে। চলমান যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে প্রাণ হারিয়েছেন ১৮৮ জন ফিলিস্তিনি, যাদের অর্ধেকই শিশু।
ইউএনআরডব্লিউএ-এর বরাতে জানা যায়, সোমবার গাজায় মাত্র ৯৫টি সহায়তাবাহী ট্রাক প্রবেশ করেছে, যেখানে প্রতিদিন অন্তত ৬০০ ট্রাক প্রয়োজন সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকার ন্যূনতম চাহিদা পূরণে। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৮৫টি ট্রাক প্রবেশ করছে, যা চরমভাবে অপর্যাপ্ত।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস এক বিবৃতিতে আবারও সতর্ক করে জানিয়েছে, ‘মানবিক বিপর্যয় আরও গভীর হচ্ছে।’ তাদের দাবি, সহায়তা আসার পর তা পরিকল্পিতভাবে লুট হচ্ছে, যা ইসরায়েলি বাহিনীর সৃষ্টি করা নিরাপত্তা শূন্যতার সুযোগে সংঘটিত নৈরাজ্যেরই অংশ।