ইলিশের স্বাদ ভুলতে বসেছে মধ্যবিত্তরাও

অনলাইন ডেস্ক: মাছটি উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, উপযোগী আবহাওয়া ও ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বিশ্বের মোট ইলিশ উৎপাদনের ৮৬ শতাংশই হয় বাংলাদেশে। উচ্চমূল্যের কারণে সেই ইলিশ এখন স্বল্পআয়ের মানুষের নাগালের বাইরে। নিম্ন-মধ্যবিত্ত তো বটেই, মধ্যবিত্তরাও এর স্বাদ ভুলতে বসেছে। বর্তমানে রাজধানীর খুচরা বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা। আর এক থেকে দুই কেজির নিচে ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা। কিন্তু, কেন এ অবস্থা?

ব্যবসায়ীরা বলছেন, নদী, সাগর সবখানে এবার ইলিশ মিলছে কম। সাগরে কিছু ইলিশ ধরা পড়লেও নদীতে এখনো উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ইলিশ মিলছে না। সাগর মোহনায় ডুবোচর ও বিভিন্ন জালের মাধ্যমে মাছ শিকারের কারণেও নদীতে ইলিশ ভিড়তে পারছে না। কয়েক বছর আগেও এ অবস্থা ছিল না। আর সরবরাহ কমায় গত দুই/তিন বছরে ইলিশের দাম বেড়েছে লাগামহীনভাবে।

গবেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের যেসব নদীতে ইলিশ মাছ বিচরণ করে বিশেষ করে পদ্মা-মেঘনাসহ অন্যান্য নদীতীরে গড়ে উঠেছে শিল্প-কারখানা। এসব কারখানা থেকে অপরিশোধিত তরল বর্জ্য নদীতে ফেলা হয়। এতে পানির গুণমান বদলানোর কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ইলিশসহ অন্যান্য মাছের প্রজননে। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, মৎস্য অধিদপ্তর দেশে ইলিশ উৎপাদনের যে তথ্য দিচ্ছে, সে হিসেবে গত অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন কিছুটা কমলেও বাজারে মাছটির সরবরাহ এত কম হওয়ার কথা নয়। পাশাপাশি দামও এত বেশি হতে পারে না।

মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, ২০০৮- ০৯ অর্থবছরে দেশে মোট ইলিশ উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৯৮ হাজার টন। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে তা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ, অর্থাৎ ৫ লাখ ১৭ হাজার টনে উন্নীত হয়। কিন্তু এর পর থেকেই ইলিশ আহরণ কমতে থাকে। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে দেশে ৫ লাখ ৭১ হাজার টন ইলিশ ধরা পড়লেও গত অর্থবছর তা কমে ৫ লাখ ২৯ হাজার টনে দাঁড়ায়। সে হিসাবে ইলিশের আহরণ কমেছে ৪২ হাজার টন। কিন্তু বাজারে গত দুই/তিন বছর ধরে ইলিশের সরবরাহ ক্রমাগত কমছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দাম।

এ প্রসঙ্গে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. মো. আবদুর রউফ গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ দূষণ, সাগর মোহনায় ডুবোচরসহ নানা কারণে ইলিশ যে পথে চলাচল করে তা পরিবর্তন করতে পারে। তবে ইলিশ উৎপাদনের যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তা ঠিক আছে। ইলিশ সম্পদের উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে মৎস্য অধিদপ্তরের ‘ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প’। এই প্রকল্পের পরিচালক মোল্লা এমদাদুল্যাহ ইত্তেফাককে বলেন, গত অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন কিছুটা কম হয়েছে। তবে এ বছর আশা করছি, ইলিশ উৎপাদন বেশি হবে। আগের বছরগুলোতে ইলিশের অতি আহরণ হয়েছে। কিন্তু আমাদের ৫০ শতাংশ মাছ সাগরে, নদীতে রেখে দিতে হবে, পরের বছরের জন্য। এক বছর ৬০ শতাংশ মাছ ধরে ফেললে পরের বছর ঠিকই উৎপাদন কম হবে। তবে আগামী ৫ থেকে ১২ আগস্টের মধ্যে নদীতেও প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে বলে আশা করছি।

দেশে বিভিন্ন পণ্যের দামের পর্যবেক্ষণ করে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। সংস্থাটির তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে ইলিশের গড় মূল্য ছিল ১ হাজার ১৫০ টাকা। অন্যদিকে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)’র হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ঢাকায় ৫০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের ইলিশের গড় দাম ছিল ১ হাজার ২০০ টাকা। আর ১ থেকে ২ কেজি ওজনের ইলিশের দাম ছিল ১ হাজার ৬০০ টাকা।

ইলিশের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে ক্যাবের সহসভাপতি এস এম নাজির হোসেন বলেন, বর্তমানে বাজারে যে দরে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে, এত দামে এর আগে কখনো বিক্রি হয়নি। দাদন দিয়ে মধ্যস্বত্বভোগীরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন। তাদের সিন্ডিকেটের কারণেই ইলিশের দাম এত বেশি হতে পারে। সরকার বাজারে কঠোর নজরদারি করলে দাম কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হতো। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, বাজারে ইলিশের সরবরাহ কম থাকার পাশাপাশি চাঁদাবাজি ও ডিজেলের দাম বেশি হওয়ার কারণে ইলিশের দাম বেশি।

চাঁদপুর সরবরাহ বেড়েছে : ইত্তেফাকের চাঁদপুর প্রতিনিধি শাহরিয়া বিন ইয়াহিয়া জানিয়েছেন, মৌসুমের শুরুতে চাঁদপুর মাছঘাটে পর্যাপ্ত ইলিশের সরবরাহ না থাকলেও হঠাৎ করেই আড়তে ইলিশের সরবরাহ বেড়েছে। আগে যেখানে ৫০ থেকে ৬০ মণ ইলিশ সরবরাহ হতো, সেখান হঠাৎ করেই ৩০০ থেকে ৪০০ মণ ইলিশ ঘাটে এসেছে।

Related Articles

Back to top button