বোনের গ্রামে চিরশায়িত হলেন মাইলস্টোন কলেজের শিক্ষক মাসুকা বেগম

অনলাইন ডেস্ক: শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী বোনের বাড়ির গ্রামে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক মাসুকা বেগম (নিপু)।
গতকাল মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার সোহাগপুর ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে গ্রামের প্রধান কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
গত সোমবার (২১ জুলাই) রাজধানীর আশকোনা এলাকায় বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার সময় মাসুকা বেগম মাইলস্টোন কলেজে ক্লাস নিচ্ছিলেন। দুর্ঘটনার ফলে তার শরীরের প্রায় ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি মারা যান।
নিহত মাসুকা বেগম মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাইমারি শাখার ইংরেজি মাধ্যমে ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক ছিলেন।
বার্ন ইনস্টিটিউট থেকে তার মরদেহ গ্রহণ করেন বড় বোন পাঁপড়ি রহমান ও ভগ্নিপতি আশুগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. খলিলুর রহমান। এর আগে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনে তাঁর গোসল ও কাফনের কাজ সম্পন্ন হয়।
ভগ্নিপতি খলিলুর রহমান জানান, মৃত্যুর আগে হাসপাতালের পাশের বেডে থাকা এক সহকর্মী শিক্ষককে মাসুকা অসিয়ত করে যান—মৃত্যুর পর যেন তাঁকে আশুগঞ্জ উপজেলার সোহাগপুর গ্রামে কবর দেওয়া হয়। সেই ইচ্ছার প্রতিফলন হিসেবেই মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহ নিয়ে আসা হয় আশুগঞ্জে।
মাসুকা বেগম ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের চিলোকুট চৌধুরী বাড়ির প্রয়াত সিদ্দিক আহমেদ চৌধুরীর কনিষ্ঠ কন্যা। তিন ভাই-বোনের মধ্যে মাসুকা ছিলেন সবার ছোট। তার মা আগেই মারা যান। মা-বিয়োগের পর থেকে মাসুকা বড় বোনের স্নেহে বড় হয়েছেন আশুগঞ্জের সোহাগপুর গ্রামে, যা ছিল তাঁর বড় বোনের শ্বশুরবাড়ি।
মাসুকার মৃত্যুতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার চিলোকুট এবং আশুগঞ্জের সোহাগপুর গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শোকে বিহ্বল পিতা, ভাই-বোন এবং আত্মীয়স্বজনরা।
নিহত শিক্ষিকার সহকর্মী অধ্যাপক আবু হানিফ বলেন, মাসুকা বেগম ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী, আল্লাহভীরু এবং পর্দানশীল একজন শিক্ষক। তিনি নিয়মিত নামাজ আদায় করতেন এবং ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতেন। তার মতো শিক্ষকের এমন মর্মান্তিক মৃত্যু গভীর বেদনার। ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়াতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।