পাকিস্তানকে হারিয়ে ৯ বছরের খরা কাটাল বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক: শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের পর ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে নতুন পরীক্ষায় নামে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচ সিরিজের সেই পরীক্ষার প্রথম ম্যাচেই লেটার মার্ক পেয়ে পাশ করলো লিটন দাসের দল। সালমান আগার পাকিস্তান দলকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে স্বাগতিক বাংলাদেশ।

কথায় আছে, শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। শ্রীলঙ্কা সফরের শুরুটা খারাপ হলেও শেষটা অবশ্য ভালোই করেছে টাইগাররা। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এবার পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় দিয়েই টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু করলো বাংলাদেশ।

আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে এটি বাংলাদেশের চতুর্থ জয়। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানকে হারিয়ে ৯ বছরের খরা কাটিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে এশিয়া কাপে ৫ উইকেটে জেতার পর দেশে কিংবা দেশের বাইরে টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ।

আগে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারে ভালো শুরুর আভাস দিলেও দ্বিতীয় ওভারেই খেই হারিয়ে বসে পাকিস্তান। দলের বাকি ব্যাটাররা আসা-যাওয়ার মিছিলে যোগ দিলেও এক প্রান্ত আগলে রানের চাকা সচল রাখেন ওপেনার ফখর জামান। তবে ৩৪ বলে ৪৪ রান করা এই ওপেনার কাটা পড়েন রানআউটে। এ ছাড়া খুশদিল শাহ করেন ২৩ বলে ১৮ ও আব্বাস আফ্রিদির ব্যাট থেকে আসে ২৪ বলে ২২ রান। তা ছাড়া পাকিস্তানের আর কোনো ব্যাটারই ছুঁতে পারেননি দুই অঙ্কের ঘর।

ফখর জামানের ৪৪ রানের ওপর ভর করে কোনোমতে একশ পার করে তারা। শেষ পর্যন্ত ৩ বল বাকি থাকতেই ১১০ রানে অলআউট হয়ে যায় সফরকারীরা। এই সংস্করণে বাংলাদেশের বিপক্ষে যা পাকিস্তানের সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ।

১১১ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশও শুরুটা ভালো করতে পারেনি। ইনিংসের প্রথম ওভারেই ওপেনার তানজিদ হাসান তামিমকে হারায় স্বাগতিকরা। সালমান মির্জার পঞ্চম বলে ফখর জামানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এই ওপেনার। ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৪ বলে ১ রান।

দ্বিতীয় উইকেটও শিকার করেন সালমান মির্জা। তৃতীয় ওভারে বল করতে এসে ৪ বলে ১ রান করা লিটনকে খুশদিলের ক্যাচ বানিয়ে ফেরত পাঠান এই বোলার। ৭ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে স্বাগতিকরা।

সেখান থেকে দলের হাল ধরেন পারভেজ হোসেন ইমন ও তাওহীদ হৃদয়। দুজনেই ব্যাট করতে থাকেন দেখেশুনে। দলীয় স্কোর ৭ থেকে ৮০-তে নিয়ে যান এই দুই ব্যাটার। ৩৭ বলে ৩৬ রান করা তাওহীদ হৃদয় আব্বাস আফ্রিদির বলে বোল্ড হয়ে ফিরলে ভাঙে তাদের ৭৩ রানের জুটি।

এরপর জাকের আলী অনিককে নিয়ে বাকি কাজটা সারেন ইমন। এক পর্যায়ে ৩৪ বলেই ফিফটি তুলে নেন বাঁহাতি ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন। শেষ পর্যন্ত দলের জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়েন তিনি। ৩৯ বলে ৫৬ রানে অপরাজিত থাকেন ইমন। অন্য প্রান্তে জাকের অপরাজিত থাকেন ১০ বলে ১৫ রানে।

এর আগে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ওপেনার সাইম আইয়ুবের উইকেট হারায় পাকিস্তান। তাসকিন আহমেদের বলে মোস্তাফিজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এই ব্যাটার। পরের ওভারে মোহাম্মদ হারিসকে ফেরান মেহেদী হাসান।

পাকিস্তান শেষ ওভারটা শুরু করেছিল ৭ উইকেটে ১১০ রান নিয়ে। ওভারের প্রথম তিন বলেই উইকেট হারিয়ে অলআউট দলটি। তাসকিনের করা ওভারের প্রথম বলে মেহেদীকে ক্যাচ দেন ফাহিম আশরাফ। পরের বলে রানআউট হন অভিষিক্ত সালমান মির্জা। তৃতীয় বলে আব্বাস আফ্রিদি ক্যাচ দেন লিটন দাসের হাতে।

এ ম্যাচে দারুণ এক রেকর্ড করেছেন মোস্তাফিজুর রহমান। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৪ ওভারের কোটা পূরণ করে সবচেয়ে কম রান দেওয়ার রেকর্ড গড়েন বাঁহাতি এই পেসার। মিরপুরে আজ পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪ ওভার বোলিং করে মাত্র ৬ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট।

অধিনায়ক সালমান আগা আউট হয়েছেন মাত্র ৩ রান করেই। তানজিম হাসান সাকিবের বলে লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন পাকিস্তান অধিনায়ক। বল হাতে আক্রমণে এসেই হাসান নাওয়াজকে ফেরান মোস্তাফিজুর রহমান। ফোর্থ স্টাম্পের বল মারতে গিয়ে ডিপ থার্ডম্যানে রিশাদের হাতে ক্যাচ ফেরেন এই ব্যাটার। ৪ বল খেলে কোনো রান না করেই ফিরতে হয় তাকে।

খুশদিল শাহ’কে ফেরান মোস্তাফিজুর। ১৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলে রিশাদের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ২৩ বলে ১৮ রান করা এই ব্যাটার। এরপর ফাহিম আশরাফও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ১০ বলে ৫ রান করে তাসকিনের বলে মেহেদী হাসানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।

শেষ ওভারে সালমান মির্জা রানআউটে কাটা পড়েন। এরপর ২৪ বলে ২২ রান করা আব্বাস আফ্রিদি তাসকিনের বলে লিটনের হাত ক্যাচ দিয়ে ফিরলে ১১০ রানেই অলআউট হয় পাকিস্তান। বাংলাদেশের হয়ে তাসকিন আহমেদ নেন ৩ উইকেট। মোস্তাফিজুর রহমান শিকার করেন ২ উইকেট, তানজিম সাকিব ও মেহেদী হাসান নেন একটি করে উইকেট।

Related Articles

Back to top button