চট্টগ্রামে শিল্পে নতুন গ্যাস- সংযোগ নিয়ে তালবাহানা

অনলাইন ডেস্ক: চট্টগ্রামে গ্যাস-সংকটে শিল্পায়নে স্থবিরতা বিরাজ করছে। সাম্প্রতিক সময়ে শিল্প খাতে গ্যাসের নতুন কোনো সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না। অনেক শিল্পোদ্যোক্তা শিল্পে সংযোগের জন্য ডিমান্ড নোটের টাকা পরিশোধ করে সংযোগ পাচ্ছেন না। শিল্পে সংযোগ নিয়ে চলছে নানা টালবাহানা। কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানির কর্মকর্তারা জানান, চালু থাকা শিল্পে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। চট্টগ্রামে গ্যাসের বরাদ্দ না বাড়ানোর কারণে শিল্পে নতুন সংযোগ দেওয়া যাচ্ছে না।
চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ এলএনজিনির্ভর। বর্তমানে মহেষখালীর ভাসমান টার্মিনাল থেকে দৈনিক ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু এলএনজি সরবরাহ বাড়লেও চট্টগ্রামে গ্যাসের বরাদ্দ বাড়ানো হয় না। দৈনিক চাহিদা প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট হলেও কোনো সময় চট্টগ্রামে গ্যাসের বরাদ্দ ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি বাড়ানো হয় না। কেজিডিসিএল জানায়, বর্তমানে সংকটের মধ্যে দৈনিক ২৬০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। এতে চট্টগ্রামে শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
শিল্পায়নের জন্য বিনিয়োগকারীদের কাছে পছন্দের তালিকায় চট্টগ্রাম হলেও বিনিয়োগে নিরুত্সাহিত হচ্ছে। বছরের পর বছর অপেক্ষা করেও গ্যাস-সংযোগ মিলছে না। কেজিডিসিএলের কর্মকর্তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামে শিল্পে গ্যাস-সংযোগ নিয়ে নানামুখী হয়রানির শিকার হচ্ছে শিল্পোদ্যোক্তারা। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে ধরনা দিয়েও গ্যাস-সংযোগ মিলছে না। চট্টগ্রামে শিল্প, বাণিজ্যিক ও আবাসিক খাতে নতুন কোনো গ্যাস-সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না। কোম্পানিতে পরিচালনা খরচ বাড়লেও গ্যাস বিপণন না বাড়ার কারণে কোম্পানির আয়-ব্যয় নিরসনে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কোম্পানি থেকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা কমে গেছে।
কেজিডিসিএল সূত্র জানায়, শিল্পে নতুন সংযোগের জন্য প্রায় ১৩০টি আবেদন জমা রয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই সংযোগের জন্য ডিমান্ড চার্জে টাকা পরিশোধ করেছে। অনেক শিল্পোদ্যোক্তা সংযোগের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে কারখানার অবকাঠামো নির্মাণ ও মেশিনারি সরঞ্জাম স্থাপন করে উৎপাদন চালুর জন্য প্রস্তুত করে ফেলেছে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে গ্যাস-সংযোগ না পাওয়ায় উৎপাদনে যেতে পারছে না বলে গ্যাস কোম্পানির শীর্ষ এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
কেজিডিসিএলের শীর্ষ এক কর্মকর্তা জানান, গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও পেট্রোবাংলায় কর্মকর্তা পর্যায়ে পরিবর্তন হয়েছে। এতে নতুন যারা এসেছেন তারা দেশে চলমান গ্যাস-সংকট ও শিল্পায়নে নতুন গ্যাস-সংযোগের অগ্রাধিকার নিয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারছে না। এতে শিল্পে গ্যাসের অনেক ফাইল আটকা পড়েছে।
কেজিডিসিএলের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, কোম্পানি গত প্রায় দুই বছর যাবত শতাধিক শিল্প কারখানায় সংযোগ থাকা সত্ত্বেও গ্যাস নিচ্ছে না। এসব কারখানাগুলোর মধ্যে ব্যবসায় লোকসান, ব্যাংক ঋণ জটিলতাসহ নানা কারণে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এতে বন্ধ থাকা শিল্পে গ্যাস সাশ্রয় হচ্ছে। আবার সিইউএফএল সার কারখানা ও গ্যাসনির্ভর কয়েক বিদ্যুৎকেন্দ্রেও উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। উৎপাদন বন্ধ থাকা এসব সরকারি বেসরকারি শিল্পের সাশ্রয়কৃত গ্যাস নতুন বিনিয়োগে সংযোগ দিতে পারে। কিন্তু মন্ত্রণালয় ও পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। সাশ্রয়কৃত এসব গ্যাস দিয়ে নতুন সংযোগ দিলে রপ্তানিমুখী অনেক শিল্প কারখানা চালু করা সম্ভব হতো।
এদিকে অর্থনৈতিক নানা সংকটে ব্যবসা বাণিজ্যে কিছুটা মন্দাভাব বিরাজ করছে। দেশে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি নতুন প্রকল্প গ্রহণ স্লো মানোভাবের কারণে নির্মাণসামগ্রী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন কম হচ্ছে। কেজিডিসিএলের বিপণন বিভাগের এক কর্মকর্তা চট্টগ্রামে প্রায় ১৩৫টি শিল্প কারখানায় গ্যাসের ব্যবহার ৩০ শতাংশ কমেছে। বেসরকারি শিল্প গ্রুপ বিএসআরএমের জেনারেল ম্যানেজার তপন সেনগুপ্ত বলেন, বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ কম হওয়ায় নির্মাণসামগ্রী উৎপাদন স্বাভাবিকের চেয়ে কম হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির কারণে উন্নয়ন কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।’
কেজিডিসিএলের রাজস্ব বিভাগ সূত্র জানায়, কোম্পানির পরিচালনা খরচ আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। কিন্তু গ্যাস বিক্রি না বাড়ায় আয় বাড়ছে না। অথচ চট্টগ্রামে গ্যাস বিক্রি করে রাজস্ব আহরণের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।