গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে নিহত আরও ৭৮ ফিলিস্তিনি

অনলাইন ডেস্ক: গাজায় অব্যাহত ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে একদিনেই প্রাণ হারিয়েছেন আরও অন্তত ৭৮ জন ফিলিস্তিনি। দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফা, খান ইউনিস, বুরেইজ ও গাজা শহরজুড়ে চালানো একাধিক হামলায় হতাহতের এই ঘটনা ঘটে। ইসরায়েলের এই সামরিক আগ্রাসনে নিহতের মোট সংখ্যা এরই মধ্যে ৫৮ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ওয়াফার বরাতে আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার (১৪ জুলাই) সকালে দক্ষিণ গাজার রাফায় একটি সরকারি খাদ্য সহায়তা কেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত হন। হতাহতরা সবাই ত্রাণ নিতে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

ওয়াফা আরও জানায়, গত দুই মাসে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)-এর আশপাশে ত্রাণ নিতে গিয়ে হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৮৩৮ জন ফিলিস্তিনি।

সোমবারই খান ইউনিসের একটি বাস্তুচ্যুত শরণার্থী শিবিরে বিমান হামলায় প্রাণ হারান আরও নয়জন, আহত হন অনেকে। একই দিনে মধ্য গাজার বুরেইজ শিবিরেও ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন চারজন।

উত্তর গাজা ও গাজা শহরেও হামলার মাত্রা বাড়িয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজা শহরের তুফাহ ও শুজাইয়া এলাকায় ব্যাপক বিমান হামলায় বহু বাসাবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন আল জাজিরার স্থানীয় সংবাদদাতা তারেক আবু আযম। এদিকে শহরের অভ্যন্তরে একটি ট্যাংক রকেট হামলায় ইসরায়েলি সেনাদের হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। পরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, ওই হামলায় তাদের তিন সদস্য নিহত হয়েছেন।

এমন সংকটময় অবস্থায় নতুন আশার ইঙ্গিত দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘গাজা ইস্যুতে ইতিবাচক অগ্রগতি হচ্ছে।’ তবে সেই অগ্রগতি ঠিক কী ধরনের এবং কোন পর্যায়ে আছে—তা নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি।

জাতিসংঘও গাজার পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে। সংস্থাটির এক বিবৃতিতে বলা হয়, নিয়মিত জ্বালানি প্রবেশ না করলে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। যদিও গত বৃহস্পতিবার ১৩০ দিনের মাথায় সীমিত পরিমাণে জ্বালানি প্রবেশ করেছে গাজায়, তবে তা এক দিনের প্রয়োজন মেটাতেই ব্যর্থ হয়েছে। এর ফলে চরম সংকটে রয়েছে হাসপাতাল, পানির সরবরাহব্যবস্থা এবং জরুরি ত্রাণ কার্যক্রম।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৫৮ হাজারের বেশি মানুষ। এদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন আরও প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ।

বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধবিরতি আলোচনায় অগ্রগতির কথা বলা হলেও, বাস্তবতা হচ্ছে মাটিতে প্রতিদিন আরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হচ্ছেন—মানবিক বিপর্যয় আরও তীব্র হচ্ছে।

Related Articles

Back to top button