ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে ট্রান্সজেন্ডার লিয়ার সাঁতারু পদক বাতিলের সিদ্ধান্ত

অনলাইন ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের ক্রীড়াঙ্গনে ট্রান্সজেন্ডার ক্রীড়াবিদদের অংশগ্রহণ নিয়ে বিতর্কের মধ্যে এবার কড়া পদক্ষেপ নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর নারীদের খেলায় ট্রান্সজেন্ডার ক্রীড়াবিদদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করে একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন তিনি। এই আদেশের ফলেই বিতর্কিত সাঁতারু লিয়া টমাসের সাঁতারের পদক ও রেকর্ড বাতিলের পথে এগোচ্ছে পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়।

২০২২ সালে পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে এনসিএএ চ্যাম্পিয়নশিপে নারীদের বিভাগে অংশ নিয়ে ইতিহাস গড়েছিলেন লিয়া টমাস। তিনি ছিলেন প্রথম ট্রান্সজেন্ডার ক্রীড়াবিদ, যিনি এই প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জেতেন। কিন্তু তার আগে পুরুষদের বিভাগে ৪৬২তম র‍্যাঙ্কিংধারী এ সাঁতারু নারীদের বিভাগে অংশ নিয়ে শীর্ষে উঠে আসেন, যা সেসময় থেকেই বিতর্কের জন্ম দেয়। অনেক নারী প্রতিযোগী অভিযোগ করেছিলেন, এতে করে তারা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ট্রাম্প নির্বাহী আদেশ জারি করেন, যার আওতায় স্কুল, কলেজ এবং তৃণমূল পর্যায়ে মেয়েদের খেলায় ট্রান্সজেন্ডার ক্রীড়াবিদদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়। এই আদেশ অমান্যকারীরা ফেডারেল অর্থায়ন হারাতে পারেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন ট্রাম্প।

এই আদেশ অনুসারে পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় জুলাই মাসের শুরুতেই জানিয়ে দেয়, তারা আর নারীদের প্রতিযোগিতায় ট্রান্সজেন্ডার ক্রীড়াবিদদের অংশগ্রহণের অনুমতি দেবে না এবং ২০২১-২২ মৌসুমের রেকর্ড নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী হালনাগাদ করবে। এর ফলে লিয়া টমাসের একক রেকর্ড ও পদক বাতিল করা হবে। তবে দলীয় ইভেন্টে (৪x১০০ মিটার রিলে) তার অংশগ্রহণ স্বীকৃত থাকবে।

এ প্রসঙ্গে কয়েক মাস ধরে একটি আইনি প্রক্রিয়াও চলছিল। যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন নাগরিক অধিকার কার্যালয় (OCR) জানায়, পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭২ সালের টাইটেল নাইন (Title IX) আইন লঙ্ঘন করেছে, যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লিঙ্গবৈষম্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

বুধবার (২ জুলাই) মার্কিন শিক্ষা বিভাগ এক ঘোষণায় জানায়, পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এই আইন লঙ্ঘনের দায় স্বীকার করে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছে এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া নারীদের কাছে আনুষ্ঠানিক ক্ষমাপত্র পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা স্বীকার করছি যে আমাদের কিছু শিক্ষার্থী ক্রীড়াবিদ প্রতিযোগিতায় বৈষম্যের শিকার হয়েছেন এবং কেউ কেউ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছেন। আমরা তাদের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।’

লিয়া টমাসের অর্জনকে ঘিরে এই ঘটনা শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনেও তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত সমর্থন ও সমালোচনা—উভয় ধরনের প্রতিক্রিয়াই তৈরি করছে ক্রীড়া মহলে।

Related Articles

Back to top button