সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানকে মারধরের পর বিবস্ত্র

অনলাইন ডেস্ক: নারায়ণগঞ্জের বন্দরে হরিপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওভার হোলিংয়ের ঠিকাদারি কাজ পায় নারায়ণগঞ্জ জেলা মোটর শ্রমিক লীগের নেতা ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য হাজী আলাউদ্দিন। আওয়ামী লীগ নেতার ঠিকাদারি কাজ চালু করতে এসে বিএনপির নেতাকর্মীদের রোষানলে পড়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন বন্দর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির বহিষ্কৃত সভাপতি আতাউর রহমান মুকুল।
গতকাল রোববার (২৯ জুন) দুপুর ১২টার দিকে হারিপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের গেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে। আতাউর রহমান মুকুলের বিবস্ত্র করা ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। মুকুলের বিবস্ত্র ছবি ছিল দিনের টক অব দ্য নারায়ণগঞ্জ।
ক্ষুব্ধ বিএনপির নেতাকর্মীরা তাকে মারধর করে জামা-কাপড় ছিঁড়ে ফেলে বিবস্ত্র করে। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে অর্ধউলঙ্গ অবস্থায় উদ্ধার করে বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, নারায়ণগঞ্জের বন্দরের কুঁড়িপাড়ায় হরিপুর ৪১২ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওভার হোলিং (শাটডাউন) পরিষ্কারের কাজ পায় জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও মোটর শ্রমিক লীগ নেতা হাজী আলাউদ্দিন। দ্বিতীয় হয় স্থানীয় বিএনপির আরেক নেতার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশের গ্রাম কুতুবপুরের বাসিন্দা বজলুর রহমান ওরফে ডন বজুল জানান, গত সপ্তাহে এ কাজের টেন্ডার হয়। আজকে আতাউর রহমান মুকুল আওয়ামী লীগ নেতা হাজী আলাউদ্দিনের পক্ষে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আসেন। তাকে আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিনকে সহযোগিতা না করার জন্য বিএনপির নেতাকর্মীরা অনুরোধ জানান; কিন্তু তিনি কথা না শুনে রোববার তার পক্ষে (আলাউদ্দিন হাজী) একটি মাইক্রোবাসে করে কাজটি চালু করতে হরিপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সামনে আসেন। এ সময় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দেওয়ান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী হাজী আলাউদ্দিনের কয়েকজন আত্মীয়ও তার সঙ্গে ছিলেন। এ সময় বিএনপি নেতা ডন মজনুর নেতৃত্বে বন্দর ও কুতুবপুর বিএনপির নেতাকর্মীরা মুকুলের সঙ্গে তর্কাতর্কি করেন। একপর্যায়ে মুকুল কাজ চালু করা হবে এমন কথা জানালে ক্ষুব্ধ বিএনপি নেতাকর্মীরা তাকে মারধর করে জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলেন। এ সময় সেখানে থাকা পুলিশ তাদের বাধা দিয়ে মুকুলকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা করায়। পরে তাকে শহরের সিলভার ক্রিসেন্ট নামে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।
হামলা শিকার আতাউর রহমান মুকুল বলেন, হামলার আতঙ্কে তিনি থানা পুলিশের সহযোগিতায় সেখানে যাওয়ার পরও বজলুসহ তার সন্ত্রাসী বাহিনী আমার ওপর হামলা করে। তিনি এই ন্যক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন।
দেওয়ান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ঠিকাদার হাজী আলাউদ্দিন জানান, বিএনপি নেতা বজলু ও তার বাহিনীর সদস্যরা কাজ পাওয়ার পর ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছেন। চাঁদা না দেওয়ার কারণে আজকে হামলা হয়েছে।
সোনারগাঁ থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক কামাল হোসেন জানান, হাজী আলাউদ্দিন পাচঁ আগস্ট একাধিক ছাত্র হত্যা মামলার আসামি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হাজী আলাউদ্দিন ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হামলা করে হয়রানি করেছে। আমাদের এক কর্মীর বাবা মারা যাওয়ার পরও জানাজায় আসতে দেয়নি। বিএনপি করার অপরাধে কর্মীদের ১৯টি বাড়ি ভাঙচুর করে মাটির সঙ্গে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। সেই আলাউদ্দিন হাজির পক্ষ হয়ে আওয়ামী দোসর হিসেবে পরিচিত বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আতাউর রহমান মুকুল দালালি করতে এসেছেন। বিএনপি নেতারা ক্ষুব্ধ হয়ে তার ওপর হামলা চালিয়েছে।
এদিকে ঘটনার পরপরই বিএনপির নেতাকর্মীরা আলাউদ্দিন হাজীর ফাঁসির দাবিতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন।
এদিকে ঘটনার সতত্যা নিশ্চিত করে বন্দর থানার ওসি লিয়াকত আলী জানান, সাবেক চেয়ারম্যান মুকুলসহ কয়েকজন সেখানে গেলে তারা উত্তেজিত হয়ে তাকে আওয়ামী লীগের দোসর বলে আখ্যা দিয়ে হামলা করে বিবস্ত্র করে। হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান ওসি।