আইএমএফের দুই কিস্তির ১৩৩ কোটি ডলার ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক: দীর্ঘ দর-কষাকষি ও অর্থনৈতিক শর্তপূরণের পথ পেরিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির মোট ১৩৩ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। এর ফলে প্রায় দুই বছর পর আবারও পুরনো পদ্ধতির (গ্রস) হিসাবে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের ঘর ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘আইএমএফ দুই কিস্তির অর্থ ছাড় করেছে। এই অর্থ আগামী সোমবার রিজার্ভে অন্তর্ভুক্ত হবে।’ তিনি আরও জানান, সময় ও ভৌগোলিক দূরত্বের কারণে অর্থ ছাড় হলেও সেটেলমেন্ট সম্পন্ন হতে সময় লাগছে। শুক্রবার ও শনিবার বাংলাদেশের সাপ্তাহিক ছুটি এবং রোববার যুক্তরাষ্ট্রের ছুটি থাকায় পুরো প্রক্রিয়া শেষ হবে সোমবার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২৫ জুন পর্যন্ত গ্রস পদ্ধতিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২৭.৬৭ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে সেই অঙ্ক ছিল ২২.৬৫ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের ঋণ ছাড় এবং অন্যান্য উৎস থেকে সহায়তা যোগ হওয়ায় এখন গ্রস পদ্ধতিতে রিজার্ভ দাঁড়াবে প্রায় ৩০.৩০ বিলিয়ন ডলার এবং নিট রিজার্ভ হবে ২৫.৫১ বিলিয়ন ডলার। সর্বশেষ ২০২৩ সালের জুনে বাংলাদেশ রিজার্ভে ৩০ বিলিয়নের ওপরে উঠেছিল।

এবারের ঋণ ছাড় হয়েছে আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলারের দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির আওতায়। গত ২৪ জুন বোর্ড সভায় ১৩৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের এই দুই কিস্তি অনুমোদন দেয় সংস্থাটি। চুক্তিটি হয়েছিল ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে, যা কার্যকর হয় ৩০ জানুয়ারি। এরপর বাংলাদেশ প্রথম তিন কিস্তিতে মোট ২৩১ কোটি ডলার পায়।

তবে চতুর্থ কিস্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য জটিলতা তৈরি হয়। মুদ্রা বিনিময়ের হার বাজারভিত্তিক করা, নিট রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ, রাজস্ব আহরণ বাড়ানোসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত পূরণে পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ। ফলে নির্ধারিত ২০২৪ সালের ডিসেম্বরেই কিস্তির অর্থ ছাড় হয়নি।

বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা শেষে এপ্রিলের শেষদিকে ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠকে ব্যাপক আলোচনা হয়। এরপর বাংলাদেশ ধাপে ধাপে বিনিময় হার বাজারমুখী করতে সম্মত হয়। এই অগ্রগতিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখে আইএমএফ দুই কিস্তি একসঙ্গে ছাড়ের সিদ্ধান্ত নেয়।

আইএমএফের বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ঋণ কর্মসূচির বাস্তবায়নে ‘সন্তোষজনক অগ্রগতি’ হয়েছে। শুধু আইএমএফ নয়, রেমিটেন্স প্রবাহ এবং বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাইকা থেকেও বাজেট সহায়তা পাওয়া গেছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ঘাটতি পূরণে বড় ধরনের স্বস্তি এসেছে।

করোনা মহামারির সময় একসময় বাংলাদেশে রিজার্ভের পরিমাণ রেকর্ড ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল। তবে বিশ্ববাজারে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দাম বাড়া এবং ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সেই রিজার্ভ দ্রুত কমে যায়।

২০২৪ সালে রাজনৈতিক পালাবদলের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পান আহসান এইচ মনসুর। তিনি রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির নীতি পরিহার করে রিজার্ভ ধরে রাখার ওপর গুরুত্ব দেন। এতে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি ঘুরে দাঁড়ায়।

বিশ্লেষকদের মতে, আইএমএফের এই ঋণ ছাড় কেবল রিজার্ভে স্বস্তি আনেনি, বরং দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিক আস্থাও পুনর্গঠিত করেছে। এখন বড় চ্যালেঞ্জ হবে—বিনিময় হার, রাজস্ব ব্যবস্থা ও রপ্তানি কার্যক্রমে কাঠামোগত সংস্কার অব্যাহত রাখা।

Related Articles

Back to top button