৫০ বছর পর বাদ পড়া দৃশ্য নিয়ে ফের মুক্তি পেল ‘শোলে’

অনলাইন ডেস্ক: ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। অখ্যাত এক ছোট্ট গ্রাম রামগড় বদলে দিয়েছিল বলিউডের ইতিহাস। ‘ঠাকুরের ডাকে জয় আর বীরু নামের দুই তরুণের ডাকাত ধরার সেই গল্প হয়ে বলিউডের নতুন ইতিহাস তৈরি করে। সেই সিনেমা ‘শোলে’র মুক্তির ৫০ বছর পূর্ণ হচ্ছে চলতি বছর। ভারতের ইতিহাসের অন্যতম আলোচিত হিন্দি সিনেমাটি মুক্তির ৫০ বছর পর নতুন রূপে আবার বড় পর্দায় ফিরে এল।

১৯৭৫ সালে নির্মিত রমেশ সিপ্পির এই কালজয়ী সিনেমা এবার পুরোপুরি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। এতে রয়েছে সিনেমার আসল শেষাংশ ও কিছু বাদ দেওয়া দৃশ্য। শুধু ভারতেই নয়, আন্তর্জাতিকভাবে মুক্তি পাচ্ছে সিনেমাটির এই সংস্করণ। নতুন সংস্করণটি ইতালির বোলোনিয়ায় শুক্রবার (২৭ জুন) ইল সিনেমা রিট্রোভাতায় বিশাল ওপেন-এয়ার স্ক্রিন Piazza Maggiore-তে দেখানো হয়, যা ছিল দর্শকদের জন্য এক স্মরণীয় অভিজ্ঞতা।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবশেষে মুক্তির ৫০ বছর পর সেই আসল সংস্করণই এবার দেখতে পেলেন দর্শকেরা। প্রদর্শনের আগে সম্পন্ন করা হয় ছবির পূর্ণ ডিজিটাল রিস্টোরেশন। বাদ যাওয়া দৃশ্য, কাটা পড়া সংলাপ এবং সেই আসল ‘সমাপ্তি’, সবই এবার দেখা যাচ্ছে বড় পর্দায়।

প্রসঙ্গত, এ ছবির কাহিনি লিখেছেন সেলিম খান-জাভেদ আখতার জুটি। ছবিটিতে অভিনয় করেছেন অমিতাভ বচ্চন, ধর্মেন্দ্র, হেমা মালিনী, জয়া ভাদুরী, সঞ্জীব কুমার ও ‘গব্বর সিং’ চরিত্রে আমজাদ খান। এর কাহিনি পশ্চিমা ও জাপানি সিনেমা থেকে অনুপ্রাণিত হলেও এটি পুরোপুরি ভারতীয় আবহে তৈরি।

মুক্তির পর ‘শোলে’ মুম্বাইয়ের মিনার্ভা হলে টানা পাঁচ বছর চলে। সিনেমাটি বিবিসি ইন্ডিয়ার জরিপে ‘শতাব্দীর সেরা সিনেমা’ হয় এবং ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট এটি ভারতের সেরা সিনেমা হিসেবে ঘোষণা করে। এর গান ও সংলাপের ক্যাসেট ও রেকর্ড অর্ধমিলিয়নের বেশি বিক্রি হয়েছিল। এটি শুধু যেন একটি সিনেমা নয়, বরং হয়ে উঠেছে সংস্কৃতির প্রতীক। এর সংলাপ বিয়েতে বলা হয়, রাজনীতিতে ব্যবহার করা হয়, এমনকি বিজ্ঞাপনচিত্রেও দেখা যায়।

১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থার আবহে ছবিটি নিয়ে সেন্সর বোর্ড মারাত্মক কঠোর অবস্থান নেয়। ‘অত্যাধিক হিংসাত্মক’ তকমা দিয়ে বাদ দেওয়া হয় একাধিক দৃশ্য। আসল ছবিতে শেষ দৃশ্যে গব্বর-কে কাঁটা লাগানো জুতো দিয়ে পিষে হত্যা করেন ঠাকুর। কিন্তু একজন প্রাক্তন পুলিশ অফিসার আইন নিজের হাতে নিতে পারেন না, এই যুক্তিতে দৃশ্যটি বাদ দিতে বলা হয়।

অগত্যা, পরিচালক রমেশ সিপ্পিকে নতুন করে শুট করতে হয় ছবির শেষাংশ। অভিনেতা, কলাকুশলীদের তড়িঘড়ি ফিরিয়ে আনা হয় সেই বিখ্যাত রামগড় গ্রামে। শেষ পর্যন্ত গব্বর সিংকে বন্দি করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার দৃশ্য চূড়ান্ত হয়।

এই সিনেমার পুরোনো প্রিন্ট নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ক্যামেরা নেগেটিভও অনেক খারাপ ছিল। এসময় হারিয়ে যাওয়া আসল দৃশ্যগুলি আবার ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেন পরিচালক রমেশ সিপ্পির পুত্র, শাহজাদ সিপ্পি। ২০২২ সালে তিনি যোগাযোগ করেন ফিল্ম হেরিটেজ ফাউন্ডেশন-এর সঙ্গে। আর তাতেই হয় অসাধ্য সাধন।

শাহজাদ সিপ্পি জানান, মুম্বাইয়ের এক গুদামে কিছু কৌটা আছে। সেখানে পাওয়া যায় ছবির মূল ক্যামেরা ও সাউন্ড নেগেটিভ। এরপর যুক্তরাজ্য থেকেও কিছু অতিরিক্ত রিল পাওয়া যায়। ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট ও ইতালির লা ইমাজিনে রিট্রোভাতার সাহায্যে ছবির সব অংশ জোড়া লাগানো হয়। এমনকি এই সিনেমাতে ব্যবহৃত আসল ক্যামেরাটিও উদ্ধার করা হয়।

Related Articles

Back to top button