ডেঙ্গুতে ১৬-৩৫ বয়সিরা বেশি আক্রান্ত, মৃত্যু বেশি ৩৬-৬০ বছর বয়সি

অনলাইন ডেস্ক: এবার দেশে বর্ষা মৌসুমের আগেই ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ বাড়ছে। ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ১৬ থেকে ৩৫ বছর বয়সিরা। সোমবার সকাল থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ২৪৪ জন। এদের মধ্যে ১১৯ জনই ১৬ থেকে ৩৫ বছর বয়সি ও নারী-পুরুষ।
এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে বেশি মারা গেছেন ৩৬ থেকে ৬০ বছরের নারী ও পুরুষ অর্থাৎ মধ্যবয়সিরা। জানুয়ারির প্রথম দিন থেকে ১৭ জুন সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গুজ্বরে মারা গেছেন ৩০ জন। যাদের ১৫ জনই ৩৬ থেকে ৬০ বছর বয়সি।
ডেঙ্গু নিয়ে চলতি বছর হাসপাতালে ভর্তি ৬৪৬৬ জনের মধ্যে প্রায় অর্ধেক (৩ হাজার) এই বয়সি। যাদের মধ্যে পুরুষ ১৮৪০ এবং নারী ১১৫৯ জন। তবে তরুণ ও যুবকদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকলেও কেন এত আক্রান্ত হচ্ছেন তা নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ডেঙ্গুজ্বরে তরুণদের বেশি আক্রান্ত হওয়ার কিছু ব্যাপার আছে। সেগুলো হচ্ছে-অসচেতনতা, জীবনাচরণ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।
এছাড়াও ডেঙ্গু ভাইরাস শরীরে প্রবেশের পর কিছু জটিলতা তৈরি হতে পারে যা তরুণদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। পেশাগত কারণে তরুণরা বেশি সময় বাড়ির বাইরে কাটান। মশার কামড়ের শিকার এবং আক্রান্ত বেশি হন। অন্যদিকে যাদের বয়স বেশি ও বিভিন্ন ধরনের রোগে ভুগছেন তাদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি। বিশেষ করে গর্ভবতী নারী, কোমরবিডি সম্পন্ন ও বয়স্করা ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে তরুণরা আক্রান্ত বেশি হলেও মৃত্যুতে এগিয়ে বয়স্করা।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, তরুণরা সাধারণত স্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্যের প্রতি কম আগ্রহী থাকেন অথবা ডেঙ্গুর লক্ষণ ও প্রতিরোধ সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখেন না। ফলে মশাবাহিত রোগ থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেন না। উদাহরণস্বরূপ মশার কামড় থেকে বাঁচতে মশারি ব্যবহার না করা, বাড়ির আশপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব এবং রোগের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলেও অবহেলা করা ইত্যাদি। এছাড়াও কিছু তরুণ ধূমপান বা মদ্যপানের মতো বদভ্যাসে আসক্ত থাকেন যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
ডেঙ্গু ভাইরাসের বিভিন্ন স্ট্রেইন রয়েছে, এদের মধ্যে কিছু মারাত্মক হতে পারে। যদি কোনো তরুণ পূর্বে ডেঙ্গু ভাইরাসের একটি নির্দিষ্ট স্ট্রেইনে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তবে পরবর্তীতে অন্য স্ট্রেইন দ্বারা আক্রান্ত হলে তার রোগের তীব্রতা বেশি হতে পারে। তার গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
বয়স অনুযায়ী আক্রান্ত ও মৃত্যুর তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে চলতি বছর ১ দিন বয়সি থেকে ৫ বছর বয়সি শিশু ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৪৪০ জন।
১১ থেকে ১৫ বছর বয়সি ৪২৩ জন, ১৬ থেকে ২০ বছর বয়সি ৭৮০ জন, ২১ থেকে ২৫ বছ বয়সি ৮৩৩ জন, ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সি ৮০৮ জন, ৩১ থেকে ৩১ বছর বয়সি ৫৭৯ জন, ৩৬ থেকে ৪০ বছর বয়সি ৫২৯ জন, ৪১ থেকে ৪৫ বছর বয়সি ৪১৮ জন, ৪৬ থেকে ৫০ বছর বয়সি ৩১২ জন, ৫১ থেকে ৫৫ বছর বয়সি ২৫০ জন, ৫৬ থেকে ৬০ বছর বয়সি ২১৬ জন, ৬১ থেকে ৬৫ বছর বয়সি ১৪৬ জন, ৬৬ থেকে ৭০ বছর বয়সি ৯৯ জন, ৭১ থেকে ৭৫ বছর বয়সি ৪৫ জন, ৭৬ থেকে ৮০ বছর বয়সি ২৪ জন এবং ৮০ বছর ঊর্ধ্বে ২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
এবার ডেঙ্গুজ্বরে সবেচেয়ে বেশি অর্থাৎ ২৯৮০ জন আক্রান্ত হয়েছেন বরিশাল বিভাগে। এর মধ্যে বরগুনা জেলাতেই ভর্তি হয়েছেন ১৮৩২ জন। বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গুতে মৃত আটজনের মধ্যে পাঁচজনই বরগুনার। সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগে ভর্তি ১৩৮ জনের মধ্যে ৮২ জন বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যু হয়নি। তবে এ সময় ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৩৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৯ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২৬ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের চারজন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩২ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) একজন, রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২৪ জন রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ২০৯ ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। চলতি বছরে এ যাবত মোট পাঁচ হাজার ৬৯৮ রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। মোট আক্রান্তের ৫৯ দশমিক ২ শতাংশ পুরুষ এবং ৪০ দশমিক ৮ শতাংশ নারী।