আর্লি স্ট্রিমার ইমিশন এয়ার টার্মি নাল, বজ্রপাতে জীবন রক্ষায় নতুন আশার আলো

অনলাইন ডেস্ক: বাংলাদেশে বজ্রপাতে প্রতি বছর গড়ে ৩০০ জনের প্রাণহানি ঘটে, যার বেশিরভাগই প্রান্তিক কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষ। ঝুঁকি মোকাবিলায় নানা উদ্যোগের পরও কার্যকর সমাধান ছিল অনুপস্থিত।

তবে ‘আর্লি স্ট্রিমার ইমিশন এয়ার টার্মিনাল’ নামের একটি স্বয়ংক্রিয় ডিভাইস আশাজাগানিয়া ভূমিকা রাখছে। ডিভাইসটি ৪০০ মিটার ব্যাসার্ধে বজ্রপাত টের পেলে নিজের দিকে টেনে নিয়ে মাটিতে নির্গত করে, ফলে আশপাশের মানুষ ও প্রকৃতি সুরক্ষিত থাকে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে পাঁচ বছর পর্যন্ত বজ্রপাত সংক্রান্ত তথ্যসংরক্ষণ করা যায়। বজ্রচিহ্নিতকরণ খরচের তুলনায় এটি বাস্তব ও কার্যকর বিকল্প। ২০১৯ সালে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ৭৫০টি ডিভাইস স্থাপন করে। এরপর সেখানে বজ্রপাতে কোনো মানুষের মৃত্যু হয়নি বলে জানা গেছে।

দুর্যোগ অধিদপ্তরের হিসাবে, দেশের ১৫টি জেলায় সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয়। এর মধ্যে সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জ অন্যতম।

সরেজমিনে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, সেখানে স্থাপন করা হয়েছে ‘আর্লি স্ট্রিমার ইমিশন এয়ার টার্মিনাল’ নামক যন্ত্রটি।

স্থানীয়রা জানান, আগে নিয়মিত বজ্রপাতে প্রাণহানির ঘটনা ঘটত। কিন্তু যন্ত্রটি বসানোর পর গত দুই বছরে কোনো মৃত্যুর খবর নেই। প্রযুক্তির এ সফল প্রয়োগ স্থানীয়দের মধ্যে স্বস্তি এনে দিয়েছে এবং বজ্রপাত মোকাবিলায় এটি একটি কার্যকর উদ্যোগ হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে।

ওই গ্রামের কৃষক আব্দুল আলিম বলেন, যন্ত্রটি স্থাপনের পর আমাদের একটা আশ্রয়ের জায়গা তৈরি হয়েছে। এখন আমরা অনেকটা নিরাপদবোধ করি। তবে এ যন্ত্রটি পুরো গ্রামে দিলে বজ্রপাত নিয়ে আমাদের আর কোনো ভয় থাকবে না।

একইভাবে চুনারুঘাটের শানখলা ইউনিয়নে আরেকটি যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে। এতে স্থানীয় লোকজন সুরক্ষিত আছে বলে জানিয়েছেন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, যন্ত্রটি একটি বজ্রপাত নিজের দিকে টেনে আনছে। আমাদের এ বজ্রপাতপ্রবণ অঞ্চলে এ ধরনের যন্ত্র স্থাপনের কারণে মানুষসহ অন্যান্য জীববৈচিত্র্য সুরক্ষিত রয়েছে।

চুনারুঘাট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন (পিআইও) কর্মকর্তা নুর মামুন বলেন, বজ্রপাত থেকে মানুষকে সুরক্ষা দিতে দুই বছর আগে পরীক্ষামূলকভাবে দুটি স্থানে ‘আর্লি স্ট্রিমার ইমিশন এয়ার টার্মিনাল’ ডিভাইস স্থাপন করা হয়েছে। যন্ত্রটি স্থাপনে মাত্র একটি খুঁটি প্রয়োজন হয়, ফলে কৃষকের জমি নষ্ট হয় না। এমন উদ্যোগ আরও সম্প্রসারিত করা দরকার।

প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকনিক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড বাংলাদেশে এনেছে ‘আর্লি স্ট্রিমার ইমিশন এয়ার টার্মিনাল’ নামের অত্যাধুনিক বজ্রপাত নিরোধক যন্ত্র। প্রতিষ্ঠানটির সিইও মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, ফ্রান্সের তৈরি ইন্ডিলেক এসেট সিস্টেমসমৃদ্ধ এ স্মার্ট ডিভাইসে রয়েছে আইওটিভিত্তিক তথ্যবিশ্লেষণ, রিয়েলটাইম পর্যবেক্ষণ, ই-সিম ও সোলার চার্জিং সুবিধা। আলাদা বিদ্যুৎ ছাড়াই চালু থাকা এ প্রযুক্তি বজ্রনিরোধে দেশে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান জানান, বজ্রপাত থেকে সুরক্ষায় বিটিআরসি, আবহাওয়া অফিস ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সঙ্গে মিলে এসএমএস সতর্কতা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মসজিদে প্রচার চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি বজ্রপাত নিরোধক ব্যবস্থা স্থাপন করা হচ্ছে, যাতে কৃষক, শ্রমিক ও জেলেরা দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারেন।

Related Articles

Back to top button