ট্রেনে-বাসে স্বস্তির ঈদ যাত্রা, লঞ্চে যাত্রী কম

অনলাইন ডেস্ক: আগামী ৭ জুন পবিত্র ঈদুল আজহা। তাই ঢাকা থেকে সড়ক ও রেলপথে বেড়েছে ঘরমুখী মানুষের ভিড়। তবে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের দৃশ্যপট একেবারেই ভিন্ন। সড়ক ও রেলপথের মতো নৌপথে নেই যাত্রীর চাপ। এবার প্রস্তুত নেই বিশেষ কোনো লঞ্চও। আগাম টিকিট বিক্রিতেও তেমন সাড়া মেলেনি এবং অনেক কেবিনের টিকিট বিক্রি হয়নি। এদিকে গত ৩১ মে থেকে ট্রেনে আগাম টিকিটে যাত্রীসেবা শুরু হয়। ইতিমধ্যে বাসেরও একই রকমের যাত্রা শুরু হয়েছে। কোনো রকমের ভোগান্তি ছাড়াই গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করছেন যাত্রীরা।
সময়মতো ছাড়ছে ট্রেন: দেশের বড় রেল স্টেশন কমলাপুর ঘুরে দেখা গেছে ট্রেনগুলো ছেড়ে যাচ্ছে সময়মতো। আগাম টিকিট কাটা বলে এক্সপ্রেস ট্রেনগুলোর যাত্রীরা নিজ নিজ আসনে বসে যাচ্ছেন গন্তব্যে। কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সাজেদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ঈদযাত্রায় যাতে যাত্রীরা কোনো ধরনের ভোগান্তিতে না পড়েন, সেই জন্য স্টেশনে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ও চেকিং ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিনা টিকিটের যাত্রীদের স্টেশনে প্রবেশ ঠেকাতে ব্যাপক চেকিং চলছে। হকার এবং ভবঘুরেদেরও স্টেশন এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
বাসে স্বস্তির যাত্রা: সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতে তেমন ভিড় না থাকলেও মানুষের চাপ রয়েছে। পথে আগাম টিকিট কাটা যাত্রী তোলা হবে বলে বাসগুলো কিছু আসন খালি রেখে ছুটছে গন্তব্যে। তবে নির্ধারিত সময় মেনে চলা সম্ভব হচ্ছে না অনেক পরিবহনের। এদিকে ‘ঈদ স্পেশাল সার্ভিস’ গতকাল মঙ্গলবার থেকে চালু করেছে সরকারের পরিবহন সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি)। এই বিশেষ সেবা চলবে আগামী ১৪ জুন পর্যন্ত। এর জন্য প্রায় ৬৫০ বাস তৈরি রাখা হয়েছে।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, ডাকাতি ও ছিনতাইসহ নারী যাত্রীদের হেনস্তা রোধে দূরপাল্লার প্রতিটি বাসে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে মালিক সমিতির পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। আশা করি, এবারও মানুষ স্বস্তিতে ঘরে ফিরতে পারবেন।
যাত্রীদের ছবি তোলার নির্দেশনা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, ঈদযাত্রায় ডাকাতি ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে পরিবহনে ওঠা সব যাত্রীর ছবি তুলতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে নিজের অফিস কক্ষের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ নির্দেশনার কথা জানান। উপদেষ্টা বলেন, আমরা বাস মালিক সমিতির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসেছিলাম। আশা করছি, এবারে ঈদ যাত্রাও নির্বিঘ্ন হবে। গতবার তারা (বাস মালিক) যাওয়ার সময় সরকার নির্ধারিত ভাড়া নিয়েছিল। কিন্তু ফেরার পথে অল্প কিছু জায়গায় নির্ধারিত ভাড়া নেয়নি। এবার যেন আসা-যাওয়ার পথে সরকার নির্ধারিত ভাড়াই নেওয়া হয় সেজন্যই আমরা বসেছিলাম। মালিকপক্ষ সম্মত হয়েছে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার বেশি নেওয়া হবে না।
যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানিয়েছে, এবারের ঈদে ১০ দিনের টানা ছুটি দিয়েছে সরকার। এ কারণে এবারের ঈদে ঢাকা থেকে ১ কোটি ১০ লাখ এবং ঢাকার আশপাশের ৩০ লাখসহ অন্তত ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ট্রাকে যাত্রী বহন না করতে অনুরোধ: বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সভাপতি মো. তোফাজ্জল হোসেন মজুমদার জানিয়েছেন, প্রতি ঈদে দেখা যায় কিছু লোভী ট্রাকচালক ট্রাকে করে যাত্রী বহন করে। এ নিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। আমাদের মালিক সমিতির পক্ষ থেকে দেশের ট্রাকচালকদের অনুরোধ জানানো হয়েছে, যাতে করে কেউ ট্রাকে যাত্রী পরিবহন না করেন।
লঞ্চঘাটে ভিড় নেই: পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চে সেই আগের চিরচেনা ভিড় নেই। যাত্রীস্বল্পতার কারণে এই পথে লঞ্চের সংখ্যা কমে গেছে। তবে ঈদের সময় কিছুটা ভিড় বাড়ে। ঈদের দুই দিন আগে-পরে এই ভিড় দেখা যায় বেশি। আজ বুধবার থেকে ভিড় বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরাসরি ফেরিতে উঠছে গাড়ি: গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) সংবাদদাতা আক্তারুজ্জামান মৃধা জানান, গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সরেজমিনে দৌলতদিয়ার তিনটি ফেরিঘাট এলাকা ঘুরে কোথাও কোনো যানজট দেখা যায়নি। গরুবাহী ট্রাকগুলো এসে সরাসরি ফেরিতে উঠে যাচ্ছে। কখনো কখনো ফেরি গাড়ির অপেক্ষায় বসে থাকতেও দেখা গিয়েছে। বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে যাত্রী ও যানবাহনের বাড়তি চাপ সামাল দিতে এ রুটে ১৭টি ফেরি এবং ২০টি লঞ্চ চলাচল করছে। দৌলতদিয়া প্রান্তের তিনটি ঘাটের আটটি পকেট সচল রয়েছে এবং পদ্মার পানি বাড়লে আরো একটি ঘাট চালু করা হবে।
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার বলেন, যাত্রীদের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের একাধিক মোবাইল টিম মাঠে আছে। যাত্রী হয়রানি রোধে তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাজবাড়ী পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম জানান, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, যানবাহনের চলাচল মনিটরিং ও নদীপথে পশুবাহী ট্রলার চলাচলে নিরাপত্তা নিশ্চিতে গোয়ালন্দ থানা পুলিশ, নৌ-পুলিশ ও কোস্ট গার্ড যৌথভাবে দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়া সড়কের নিরাপত্তায় হাইওয়ে পুলিশ কাজ করছে।
ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে স্পিডবোট চলাচল বন্ধ: শিবালয় (মানিকগঞ্জ) সংবাদদাতা বাবুল আকতার মঞ্জুর জানান, ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে আরিচা-কাজীরহাট নৌ-রুটে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে স্পিডবোট চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। কয়েক জন স্পিডবোট মালিক-চালক জানান, ভাড়া পুনর্নির্ধারণের দাবি জানিয়ে আবেদন করলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় আমরা বোট চালানো বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জানা গেছে, ২০২১ সালে এ রুটে স্পিডবোট সার্ভিস চালু হয়। বর্তমানে শতাধিক বোট চলাচল করে। বিআইডব্লিউটিএ নির্ধারিত ভাড়া যাত্রীপ্রতি ২১০ টাকা হলেও নেওয়া হয় ২৫০ টাকা।