গাজায় ৯৫ শতাংশ কৃষিজমি চাষযোগ্য নেই: জাতিসংঘ

- উপত্যকায় হামলা আরও তীব্র করার হুমকি নেতানিয়াহুর
- ইয়েমেন থেকে ছোড়া দুটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধের দাবি ইসরায়েলের
অনলাইন ডেস্ক: গাজা উপত্যকার মোট কৃষিজমির পাঁচ শতাংশেরও কম এখন চাষের উপযোগী বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। জাতিসংঘ স্যাটেলাইট সেন্টারের নতুন ভূস্থানিক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এদিকে গাজায় হামলা আরও তীব্র করার হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। এছাড়া ইয়েমেন থেকে ছোড়া দুটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধের দাবি করেছে ইসরায়েল। খবর আল জাজিরার।
পরিস্থিতিকে ‘চরম উদ্বেগজনক’ উল্লেখ করে সোমবার এফএও জানায়, গাজায় চলমান ইসরায়েলি হামলায় কৃষি অবকাঠামোর ধ্বংস স্থানীয় খাদ্য উৎপাদনের সক্ষমতাকে আরও খারাপ করে তুলছে এবং দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। যৌথ জরিপে দেখা গেছে, গাজার মোট কৃষিজমির ৮০ শতাংশের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৭৭.৮ শতাংশ জমিতে এখন কৃষকের প্রবেশ সম্ভব নয়।
বর্তমানে মাত্র ৬৮৮ হেক্টর (১ হাজার ৭০০ একর) অর্থাৎ মাত্র ৪.৬ শতাংশ কৃষিজমি চাষাবাদের জন্য ব্যবহারযোগ্য। এই ধ্বংসযজ্ঞ গাজার গ্রিন হাউজ ও পানির উৎসগুলোতেও বিস্তৃত হয়েছে। ৭১.২ শতাংশ গ্রিন হাউজ এবং ৮২.৮ শতাংশ কৃষিকাজে ব্যবহৃত কূপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এফএও-এর উপমহাপরিচালক বেথ বেচডল বলেন, যেখানে একসময় হাজার হাজার মানুষের জন্য খাদ্য, আয় ও স্থিতিশীলতা ছিল, এখন তা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
কৃষিজমি, গ্রিন হাউজ এবং কূপ ধ্বংস হওয়ায় স্থানীয় খাদ্য উৎপাদন কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। এটি পুনর্গঠন করতে হলে ব্যাপক বিনিয়োগ এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন। এই প্রতিবেদনটি এমন একসময় প্রকাশিত হলো, যখন চলতি মাসের শুরুতে প্রকাশিত ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) বিশ্লেষণে সতর্ক করে বলা হয়েছিল, ১৯ মাসের যুদ্ধ, গণবিচ্ছিন্নতা এবং মানবিক সহায়তার ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণের ফলে গাজার পুরো জনসংখ্যাই চরম দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে।
যদিও গত সপ্তাহে ইসরায়েল ‘সীমিত’ পরিমাণে সহায়তা গাজায় প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে বলে ঘোষণা দেয়, মানবিক সংগঠনগুলো সতর্ক করেছে যে, এই সামান্য সহায়তাও গাজার অভুক্ত জনগণের কাছে পৌঁছাচ্ছে না।
এদিকে গাজায় ব্যাপক হতাহতের মধ্যেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তারা ‘জীবিত ও মৃত’ সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনতে হামলা আরও জোরদার করবেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের ৭০ দিনের গাজা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যেই এ মন্তব্য করলেন নেতানিয়াহু।
ঐ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ১০ ইসরায়েলি জিম্মিকে ফিরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ইসরায়েলের কারাগার থেকে আরও ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার ছিল। আল-আরাবিয়ান পত্রিকা লিখেছে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে গাজায় অভিযান আরও জোরদার করেছে ইসরায়েল। এর মধ্যেই জিম্মিদের মুক্ত করার বিষয়ে নেতানিয়াহু বলেন, ‘আজ না পারলে কাল, কাল না পারলে পরশু। আমরা থামব না। আমরা সবাইকে ফিরিয়ে আনব, জীবিতদের ও মৃতদের।’
সোমবার হামাস জানায়, তারা মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে পাঠানো মার্কিন দূতের নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। কিন্তু পরে মার্কিন দূত উইটকফের একজন মুখপাত্র ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীটির প্রস্তাব গ্রহণ করার কথা অস্বীকার করেন। আর মার্কিন গণমাধ্যম এক্সিওসকে উইটকফ বলেন, ‘হামাসের যা কিছু আমি দেখেছি, তা হতাশাজনক ও পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য।’
অন্যদিকে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, মঙ্গলবার ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলের দিকে ছোড়া দুটি ক্ষেপণাস্ত্র বাধা দিয়ে ধ্বংস করেছে তারা। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানায়, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র দুটি ছোড়া হয়। প্রথম ক্ষেপণাস্ত্রটির কারণে জর্ডান উপত্যকায় ও পশ্চিম তীরের উত্তরাংশে ইসরায়েলি বসতিগুলোতে সতর্ক সংকেত বেজে ওঠে।
তখন ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানায়, তাদের এয়ার ডিফেন্স হুমকি প্রতিরোধের জন্য কাজ করছে। এর কিছুক্ষণ পর তারা আরেকটি বিবৃতি দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্রটি ‘প্রতিরোধ’ করা হয়েছে বলে জানায়। তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের কোনো খবর হয়নি। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইয়েমেন থেকে দ্বিতীয় আরেকটি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয় এবং তারা সেটিও প্রতিরোধ করেছে বলে জানায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। ইয়েমেনের ইরানি মিত্র গোষ্ঠী হুতিরা গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল লক্ষ্য করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালাচ্ছে।
হুতিদের দাবি, তারা গাজার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ইসরায়েলের স্বার্থে আঘাত হানছে। ইয়েমেনের হুতিরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতা হওয়ার পর লোহিতসাগরে ও সংলগ্ন জলপথে মার্কিন জাহাজগুলোতে হামলা বন্ধ করেছে। এই সমঝোতার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রও ইয়েমেনে হামলা বন্ধ করেছে। কিন্তু হুতিরা ইসরায়েলে ও ইসরায়েলের স্বার্থগুলোতে হামলা অব্যাহত রেখেছে।