অধ্যাদেশ বিলুপ্তির দাবিতে কর্মবিরতি কর্মসূচি চলবে

অনলাইন ডেস্ক: অধ্যাদেশ বিলুপ্তির দাবিতে পূর্বনির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী শনিবার কলমবিরতি পালন করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধীনস্থ আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টম হাউজে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে আগারগাঁও রাজস্ব ভবনে সকাল থেকে পুলিশ, বিজিবি ও সেনা মোতায়েন করায় আন্দোলনকারীদের মাঝে ক্ষোভ আরও বাড়তে থাকে। বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কর্মসূচি চলমান থাকবে।

সকাল থেকে ঢাকার সব কর অঞ্চল, কাস্টম হাউজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আগারগাঁও এনবিআরের নিচে এসে জড়ো হন। কর্মবিরতির পাশাপাশি তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে তাদের স্লোগান দিতে দেখা যায়। এনবিআরের অধীনস্থ সারা দেশের অন্য সব অফিসেও একইভাবে কর্মসূচি পালিত হয়। ঢাকা ও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে বিকাল ৩টা পর্যন্ত কোনো কাজ হয়নি। ভ্যাট ও কর অফিসেও সেবা বন্ধ ছিল। তবে রপ্তানি ও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা কাযক্রম চলমান ছিল।

শনিবার এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার এদিপ বিল্লাহ, উপকর কমিশনার মোস্তফিজুর রহমান, সহকারী কর কমিশনার ইশতিয়াক হোসেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক, যা ইতোমধ্যেই দেশের প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ ও থিংকট্যাংকসহ সর্বমহলে স্বীকৃতি পেয়েছে। এনবিআর তথা রাজস্ব প্রশাসনের আমূল সংস্কার আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি। তবে এই সংস্কার হতে হবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্বীকৃত সর্বোত্তম ব্যবস্থা ও পদ্ধতির অনুরূপ। দেশের স্বার্থ ও উন্নয়ন দর্শন এতে সঠিকভাবে প্রতিফলিত হতে হবে। এছাড়া রাজস্ব প্রশাসন অধিকতর কার্যকর, প্রগতিশীল ও দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে এবং এ সংস্কার বিশেষ কারও স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হবে না। কিন্তু রাজস্ব ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের স্বার্থে আমাদের এমন যৌক্তিক দাবি মেনে নিতে সরকার কেন, কী কারণে এবং কাদের প্ররোচনায় বিলম্ব করছে, তা বোধগম্য নয়।

এতে আরও বলা হয়, আজ (শনিবার) সকাল থেকেই এনবিআর ভবনের অভ্যন্তরে এবং বাইরে বিপুলসংখ্যক পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি রয়েছে। এ বিষয়টি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মনে নানা ধরনের প্রশ্নের উদ্রেক করেছে।

ক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলন করতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু এখন দেখছি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে। তবে রোববারও একইভাবে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেখানে হস্তক্ষেপ করবে, সেখানে তারা প্রেস ব্রিফিং করবেন।

ভিন্নমত যাদের: নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ‘দাবি আদায়ের নামে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এখন যা হচ্ছে তা রীতিমতো সরকার ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান। এটি সম্পূর্ণ শৃঙ্খলাপরিপন্থি কাজ, সরকারি কর্মচারী আচরণবিধি এসব কর্মকাণ্ড পারমিট করে না।’ তারা মনে করেন, এনবিআর বিলুপ্ত করে যে গেজেট করা হয়েছে সেখানে প্রত্যাশার অনেক কিছু চলে এসেছে। যেটুকু অবশিষ্ট আছে তা পরবর্তী সংশোধনী ও বিধি প্রণয়নের মাধ্যমে সংযোজন করা সম্ভব। এজন্য এভাবে আন্দোলন করার প্রয়োজন ছিল না। বিষয়টিকে পুনরায় আলোচনার টেবিলে নিয়ে গেলে ভালো হতো।

তারা প্রশ্ন রেখে বলেন, এই গেজেটের সঙ্গে কর্মচারীদের স্বার্থের কোনো বিষয় জড়িত নয়। তাহলে তাদের কারা জোর করে আন্দোলনে নামাচ্ছে, সেটিও খতিয়ে দেখতে হবে। এছাড়া সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জারিকৃত গেজেটের বিষয়ে ব্যাখ্যাসহ বিবৃতি দেওয়া হলেও সেটিকে প্রত্যাখ্যান করা হয়, যা অনভিপ্রেত। মূলত বিশেষ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আন্দোলন-কর্মসূচি অব্যাহত রাখা হচ্ছে। বর্তমানে সরকার সুষ্ঠুভাবে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে যেসব বাধাকে চিহ্নিত করেছেন তার মধ্যে এটিও অন্যতম।

কর্মকর্তারা বলেন, বর্তমান এনবিআর চেয়ারম্যানের উদ্যোগের ফল এবার ১৬ লাখের বেশি লোক অনলাইনে তাদের ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিয়েছেন। ফলে তাদের কোনোরকম অনিয়ম-দুর্নীতির শিকার হতে হয়নি। এভাবে দুর্নীতির পথ রুদ্ধ হওয়ার কারণে অনেকে ক্ষুব্ধ। এছাড়া ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং আরও অনেকের বিরুদ্ধে শিগগির ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এজন্য একটি গ্রুপ এনবিআর চেয়ারম্যানকে সরাতে চান। তারা বলেন, সরকার এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের এহেন আন্দোলন আর বেশি সময় বরদাশত করবে না।

Related Articles

Back to top button