অবশেষে গাজায় ঢুকল ত্রাণ, অনাহারে আরও ২৯ মৃত্যু

অনলাইন ডেস্ক: অবশেষে গাজার উদ্দেশ্যে পাঠানো ৯০ ট্রাক ত্রাণ জাতিসংঘের দলগুলোর কাছে হস্তান্তর করেছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। সীমিত পরিসরে অবরোধ তুলে নেওয়ার তিন দিন পর ত্রাণগুলো ছেড়ে দিল ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। তবে গত দুই দিনে অনাহারে আরও ২৯ ফিলিস্তিনি মারা গেছে, যাদের বেশির ভাগই শিশু। এদিকে গাজার আবাসিক ভবনে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৫০ জনের প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে, যার বেশির ভাগ নিখোঁজ রয়েছে। অন্যদিকে অবিলম্বে গাজার সামরিক অভিযান বন্ধে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে গ্রিস। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ফ্রান্স, ব্রিটেন ও কানাডা হামাসকে উৎসাহিত করছে বলে অভিযোগ করেছেন।

স্থানীয় সময় বুধবার দিনগত রাতে কেরেম শালোম ক্রসিং থেকে ত্রাণবাহী ট্রাকগুলো ওয়্যারহাউজে নেওয়া হয় বলে এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় ত্রাণবাহী ৯৩টি ট্রাক প্রবেশ করে বলে জানিয়েছিল বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। এর মধ্যে ৯০ ট্রাক জাতিসংঘের স্বেচ্ছাসেবীরা ইসরায়েলের কাছ থেকে বুঝে পেয়েছে। বাকি তিনটির ব্যাপারে কোনো তথ্য জানানো হয়নি। সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকালেই বিভিন্ন বেকারিতে ত্রাণের আটা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। জাতিসংঘ বলছে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ অনুমোদিত একমাত্র পথটিতে নিরাপত্তার অভাবে গাজাবাসীর কাছে ত্রাণ পৌঁছাতে এত দেরি হলো।

জাতিসংঘ সমর্থিত ইনটিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশনের এক মূল্যায়নে বলা হয়, আগামী কয়েক মাসে ৫ লাখ মানুষ অনাহারের মুখে পড়তে পারে। এর আগে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) এক কর্মকর্তা জানান, গাজার জন্য ১ লাখ ৪০ হাজার টন খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর ৬ হাজার ট্রাক ত্রাণ প্রস্তুত করে রেখেছে তারা। এই পরিমাণ ত্রাণ গাজায় প্রবেশ করানো সম্ভব হলে উপত্যকার বাসিন্দাদের দুই মাসের খাবার নিশ্চিত হবে। এদিকে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত দুই দিনে অনাহারে আরও ২৯ জন মারা গেছে, যাদের বেশির ভাগই শিশু। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মাজেদ আবু রমজান এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, আনাহারে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে, পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারলে গাজার ২১ লাখ মানুষ চরম অনাহারের মুখে পড়বে, বাড়বে অনাহারে মৃত্যু। মৌলিক খাবারের ঘাটতি এবং আকাশছোঁয়া দামের কারণে পরিস্থিতি আরও সংকটাপন্ন হয়ে উঠছে।

নেতানিয়াহু প্রশাসন বলছে, বুধবার এই ৯৩ ট্রাকের বাইরে আরও ১০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক কেরেম শালোম দিয়ে প্রবেশ করতে দিয়েছে তারা। জাতিসংঘ বলছে, গাজায় যে পরিমাণ ত্রাণ প্রয়োজন, তার তুলনায় এটি নগণ্য। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর উপত্যকাটিতে আগ্রাসন শুরুর আগে দৈনিক অন্তত ৫০০ ট্রাক করে ত্রাণ প্রবেশ করত। বর্তমানে যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে, আগের চেয়ে অনেক বেশি ত্রাণ প্রয়োজন। তাই, ১০০ ট্রাক ত্রাণ আসলে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য বিষয় নয়।

এদিকে গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলের জাবালিয়া আল-বালাদ এলাকায় একটি আবাসিক ভবনে ইসরায়েলি বিমান হামলার পর অন্তত ৫০ জন ফিলিস্তিনি নিখোঁজ রয়েছেন। গাজার সিভিল ডিফেন্স কর্মীরা ঘটনাস্থলকে ‘ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তারা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে চারটি মৃতদেহ উদ্ধার এবং ছয় জনকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন। তবে চারতলা ঐ ভবনের নিচে আরও ৫০ জনের বেশি মানুষ চাপা পড়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া গাজা শহরের পূর্বে শুজাইয়া এলাকায় আরও একটি বাড়িতে ইসরায়েলি বোমা হামলায় আরও একজন নিহত হয়েছে।

এদিকে ইসরায়েলকে অবিলম্বে গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোতাকিস। একই সঙ্গে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে বলেও জানান তিনি। বার্তাসংস্থা আনাদোলু জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে এক বক্তব্যে তিনি বলেন, গত কিছু দিনে গাজায় যা ঘটছে তা অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য। ইসরায়েলকে অবিলম্বে এসব অভিযান বন্ধ করতে হবে এবং জাতিসংঘসহ অন্যান্য মানবিক সংস্থাকে সহায়তা দিতে হবে, যাতে দ্রুত খাদ্য, ওষুধসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী গাজার মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে। তিনি স্বীকার করেন, গাজায় ইসরায়েলি হামলা ও অবরোধের বিষয়ে নীরব থাকার অভিযোগে সরকার ব্যাপক জনসমালোচনার মুখে পড়েছে, এমনকি বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকেও সমালোচনা হচ্ছে। এর জবাবে মিতসোতাকিস বলেন, আমরা নীরব নই।

গ্রিস ও ইসরায়েলের কৌশলগত মিত্রতা থাকলেও আমাদের অবশ্যই মিত্রদের কাছে কঠিন সত্যগুলো বলতে হবে। অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ফ্রান্স, ব্রিটেন ও কানাডার নেতাদের বিরুদ্ধে হামাসকে ‘উৎসাহিত’ করার অভিযোগ এনেছেন। গাজায় চলমান ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে বিরতি না এলে এসব দেশ ‘কঠোর পদক্ষেপ’ নিতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই মন্তব্য করেন তিনি। বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সারের অনুরূপ মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি করে নেতানিয়াহু বলেন, আপনারা মানবতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ইতিহাসের ভুল পাশে দাঁড়িয়েছেন। এক্স-এ দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, হামাস ফিলিস্তিন রাষ্ট্র চায় না, তারা ইহুদি রাষ্ট্র ধ্বংস করতে চায়। তবু ফ্রান্স, ব্রিটেন, কানাডার নেতারা কেন এটা বোঝেন না তা আমার বোধগম্য নয়। বিশ্ব জুড়ে গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ ও দুর্ভিক্ষের চিত্র ছড়িয়ে পড়ায় জনমত ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রবলভাবে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। এতে তেল আবিবের ওপর চাপ বাড়ছে।

Related Articles

Back to top button