বাইডেন কখনোই ইসরাইলকে যুদ্ধবিরতির চাপ দেননি

অনলাইন ডেস্ক: গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন চলাকালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন কখনোই যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দেয়নি—এমনটাই স্বীকার করেছেন ইসরাইলি কর্মকর্তারা।

চ্যানেল ১৩–এর এক বিস্ফোরক অনুসন্ধানে প্রকাশ পেয়েছে, বাইডেন প্রশাসন ইচ্ছাকৃতভাবে গাজায় গণহত্যা অব্যাহত রাখতে ইসরাইলকে নজিরবিহীন ছাড় দিয়েছে, এমনকি যখন আগ্রাসনের আর কোনো পরিষ্কার সামরিক লক্ষ্য অবশিষ্ট ছিল না।

চ্যানেল ১৩–এর এই অনুসন্ধান, যার অনুবাদ প্রকাশ করেছে ড্রপ সাইট নিউজ। এটি দেখিয়েছে, ওয়াশিংটনের শীর্ষ কর্মকর্তারাও গোপনে স্বীকার করেছেন—এই আগ্রাসন ছিল শুধু হত্যার জন্য হত্যা, ধ্বংসের জন্য ধ্বংস।

নয়জন বর্তমান ও সাবেক মার্কিন কর্মকর্তার সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তৈরি প্রতিবেদনটিতে উঠে এসেছে মার্কিন রাজনৈতিক প্রভাব, কূটনৈতিক গোপনীয়তা ও শান্তি প্রচেষ্টার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যর্থতার চিত্র।

ইসরাইলের সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইকেল হার্জগ বলেন, ঈশ্বর ইসরাইল রাষ্ট্রের প্রতি দয়া করেছেন এই সময়ে বাইডেন প্রেসিডেন্ট ছিলেন। আমরা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধ করেছি, কিন্তু কখনোই মার্কিন প্রশাসন আমাদের বলেনি যে ‘এখন যুদ্ধবিরতি করো’। কখনো বলেনি। এটা কোনোভাবেই স্বাভাবিক মনে করার বিষয় না।

এই বক্তব্যটি প্রতিফলন করে বাইডেন প্রশাসনের সেই নীতির, যেখানে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে পুরোপুরি স্বাধীনতা দেওয়া হয় গাজায় সামরিক অভিযান চালানোর জন্য—যে অভিযানে ৫২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ইলান গোল্ডেনবার্গও বলেছেন, এই যুদ্ধ ছিল এক প্রকার নির্বিচারে হত্যা ও ধ্বংস, যেখানে কোনো কার্যকর রাজনৈতিক বিকল্প প্রতিষ্ঠার চেষ্টা পর্যন্ত করা হয়নি।

প্রকাশ্যে ইসরাইলকে নিয়ন্ত্রণের দাবি করলেও বাইডেন প্রশাসনের প্রকৃত অভ্যন্তরীণ অবস্থান ছিল ভিন্ন—তারা আদৌ কোনো চাপ প্রয়োগ করতে চায়নি।

এমনকি যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ থেকে ইসরাইলকে বাঁচাতেও সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে বাইডেন প্রশাসন। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের আইনজীবী স্টেসি গিলবার্ট প্রতিবাদস্বরূপ পদত্যাগ করেন।

তিনি জানান, একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদনের লেখালেখি থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয়—যে রিপোর্ট মিথ্যাভাবে দাবি করে যে ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র আইনের লঙ্ঘন করেনি।

গিলবার্ট বলেন, এই রিপোর্ট মিথ্যার এক ভয়ানক দলিল, যেখানে মানবিক সহায়তা বাধা ও বসতিস্থাপনকারী ইহুদি সন্ত্রাসীদের হামলার মতো সুপ্রতিষ্ঠিত ঘটনাগুলো উপেক্ষা করা হয়েছে।

অন্যদিকে, মার্কিন অস্ত্র সরবরাহের পথে কোনো বাধা না থাকায় ইসরাইলের ওপর চাপ প্রয়োগের আর কোনো বাস্তবতাই ছিল না।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ইচ্ছাকৃতভাবে জিম্মি বিনিময় আলোচনাও ভেস্তে দেন—কারণ এতে যুদ্ধবিরতির চাপ তৈরি হতো। মার্কিন কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, যুদ্ধ বন্ধের ভয়ে নেতানিয়াহুই আলোচনা ভেঙে দেন।

যুদ্ধের মধ্যে বাইডেন ও নেতানিয়াহুর এক ফোনালাপে বাইডেন তাকে ‘অসত্যবাদী’ আখ্যা দিয়ে ফোন কেটে দেন বলেও রিপোর্টে উল্লেখ আছে। তবে সে অবস্থানও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি—বাইডেন অল্পদিন পরই আবারো ইসরাইলকে অস্ত্র সরবরাহ শুরু করেন, এমনকি ২০০০ পাউন্ড বোমা সরবরাহ বন্ধ রাখার সাময়িক সিদ্ধান্তের পরও।

এই অনুসন্ধান আরও দেখায়, বাইডেন প্রশাসন সৌদি আরবের সঙ্গে একটি ঐতিহাসিক সম্পর্ক চুক্তি করতে চেয়েছিল, যেখানে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ছিল ইসরাইলের।

কিন্তু নেতানিয়াহুর কট্টর ডানপন্থি জোট এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।

সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত জ্যাক লিউ বলেন, ইসরাইলের এই অবস্থান তাকে অবাক করেছে, আর হোয়াইট হাউস উপদেষ্টা আমোস হোচস্টেইন বলেন, এই কৌশলগত সুযোগ নষ্ট হওয়াটা অবিশ্বাস্য।

সূত্র অনুযায়ী, নেতানিয়াহু ইচ্ছাকৃতভাবে এই চুক্তি স্থগিত রাখেন, আশা করেছিলেন ট্রাম্প ফের ক্ষমতায় এলে কৃতিত্ব তাকেই যাবে।

চ্যানেল ১৩–এর অনুসন্ধানটি বাইডেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে ওঠা অভিযোগগুলোর পক্ষে জোরালো প্রমাণ হাজির করেছে—তারা শুধু কূটনৈতিকভাবে ইসরাইলের মিথ্যাচার ঢেকে দিয়েছে না, বরং একটি জাতিগত নিধন অভিযানে সক্রিয় সহযোগী হয়েছে।

Related Articles

Back to top button