বাবার কবরের পাশে শায়িত সেই শহীদকন্যা

অনলাইন ডেস্ক: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহীদ বাবা জসিম উদ্দিনের পাশেই দাফন করা হয়েছে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হওয়া কলেজ পড়ুয়া মেয়ে লামিয়াকে। রোববার (২৭ এপ্রিল) রাত ৮ টার দিকে বাড়ির পাশে মাঠে লামিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
গতকাল রোববার সন্ধ্যায় লামিয়ার মরদেহ নিজ বাড়ি পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের নিজ বাড়িতে এসে পৌঁছে। এসময় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। রাতেই নামাজের জানাজা শেষে বাবা শহীদ জসিমের কবরের পাশেই শায়িত হন শহীদ কন্যা ।
শহীদ বাবার কবর জিয়ারত শেষে নানাবাড়ি ফেরার পথে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় সে। এ ঘটনার পর থেকে দীর্ঘদিন ধরে সে মানসিক যন্ত্রণায় ভুগে অবশেষে আত্মহননের পথ বেছে নিলেন কলেজ ছাত্রী। শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে রাজধানীর শেখেরটেকের ৬নং রোডের ভাড়া বাসা থেকে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। মর্মান্তিক এ ঘটনা হতবাক ও ক্ষুব্ধ করে তোলে এলাকাবাসীকে।
চাচা মনিরুল ইসলাম জানায়, লামিয়া কলেজের পরীক্ষা দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তাই আজ রোববার বিকালে মায়ের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল লামিয়ার। শনিবার মার্কেট থেকে কিছু কেনাকাটাও করেন। সেই লামিয়া বাড়িতে যাচ্ছে, তবে লাশ হয়ে ।
পটুয়াখালী দুমকি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন জানান, গ্রেফতারকৃত দুই আসামি ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সেখানে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন। ডিএনএ টেস্টের জন্য আলামত পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে তারা পটুয়াখালী কারাগারে আটক রয়েছেন।
এদিকে লামিয়ার জানাজায় কেন্দ্রীয় ও জেলার বিএনপি নেতৃবৃন্দ ও এনসিপির নেতৃবৃন্দসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জানাজায় বিএনপির প্রতিনিধি দলে রয়েছেন সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিএনপি নেতা আতিকুর রহমান রুমন ও মোকছেদুল মোমিন মিথুন।
এছাড়াও এনসিপির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, যুগ্ম সদস্য সচিব ফয়সাল মাহমুদ শান্ত এবং গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব জাহিদ হাসান শোকার্থ পরিবারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।
এসময় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, লামিয়া যখন বিচার চাচ্ছিল তখন সেই বিচারটি যদি নিশ্চিত হতো তাহলে লামিয়াকে আর মরতে হতো না। যে জন্য এত ছাত্র শ্রমিকের জীবন চলে গেল সেই আইনের শাসন এখনো নিশ্চিত হয়নি। লামিয়ার মৃত্যু আজ গোটা জাতির কাছে একটি প্রশ্ন বৃদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য জুলাই গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। গণতন্ত্রের মর্ম বাণী হচ্ছে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। আদালত হচ্ছে মানুষের সর্বশেষ আশ্রয়ের জায়গা সেখান থেকে মানুষ যদি বিচার না পায় যে অন্ধকার নেমে আসে। জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহীদ জসিম উদ্দিনের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, জুলাই-আগস্টের মহা বিপ্লবের জনগণের পক্ষে দাঁড়িয়ে বুক চিপিয়ে যিনি বুলেট বরন করে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন, এই শোক কাটতে না কাটতেই সেই পরিবারে আরেকটি শোকাবহ ঘটনা ঘটে গেল। শোকের মাতম দেখছি একটি পরিবারের মধ্যে।
সারজিস আলম বলেন, কিছু নরপিশাশ ছোবল থেকে আমরা আমাদের বোনকে রক্ষা করতে পারিনি। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি শিক্ষা কোন বোনকে এভাবে যেন আমাদের আর না হারাতে হয়। এ ঘটনার আর যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে তাই অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের দাবি। এই খুনিদের আগামী ৯০ দিনের ভিতর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর দেখতে চাই। এসব নরপিশাচদের মৃত্যুদণ্ড আমরা দেখতে চাই। এদের মৃত্যুদণ্ড প্রকাশ্যে না হলেও ভিডিও ধারণ করে তার জনসমক্ষে প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানান তিনি।