ভাইদের জিম্মিদশা থেকে মুক্তি, নাছির চৌধুরীকে নিয়ে ঢাকায় দুই মেয়ে

অনলাইন ডেস্ক: ‘আমাকে তোমরা উদ্ধার করে নিয়ে যাও। বাবার কাছে আসো।’ মুঠোফোনে পিতা নাছির উদ্দিন চৌধুরীর এমন শব্দ ভেসে আসামাত্রই আর এক সেকেন্ডও দেরি করেননি নাজিয়া চৌধুরী। সঙ্গে সঙ্গে দিরাই থানায় উপস্থিত হয়ে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের কাছে বাবার এমন আকাক্সক্ষার কথা প্রকাশ করেন তিনি। এরপরই ওসি আব্দুর রাজ্জাক পুলিশ সদস্যদের দিয়ে দুই বোনকে হাসপাতাল রোডের বাসায় পাঠিয়ে নির্যাতনের শিকার নাছির চৌধুরীকে উদ্ধার করেন। রোববার বিকালে পিতাকে (নাছির উদ্দিন চৌধুরী) সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় চিকিৎসার উদ্দেশে তারা দিরাই ত্যাগ করেন। তুমুল জনপ্রিয় বিএনপির এই নেতা দীর্ঘদিন ধরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত। তাকে একরকম বিনা চিকিৎসায়ই অবহেলায় ফেলে রাখা হয়। জীবনবাজি রেখে তার দুই মেয়ে ঢাকা থেকে এলাকায় গিয়ে বাবাকে উদ্ধার করে নিয়ে এলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার ‘ভাইদের জিম্মিদশায় সাবেক এমপি নাছির চৌধুরী’ শিরোনামে যুগান্তরে প্রতিবেদন প্রকাশের পর সিলেটের সর্বত্র তোলপাড় শুরু হয়। গতকাল ৩টার দিকে নাছির চৌধুরী পারিবারিক বিষয়টি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়। এর আগেই তার বড় মেয়ের কাছে উদ্ধারের আকুতি জানিয়ে ফোন করেন নাছির চৌধুরী। এ সময় মাকে নিয়ে দুই বোন দিরাই পৌর সদরের একটি বাসায় অবস্থান করছিলেন। জানতে চাইলে নাজিয়া চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, ‘বাবা নিজেকে উদ্ধারের কথা বলছেন-এমন কথা শুনে আমি আর এক সেকেন্ড অপেক্ষা করিনি। যে অবস্থায় ছিলাম সেভাবেই ছোট বোন নাদিয়াকে সঙ্গে নিয়ে বের হয়ে আসি থানায়।’
তিনি বলেন, ‘আমাকে কে মারবে আর কে কি করবে এটা আর চিন্তাই করিনি। পুলিশ নিয়ে বাবাসহ ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছি। এখন আল্লাহ ভরসা। প্রিয় দিরাই-শাল্লাসহ সিলেটবাসীকে শুধু বলব, আমার বাবার জন্য সবাই দোয়া করবেন। বাবা যেন সুস্থ হয়ে আবার জনগণের মাঝে ফিরে আসতে পারেন।’
জানা যায়, চাচাদের হাতে লাঞ্ছিত হয়ে দুই মেয়ে নিয়ে দ্বিতীয় স্ত্রী পারভিন আক্তার শুক্রবার থেকে দিরাই পৌর সদরের কলেজ রোডে অবস্থিত জগদল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মুখলেছুর রহমানের বাসায় অবস্থান করছিলেন। জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হওয়ার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন দিরাই থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক, ওসি (তদন্ত) উত্তম দাস, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আব্দুর রশিদ, দিরাই পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আমিরুল ইসলাম, ফারুক সরদার, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাব্বির মিয়া, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল করিম চৌধুরী, পৌর যুবদলের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন মিলাদ, উপজেলা বিএনপির সদস্য সুমন মিয়া, জাকারিয়া হোসেনসহ স্থানীয় সংবাদকর্মীরা।
জানতে চাইলে সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমেদ রোববার যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি জেনেই বিএনপি নেতা নাছির উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলতে দিরাই থানা পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া হয়। পাশাপাশি তার মেয়েদের সঙ্গেও কথা বলতে বলা হয়। সে অনুযায়ী পুলিশ কাজ করেছে। নাছির উদ্দিন চৌধুরী যদি তার মেয়েদের সঙ্গে চিকিৎসার জন্য যেতে চান তাহলে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। বিএনপি নেতার ইচ্ছানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে তিনি মেয়েদের সঙ্গে ঢাকার পথে দিরাই থেকে রওয়ানা হয়েছেন।