ফের অস্থির পেঁয়াজ ভোজ্যতেলের বাজার

অনলাইন ডেস্ক: চট্টগ্রামে ফের অস্থির পেঁয়াজ ও ভোজ্যতেলের দাম। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল। বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটার ১৮৯ টাকা বিক্রি করার কথা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা। সয়াবিনের বিকল্প পামতেলের দাম লিটারপ্রতি ১৬৯ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকার বেশি।
উপজেলা পর্যায়ে এর চেয়েও অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি। একইভাবে পেঁয়াজের দামও লাগামহীন। ৪ দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১০-১৫ টাকা। বেড়েছে সবজির দামও। এদিকে, ভোজ্যতেলের আমদানিকারকরা বলছেন, কর ও ভ্যাট পুনর্বহাল করার কারণে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, কয়েকটি সিন্ডিকেটের হাতে ভোজ্যতেলের বাজার জিম্মি। চক্রটি ভোজ্যতেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে। খুচরা থেকে পাইকারি বাজার-কোথাও মিলছে না বোতলজাত সয়াবিন তেল। ফলে বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের জন্য হাহাকার চলছে। বিশেষ করে এক ও দুই লিটারের বোতলের সরবরাহ নেই বললেই চলে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন ক্রেতারা। বাজারটিতে শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। চট্টগ্রামে ভোজ্যতেল নিয়ে বড় সংকটের আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। লিটারপ্রতি দাম ১৪ টাকা বাড়ানো হলেও বাজারে আরও অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। ১ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা, ২ লিটার ৩৯০ থেকে ৪০০ টাকা, ৫ লিটার বোতল ৯৫০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে লিটারপ্রতি ১৮০ টাকার বেশি দামে। অথচ সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম অনুযায়ী, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৮৯ টাকা, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৬৯ টাকায় বিক্রি করার কথা। দেশে প্রতিমাসে গড়ে ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে প্রায় দেড় লাখ টন। আন্তর্জাতিক বাজারে ২০২২ সাল থেকে সয়াবিন, পাম অয়েল ও সয়াবিন বীজের দাম নিুমুখী। ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলের গড় দাম ছিল ১ হাজার ৬৭০ ডলার। ২০২৩ সালে সে দর নেমে আসে ১ হাজার ১২০ ডলারে। ২০২৪ সালে তা আরও কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ২২ ডলারে। চলতি বছরের প্রথম ৩ মাসেও সয়াবিনের দাম এর কাছাকাছি। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সয়াবিনের গড় দাম ছিল ১ হাজার ৪০ ডলার। ভোজ্যতেলের আমদানিকারক কামরুল হুদা বলেন, কর ও ভ্যাট পুনর্বহাল করার কারণে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে। ব্যাংক খাতে অস্থিরতার কারণে আমরা সময়মতো এলসি করতে পারিনি। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও আমরা (আমদানিকারকরা) সুবিধা নিতে পারিনি।
এদিকে ভরা মৌসুমেও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় দেশি পেঁয়াজের কেজি সর্বনিু ২৫ টাকায় নেমেছিল। খাতুনগঞ্জে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা দরে। গত সপ্তাহে দাম ছিল ৩৫ থেকে ৩৭ টাকা। ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫৫ টাকায়। গত সপ্তাহে দাম ছিল ৪৫-৪৬ টাকা। আর দেশের মুড়িকাটা পেঁয়াজ আড়তে তেমন নেই। যা আছে সেগুলো কেজি ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরায়ও বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশীয় পেঁয়াজের দাম অন্তত কেজিতে ১০-১৫ টাকা বেড়েছে। শুক্রবার খুচরায় পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া রসুনের দামও কিছুটা বেড়েছে। চায়না রসুন ১৮০ টাকা থেকে বেড়ে খুচরায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২২০ টাকায়। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে ভারতীয় আদার দাম, যা প্রতি কেজি ১২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
খাতুনগঞ্জের হামিদউল্লাহ মার্কেটের পেঁয়াজের আড়তদার মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, রমজানের পর থেকে পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী। তবে বাজারে পেঁয়াজের সংকট নেই। মুড়িকাটা ও মেহেরপুরের পেঁয়াজের মজুত শেষ। এখন বাজারে এসেছে হালি পেঁয়াজ। এটার চাহিদা বেশি, আবার সংরক্ষণও করা যায়। অনেকে হালি পেঁয়াজ কিনে মজুত করছেন, সেজন্য দাম বাড়ছে।
বাজারদর : চট্টগ্রামে বেড়েছে সবজির দাম। বাজারে প্রতি কেজি শসা, পেঁপে, চালকুমড়া ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেগুন, তিতা করলা, পটোল, ঢ্যাঁড়স, চিচিঙ্গা, কচুর লতি ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ধুন্দল বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। ঝিঙ্গা ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি কাঁকরোল বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায়। বাজারে লাউ ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২৫ টাকা, টমেটো ২৫ টাকা ও কাঁচাকলা জোড়া ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গাজর ৪০ টাকা, কাঁচামরিচ ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাঁধাকপি কেজি ২০ টাকা, মুলা ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে মাছের দাম কিছুটা স্থিতিশীল। রুই কেজিপ্রতি ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, কাতল ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, বেলে ৫০০ থেকে ১ হাজার ৩০০, কালিবাউশ ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, কাঁচকি ৬০০ টাকা, কই ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, শিং ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, টেংরা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, বোয়াল ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা, শোল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, চিতল ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা, সরপুঁটি ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, রূপচাঁদা ৫৫০ থেকে ৯০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।