অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে প্রাক-বাজেট বৈঠক

উচ্চ সুদ ও ডলার সংকটে উদ্বেগ ব্যবসায়ীদের
অনলাইন ডেস্ক: উচ্চ ঋণের সুদ ও করপোরেট করহার এবং ডলার সংকটের কারণে শিল্প খাতের সক্ষমতা কমছে। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা। বৃহস্পতিবার প্রাক-বাজেট (২০২৫-২৬) আলোচনায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের কাছে এ উদ্বেগের কথা জানানো হয়। ওই বৈঠকে বিদ্যমান কর নির্ধারণ পদ্ধতি পরিবর্তন, গ্রামের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তার (এসএমই) ক্ষেত্রে ৮ বছরের জন্য ভ্যাট প্রত্যাহার, এইচএস কোড জটিলতা নিরসন, সুদহার কমিয়ে আনার সুপারিশ করা হয়েছে।
এছাড়া, এলডিসি থেকে উত্তরণে পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে বৈঠকে। সেখানে বলা হয় ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর এলডিসি থেকে বাংলাদেশ বেরিয়ে যাবে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা এজন্য যে প্রস্তুতির প্রয়োজন তা এখনো নিতে পারেননি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রাক-বাজেট আলোচনা পরিচালনা করেন অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার। সেখানে উপস্থিত ব্যবসায়ীরা বলেন, আগামী বাজেটে বিনিয়োগ বাড়ানো ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। চলমান পরিস্থিতি বিনিয়োগ অনেক কমছে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। এ সময় তৈরি পোশাক শিল্পের ব্যবসায়ীরা বলেন, উত্সে কর আদায়কে চূড়ান্ত আদায় হিসাবে গণ্য করে পোশাক শিল্পে আগামী ৫ বছরের জন্য (২০২৫-৩০) শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ হার নির্ধারণ করতে হবে। সুদহার কমাতে হবে। এছাড়া, ভ্যাট হার হ্রাস ও অর্থনৈতিক কোড সংক্রান্ত জটিলতা দূর করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে।
প্রাক-বাজেট বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, আমরা একটি ব্যবসাবান্ধব বাজেট দিতে চাই। বিশেষ করে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয় সে ধরনের বাজেট দেওয়া হবে।
এ সময় বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চেৌধুরী (পারভেজ) সাংবাদিকদের বলেন, নীতি বিধান সংস্কার করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর ব্যাপারে জোর দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা। আমরা কর পদ্ধতি বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছি।
বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, একজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এক কোটি টাকা অগ্রিম আয়কর (এআইটি) বাবদ গ্রহণ করছে এনবিআর। চূড়ান্ত পর্যায়ে রিটার্ন দাখিলের সময় ওই ব্যবসায়ীর মোট ২০ লাখ টাকা কর আসে। তাহলে নিয়ম অনুযায়ী অতিরিক্ত কর বাবদ নেওয়া ৮০ লাখ টাকা ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও সেটি দিচ্ছে না এনবিআর। এভাবে হিসাব করলে একজন ব্যবসায়ীর করহার কত দাঁড়াল, আবার সেখানে কোনো নির্দষ্টি করহার থাকছে না। এ পদ্ধতি যে আইনের মাধ্যমে করা হচ্ছে তা পরিবর্তন করা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, এইচএস কোডের জটিলতার কারণে কাস্টমস থেকে বলা হচ্ছে ব্যবসায়ীরা মিথ্যা ঘোষণা দিচ্ছে। ভিন্ন ভিন্ন এইচএস কোড থাকায় এটি হচ্ছে, ফলে সেটি কোনো মিথ্যা ঘোষণা নয়। এর জন্য আমাকে ৪০০ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা করছে। সেটি কি হতে পারে।
বৈঠকে একগুচ্ছ লিখিত প্রস্তাব দেওয়া হয়। প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তার ওপর আয়কর অব্যাহতি, কর পলিসি সংস্কারের মাধ্যমে ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব কর পলিসি প্রণয়ন করা। এছাড়া করদাতাবান্ধব আয়কর আইন প্রণয়নের জন্য বিভিন্ন সেক্টরের বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আইন (পলিসি) প্রণয়নকারী কমিটি গঠন, বিভিন্ন অগ্নি ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম পুনঃস্থাপনের ক্ষেত্রে আমদানির ওপর কর রেয়াত, শতভাগ রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য ও সেবাকে শতভাগ ভ্যাটমুক্ত রাখা। প্রস্তাবে পোশাক শিল্পের ঝুটের ওপর ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট ও রিসাইকেল ফাইবার সরবরাহের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করার কথা বলা হয়।
ডলার