স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আসামি পক্ষ

অনলাইন ডেস্ক: ১৬ বছর আগে পিলখানায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাকে। সেই ঘটনায় দায়েরকৃত দুটি মামলার মধ্যে হত্যা মামলার বিচারের দুটি ধাপ সম্পন্ন হয়েছে। আর বিস্ফোরক আইনের মামলাটির বিচার এখনো চলছে নিম্ন আদালতে। হত্যা মামলার বিচারের দুটি ধাপ সম্পন্নের পর এখন মামলাটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে আপিল বিভাগে। আজকের আপিল বিভাগের দৈনন্দিন কার্যতালিকার ৪৩৪ নম্বর ক্রমিকে রয়েছে মামলাটি।

তবে আসামি পক্ষ এখনই আপিল শুনানির উদ্যোগ নিচ্ছেন না। তারা অপেক্ষা করছেন পিলখানায় সংঘটিত নারকীয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনার প্রকৃতি ও স্বরূপ উদঘাটনে গঠিত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনের জন্য। ঐ তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার কী পদক্ষেপ নেয়, সেই অনুযায়ী এগোবে আসামি পক্ষের কৌঁসুলিরা।

আসামি পক্ষের অন্যতম কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট এম আমিনুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, ‘স্বাধীন তদন্ত কমিশনের তদন্ত রিপোর্টের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। ঐ রিপোর্ট পাওয়ার পরই আমরা পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ অর্থাৎ আপিল শুনানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’

তিনি বলেন, ‘তদন্ত কমিশনের রিপোর্টের আগেই যদি আপিল নিষ্পত্তি হয়ে যায়, তাহলে একটা বিচারিক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে। এজন্য তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত আমরা আপিল শুনানির উদ্যোগ নেব না।’

এদিকে সরকার থেকে নির্দেশনা পেলে আপিল শুনানির বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে। সূত্র বলছে, সরকার পক্ষও এই তদন্ত কমিশনের রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছেন। ঐ রিপোর্টের বিষয়বস্তুর ভিত্তিতে সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে, তার ওপর নির্ভর করছে আপিল শুনানির বিষয়টি।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহের নামে পিলখানায় সেনা কর্মকর্তাদের মুখমণ্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান ক্ষতবিক্ষত করা হয় বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে। লাশ বিকৃতের পর নিহতদের ইউনিফর্মসহ রাংক ব্যাচ খুলে ফেলা হয়, যাতে ভবিষ্যতে সেনা কর্মকর্তাদের মৃতদেহগুলি শনাক্ত করা না যায়। সুরতহাল রিপোর্ট ও ময়নাতদন্ত রিপোর্টে বিডিআর জওয়ানদের এমন নৃশংসতার চিত্র ফুটে ওঠে, যা স্থান পেয়েছে উচ্চ আদালতের রায়ের পাতায় পাতায়। ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায় ঘোষণা করে হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ। রায়ে ১৩৯ বিডিআর জওয়ানের ফাঁসি বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরও ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। মৃত্যুদণ্ড যাবজ্জীবন থেকে খালাস এবং সাজা হ্রাসের ৮৩ জনের বিরুদ্ধে আপিল করেছে সরকার। অন্যদিকে হাইকোর্টের রায় বাতিল চেয়ে আপিল করেন দণ্ডিতরা। উভয় পক্ষের আপিল এখন আপিল বিভাগে গত চার বছর ধরে বিচারাধীন রয়েছে। আজ মঙ্গলবারের আপিল বিভাগের দৈনন্দিন কার্যতালিকার ৪৩৪ নম্বর ক্রমিকে ‘সেপাই কামাল মোল্লা ও অন্যান্য বনাম রাষ্ট্র’ মামলাটি শুনানির জন্য রয়েছে।

আইনজ্ঞরা বলছেন, ক্রম অনুযায়ী হলে আপিল শুনানি শুরু হতে কয়েক বছর লেগে যাবে। তবে রাষ্ট্রপক্ষ উদ্যোগ নিলে তখন আপিল শুনানি এগিয়ে আনা সম্ভব।

বিস্ফোরক আইনের মামলা এখনো নিম্ন আদালতে
ঢাকার কেরাণীগঞ্জ কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে চলছে বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচার। আগামী ১৩ মার্চ এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। কিন্তু কারাগারের অস্থায়ী আদালতে বিচারকাজ শুরু হলেও রয়েছে নানা অবকাঠামোগত সমস্যা। নেই বিচারকের জন্য খাসকামরা। নেই কোর্ট স্টাফদের জন্য কোনো কক্ষ। নেই সাক্ষীদের বসার জায়গা। রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন পিপির নেতৃত্বে ২৫ জনের আইনজীবী দল। তাদের বসার জন্য পৃথক কোনো কক্ষ নেই। এরকম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মামলাটির বিচারকাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে জানান বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট মো. বোরহান উদ্দিন। তিনি ইত্তেফাককে বলেন, ‘অবকাঠামোগত সমস্যা প্রকট। এরকম পরিস্থিতিতে আমাদের সবাইকে কাজ চালিয়ে নিতে হচ্ছে। এসব সমস্যার সমাধান দরকার।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে মামলাটি বিলম্বিত করার কোনো ইচ্ছা নেই। দ্রুত নিষ্পত্তি করতে যত ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সেটা আমরা নেব। আসামি পক্ষের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট এম আমিনুল ইসলাম বলেন, বাকি সাক্ষীদের সাক্ষ্য নিয়ে কবে মামলাটি শেষ হবে আমরা কেউ জানি না। নিম্ন আদালতের কাছে অনুরোধ মামলাটি যেন দ্রুত নিষ্পত্তি করা হয়।’

প্রসঙ্গত বিস্ফোরক আইনের মামলার আসামি রয়েছে ৮৩৪ জন। রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষী রয়েছে প্রায় সাড়ে এগারো শত। এর মধ্যে গত ১০ বছরে সাক্ষী দিয়েছেন মাত্র ২৮৫ জন। বাকি সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করে মামলাটি কবে নাগাদ নিষ্পত্তি হবে, তা বলতে পারছেন না রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের কৌঁসুলিরা। ইতিমধ্যে বিচার বিলম্বিত হওয়ায় এই মামলার ১৬৮ আসামিকে জামিনে মুক্তি দিয়েছে কেরাণীগঞ্জ কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতের বিচারক ইব্রাহিম মিয়া। মুক্তি পাওয়া আসামিরা হত্যা মামলায় উচ্চ আদালত থেকে খালাস পেয়েছেন। এদের বিরুদ্ধে সরকারের কোনো আপিল নেই। এ কারণে জামিন দিয়েছে আদালত। তবে বিস্ফোরক মামলার অনেক আসামি হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডিত।

বিষয়: বিডিআর হত্যাকাণ্ড

Related Articles

Back to top button