সংস্কার কমিশনের সুপারিশ: আদালত অঙ্গনে রাজনীতি করা যাবে না

অনলাইন ডেস্ক: বিচারিক প্রক্রিয়াকে নিরপেক্ষ, স্বাধীন এবং গতিশীল রাখার জন্য আদালত প্রাঙ্গণে দলীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করেছে বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশন। পাশাপাশি দেশের আইনজীবী সমিতিগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করার সুপারিশ করা হয়েছে।

সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদালতের স্বাভাবিক বিচারিক কার্যক্রম ব্যাহত করে এমন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে আইনজীবীদের বিরত থাকা আবশ্যক। আদালত প্রাঙ্গণে এ ধরনের কর্মসূচি বা কর্মকাণ্ডকে পেশাগত অসদাচরণের অন্তর্ভুক্ত করে বার কাউন্সিলের মাধ্যমে এই ব্যাপারে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রচলন করতে হবে। আদালত প্রাঙ্গণে মিছিল, সমাবেশ, অবস্থান, ঘেরাও কর্মসূচি ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন ও তার কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

বিচারকদের রাজনীতির ব্যাপারে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিচারকদের অবশ্যই সব ধরনের রাজনৈতিক প্রভাব ও সম্পৃক্ততা থেকে মুক্ত থাকতে হবে। রাজনৈতিক আনুগত্য প্রদর্শন বা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশকে অসদাচরণ হিসেবে বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট আচরণবিধি অনুসারে কঠোরভাবে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে রাজনৈতিক দলগুলোর দুটি বিষয়ে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার প্রয়োজন বলেও মনে করে কমিশন। বিশেষ করে, দলগুলো আইনজীবী সমিতি নির্বাচন এবং বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রাখবে না এবং নির্বাচনগুলোতে অন্য কোনোভাবে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার বা হস্তক্ষেপ করবে না। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠন হিসেবে আইনজীবীদের কোনো সংগঠনকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না।’ এ বিষয়ে হাইকোর্ট বিভাগের ২০০৫ সালের রায় অনুযায়ী আদালতের প্রবেশদ্বার বা চত্বরের মধ্যে যে কোনো জমায়েত, মিছিল, বিক্ষোভ, বয়কট বা ঘেরাও কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট নির্দেশ জারি করবে এবং তার পরিপালন তদারকি করার সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে ক্ষমা প্রদর্শনে রাষ্ট্রপতির একচ্ছত্র ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণসহ ৩০টি বিষয়ে সুপারিশ করা হয়। এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগ ও শৃঙ্খলা, অধস্তন আদালতে বিচারক নিয়োগ ও চাকরির শর্তাবলি, সুপ্রিম কোর্টে আলাদা সচিবালয় স্থাপন, আদালত ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ, স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠা, স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সংস্থা গঠন, বিচার প্রার্থীদের হয়রানি লাঘব, দুর্নীতি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, আইনগত সহায়তা কার্যক্রম ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা কার্যকর করা, প্রচলিত আইনের, আইন পেশার ও আইন শিক্ষার সংস্কার, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রতিরোধ, মামলার জট হ্রাস, মোবাইল কোর্টে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সাজা প্রদানের ক্ষমতা রহিত করা, গ্রাম আদালতের ভুলত্রুটি দূর করা, বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা ইত্যাদি।

জানতে চাওয়া হলে আইন বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, ‘আইনজীবী হবে কিন্তু রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকবে না, সংগঠন করার অধিকার থাকবে না- এটা কি হতে পারে? এগুলো তো একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার। তবে রাজনীতির নামে অপরাধমূলক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত হওয়াটা কাম্য নয়।’

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, আদালত রাজনীতিমুক্ত থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। এটার ব্যাপারে নতুন করে সুপারিশ করার কী হলো? আমরা তো আদালতে কোনো রাজনীতি করি না। এখানে সমিতির নির্বাচন হয় নিরপেক্ষভাবে। নির্বাচনে কোনো স্বীকৃত প্যানেল হয় না, দলীয় প্রতীক থাকে না। কিন্তু ব্যক্তির রাজনৈতিক স্বাধীনতা, চিন্তা-চেতনার স্বাধীনতা এগুলো তো বন্ধ করা যায় না। এগুলো মৌলিক অধিকার। তিনি বলেন, সুপারিশ করলেই হবে না। সেগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, বাস্তবে বাস্তবায়ন সম্ভব কি না, সেগুলোও দেখা উচিত। আমি মনে করি, এই সুপারিশ অসম্পূর্ণ। ব্যারিস্টার খোকন বলেন, বিচারক নিয়োগ কীভাবে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা যায়, সে ব্যাপারে একটি কার্যকর আইন দরকার ছিল। সরকার সম্প্রতি উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের আইন করলেও সেটা ত্রুটিপূর্ণ রয়েছে।

বিষয়: জাতীয় রাজনীতি আইন আদালত

Related Articles

Back to top button