বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘাতের শঙ্কা, খুলনায় ১৪৪ ধারা জারি

অনলাইন ডেস্ক: খুলনার দিঘলিয়া উপজেলায় বিএনপির দুই গ্রুপের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উত্তেজনাসহ সংঘাতপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন। যা শুক্রবার বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

গতকাল শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল ইসলাম এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় ১৪৪ ধারা জারি করেন।

জানা গেছে, খুলনা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবু হোসেন বাবুর বাড়িতে সন্ত্রাসীদের গুলি ও বোমা হামলার প্রতিবাদে দিঘলিয়া উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে শুক্রবার বিকেল ৫টায় উপজেলার পথের বাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা আহ্বান করে। উক্ত বিক্ষোভ মিছিল সফল করার জন্য নেতাকর্মীরা যথাসময়ে হাজির হতে থাকে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. পারভেজ মল্লিক সেখানে গণসংযোগ করার ঘোষণা দেন। এ খবর উপজেলা প্রশাসন জানতে পেরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুল ইসলাম পথের বাজার এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার্থে ১৪৪ ধারা জারি করেন।

এসময় তিনি কোন প্রকার সভা সমাবেশ বা গণসংযোগ না করার আহ্বান জানিয়ে উভয় পক্ষকে স্থান ত্যাগ করার আহ্বান জানান। এ ঘটনায় এলাকায় যৌথ বাহিনীসহ অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন এবং পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।

দিঘলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ এইচ এম শাহিন বলেন, দিঘলিয়ায় স্থানীয় বিএনপির কর্মীদের একটি প্রোগ্রাম ছিল। এদিন খুলনা ৪ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী পারভেজ মল্লিক ও এখানে জনসংযোগের জন্য আসছিলেন। এ সময় কিছু রাজনৈতিক কর্মী খেয়াঘাট বন্ধ করে দিয়ে তাদের বাঁধার সৃষ্টি করে। তৎখনাত আমরা বিষয়টি আমরা জানতে পেরে ইউএনও মহোদয় এবং নৌবাহিনীর সহায়তায় দ্রুতই ঘাটগুলো চালু করি এবং পরিস্থিতি শান্ত রাখতে এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

১৪৪ ধারা জারি সম্পর্কে দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল ইসলাম বলেন, পথের বাজারে একই সময় একই স্থানে একটি রাজনৈতিক দলের দুটি গ্রুপ কর্মসূচি আহ্বান করায় পথের বাজার, বেলেঘাট, মোকামপুর বাজার, সেনহাটি বাজার, নগরঘাট, বারাকপুর বাজার, কামারগাতি বাজার, দৌলতপুরঘাট, চন্দনীমহল খেয়াঘাটসহ অন্যান্য স্থানে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে ওই স্থানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। যা শুক্রবার বিকাল ৫টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

তিনি আরও বলেন, ১৪৪ ধারা বলবৎথাকা অবস্থায় সকল প্রকার সভা, সমাবেশ, পদযাত্রা, গণজমায়েত নিষিদ্ধ করা হল। এই আদেশ অমান্য করলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোন প্রকার অপীতিকার ঘটনা যাতে না ঘটতে পারে সেজন্য আমি নিজেই ঘটনাস্থলে রয়েছি। রয়েছেন দিঘলিয়া থানা অফিসার ইনচার্জ ও যৌথ বাহিনীর সদস্যবৃন্দ।

পারভেজ মল্লিক বলেন, বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফার প্রচারণায় যাওয়ার সময় মাঝিরগাতি খেয়াঘাট, কোলা কামারগাতি খেয়াঘাট, বেলেঘাট, লস্করপুর, মোকামপুর, মল্লিকপুর ও আবালগাতী ফেরিঘাটের নৌকা-ফেরি চালকদের ভয় দেখিয়ে পারাপার বন্ধ করে দেয় মিন্টু মোল্লা। মিন্টু মোল্লার লোকজন এসে খেয়া ঘাটের সব নৌকা বন্ধ করে দিয়েছে। তারা বলে, তোরা যদি পারভেজ মল্লিক এর লোক রে পার করিস তাহলে তোদের খেয়া বন্ধ করে দেয়া হবে, খেওয়াঘাটে আজীবনের জন্য নৌকা রাখতে দেব না।

তিনি জানান, দিঘলিয়া উপজেলার বিএনপির আহ্বায়ক মিন্টু বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারি হেলালের সমর্থক। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হেলাল ও পারভেজ মল্লিক খুলনার ৪ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী। আজিজুল বারি হেলালকে খুশি করতে মিন্টু এই ঘটনা ঘটিয়েছে।

পারভেজ মল্লিক জানান, আমি কোন নির্বাচনী প্রচারণায় আসিনি। আমি এসেছিলাম বিএনপি’র ৩১ দফা জনগণের দোড়গড়ায় পৌঁছে দিতে। দেশনায়ক তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্র ও রাজনীতি সংষ্কারের ৩১ দফার প্রচারণায় বাধা দেওয়া হয়েছে—এটি দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্য দুঃখজনক ঘটনা। গণতান্ত্রিক অধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে রুদ্ধ করার জন্য পরিকল্পিতভাবে এ ধরনের কর্মকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে। আজকের এই ঘটনা আমি জেলা বিএনপির সদস্যসচিব কে জানিয়েছি। দেখি এবিষয়ে কি পদক্ষেপ দেওয়া হয়।

বিষয়টি জানতে অভিযুক্ত দিঘলিয়া উপজেলার বিএনপির আহ্বায়ক মিন্টু মোল্লাকে একাধিকবার ফোন করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Related Articles

Back to top button