হারুন-বিপ্লবসহ ২ শতাধিক পুলিশ চাকরি হারাচ্ছেন

অনলাইন ডেস্ক: চাকরি হারাচ্ছেন দুই শতাধিক পুলিশ সদস্য। তাদের মধ্যে আছেন এক সময়ের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তালিকায় আছেন ডিএমপির প্রভাবশালী যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার। যুগ্ম কমিশনার এসএম মেহেদী হাসান, সঞ্জিত কুমার রায়, সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, অতিরিক্ত উপ- পুলিশ কমিশনার রাজীব দাস, রওশানুল হক সৈকত, সহকারী পুলিশ কমিশনার মফিজুর রহমান পলাশ ও ইফতেখার মাহমুদসহ আরও অনেকেই আছেন এই তালিকায়। এদিকে গত ৫ জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের অর্ধশতাধিক কর্মকর্তাকে এরই মধ্যে বরখাস্ত ও বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে। তারা পুলিশ বিভাগে উচ্চাভিলাষী কর্মকর্তা বলে পরিচিত ছিলেন। পুলিশ সদর দপ্তর ও ডিএমপির সংশ্লিষ্ট বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, চাকরি যাওয়ার তালিকায় যাদের নাম আছে তাদের প্রত্যেকের নামেই রয়েছে বেশ কয়েকটি করে মামলা। কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার কারণে তাদের স্থায়ী ঠিকানায় নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ওই নোটিশ কেউ গ্রহণ করেনি। ফলে ফেরত এসেছে। বিষয়টি অবগত করা হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরকে। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বিষয়টি জানানো হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। শিগগিরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে পরবর্তী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুলিশ পরিদর্শক থেকে কলস্টেবল পর্যায়ের যেসব পুলিশ সদস্য গরহাজির আছেন তাদের মধ্যে আছেন কনস্টেবল সাবেতুল ইসলাম, ফখরুল ইসলাম, সারোয়ার হোসাইন, এসআই মামুন মিয়া, কেএম আব্দুল্লাহিল মারুফ, পুলিশ পরিদর্শক জাহির হোসেন, এসআই গোলাম মাওলা, কনস্টেবল জাহাঙ্গীর আলম, আমির সোহেল, ফারুক রানা, হাফিজুল ইসলাম সৌরভ, নারী কনস্টেবল শামীমা আক্তার, কনস্টেবল রিয়াদ হোসেন, শরিফ মিয়া, এএসআই শরিফুল ইসলাম, কনস্টেবল রাহাত হোসেন, কাইয়ুম খন্দকার, হাসিবুল হাসান, জুয়েল রানা, তারেক হোসেন, হুমায়ুন কবির, অর্ক সাহা, নীতিশ চন্দ্র বর্মণ, সুমন বিল্লাহ, জাবেদ হোসেন, অহিদুল নবী এবং নারী কনস্টেবল কানিজ ফাহানা উল্কা।

জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর যুগান্তরকে বলেন, যারা কর্মস্থলে অনুপস্থিত এবং গরহাজির আছেন তাদের চাকরি থাকবে না। যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, গত ১ আগস্ট থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৮৭ জন পুলিশ সদস্য কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে একজন ডিআইজি, সাতজন অতিরিক্ত ডিআইজি, দুজন পুলিশ সুপার, একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, পাঁচজন সহকারী পুলিশ সুপার, পাঁচজন পুলিশ পরিদর্শক, ১৪ জন এসআই ও সার্জেন্ট ১৪ জন, নয়জন এএসআই, সাতজন নায়েক এবং ১৩৬ জন কনস্টেবল। এদের মধ্যে ছুটিতে অতিবাস ৯৬ জন, কর্মস্থলে গরহাজির ৪৯ জন, স্বেচ্ছায় ইস্তফা দিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত তিনজন এবং অন্যান্য কারণে ৩৯ জন কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে অনুপস্থিতির সংখ্যা আরও বেড়েছে। তালিকায় থাকা মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সবসময় থাকতে চাইতেন পাদপ্রদীপের আলোয়। মারমুখী আচরণ ও বক্তব্যের কারণে ছিলেন আলোচিত। ২০১১ সালে তৎকালীন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে লাঠিপেটা করে ব্যাপক আলোচনায় আসেন তিনি। ওই সময় ছিলেন পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি)। এর কিছুদিনের মধ্যেই উপ-কমিশনার (ডিসি) হিসাবে পদোন্নতি পান। দায়িত্ব পান পুলিশের লালবাগ বিভাগের। ২০১৩ সালে মতিঝিলে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে পুলিশি অভিযানের সময় ছিলেন লালবাগের ডিসি। ওই সময় হেফাজতের তৎকালীন আমির মাওলানা আহমদ শফীকে আটকে রাখেন লালবাগের একটি মাদ্রাসায়। তাকে (শফী) হাজির হতে দেননি শাপলা চত্বরে। লালবাগ থেকেই তাকে পাঠিয়ে দেন চট্টগ্রামে। এ ঘটনায় ব্যাপক আলোচনায় আসেন মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। এরপর তিনি যোগ দেন গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে। দীর্ঘদিন সেখানে দায়িত্ব পালনের সময় হন ব্যাপক সমালোচিত। তার পরও তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় নারায়ণগঞ্জের।

এরপর তাকে বদলি করা হয় পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি হিসাবে। সেখানে কর্মরত অবস্থায় ২০২১ সালে অতিরিক্ত ডিআইজি হন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) যোগ দেন যুগ্ম কমিশনার হিসাবে। ২০২২ সালে পদোন্নতি পেয়ে হন ডিআইজি (এ ক্ষেত্রে বঞ্চিত করা হয় অনেক পদোন্নতিপ্রত্যাশী পুলিশ কর্মকর্তাকে)। পদোন্নতির পরপরই তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন ডিএমপি ডিবির প্রধান হিসাবে। গত বছর জুলাই বিপ্লবের সময় ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয়ে আটকে রাখার ঘটনায় তাকে বদলি করা হয় ডিএমপি সদর দপ্তরে। দায়িত্ব দেওয়া হয় অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) হিসাবে। ওই বছরের ৫ জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকেই পলাতক তিনি। তার চাকরি যাওয়া এখন সময়ের ব্যাপর মাত্র। মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এবং বিপ্লব কুমার সরকারসহ কর্মস্থলে অনুপস্থিত বেশির ভাগ পুলিশ সদস্যকে টেলিফোনে পাওয়া যায়নি। তবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত একজন পুলিশ কর্মকর্তা শুক্রবার সন্ধ্যায় নিজের নাম প্রকাশে অপারগতা জানিয়ে যুগান্তরকে জানান, আমাদের সবই শেষ হয়ে গেল। জীবনটাই শেষ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমি সাড়ে ছয় বছরের বেশি অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার (এডিসি) হিসাবে ডিএমপি সদর দপ্তরে কর্মরত ছিলাম। ২০১৯ সালে উপ-কমিশনার (ডিসি) হিসাবে পদোন্নতি পাওয়ার পর একটি অপরাধ বিভাগের দায়িত্ব পাই। ২০২১ সালে আমাকে একটি জেলার এসপি হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে আমাকে ডিএমপি সদর দপ্তরে বদলি করা হয়। আমি ১২ আগস্ট ডিএমপিতে যোগ দিই। ওই সময় রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন হচ্ছিল। আমাকে সেসব জায়গায় ডিউটি দেওয়া হয়। আমি ইউনিফর্ম পরে ডিউটি পালন করি। ২১ আগস্ট আমাকে ক্লোজড করা হয়। ইতোমধ্যেই আমার নামে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়। এমন প্রেক্ষাপটে তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার আমাকে অফিসে যেতে বারণ করেন। এ কারণে আমি আর অফিসে যাইনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি দেশেই আছি। তবে ঢাকার বাইরে। আমার বাসায় কোনো নোটিশ যায়ইনি। নোটিশ গেলে অবশ্যই আমি জানতে পারতাম।

হারুন অর রশীদ বিপ্লব কুমার সরকার

Related Articles

Back to top button