সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ক্যাশিয়ারের পেটে ১৭ কোটি টাকা, পুলিশের জন্য রাশিয়া থেকে হেলিকপ্টর ক্রয়

অনলাইন ডেস্ক: পতন হলেও আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসরদের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়নি। তারা নির্বিঘ্নে সরকারি কেনাকাটা থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন টাকা। আইনি জটিলতার কারণে সরকার তাদের কিছুই করতে পারছে না। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজি) বেনজীর আহমেদের আশীর্বাদপুষ্ট এক ব্যবসায়ীর মধ্যস্থতায় পুলিশের জন্য রাশিয়া থেকে দুটি হেলিকপ্টার ক্রয় করে বিগত সরকার। জিটুজি (সরকার টু সরকার) পদ্ধতিতে কেনা এ আকাশযান ক্রয় থেকে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে ওই ব্যবসায়ী তথা সুবিধাভোগী কমিশন পেয়েছেন ১৭ কোটি ১২ লাখ টাকা। প্রবল গণ-আন্দোলনের মুখে পতনের পরও ফ্যাসিবাদের দোসরদের ব্যবসা-বাণিজ্য এখনো চাঙা থাকায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট অনেক কর্মকর্তা।

তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, ‘হেলিকপ্টার ক্রয়ের চুক্তি হয়েছে ২০২১ সালে। গত বছর ৩০ জুন পর্যন্ত দুটি হেলিকপ্টার ক্রয় মূল্যের প্রায় ৭০ শতাংশ অর্থ রাশিয়াকে পরিশোধ করা হয়। সুতরাং ইচ্ছা থাকলেও চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। বাধ্য হয়ে সরকারকে হেলিকপ্টার দুটি আনতে হয়েছে। আন্তঃরাষ্ট্রীয় চুক্তি থেকে চাইলে যখন তখন বেরিয়ে আসা যায় না।’

উল্লেখ্য, পুলিশের জন্য ৪২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বিগত সরকার এমআই-১৭১এ২ মডেলের দুটি হেলিকপ্টার ক্রয় করে। চলতি জানুয়ারি মাসের ১৭ তারিখ একটি এবং এপ্রিল মাসে আরেকটি হেলিকপ্টার সরবরাহের কথা রয়েছে। ১৯ জানুয়ারি রাশিয়া থেকে ৩৬ জন কলাকৌশলী সিকিউরিটি ক্লিলিয়ারেন্সের জন্য বাংলাদেশে আসবেন বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। রাশিয়ার সরকারি প্রতিষ্ঠান জেএসসি হেলিকপ্টার থেকে আকাশযান দুটি ক্রয় করা হয়েছে।

এই কেনাকাটা থেকে মধ্যস্থতাকারীকে ক্রয় মূল্যের ওপর ৪ শতাংশ হিসাবে ১৭ কোটি ১২ লাখ টাকা কমিশন দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি যুগান্তরকে বলেন, ‘এসব আমার বর্তমান দায়িত্বভার গ্রহণের আগের ঘটনা। আমি সব চোর ধরার জন্য কাজ করছি।’ এর চেয়ে বেশি কিছু তিনি মন্তব্য করতে চাননি।

হেলিকপ্টার দুটির একটি চলতি মাসের ১৭ তারিখ (আগামীকাল) বাংলাদেশে আসছে। সরবরাহের আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. নাসির উদৌলার নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ১০ দিনের জন্য রাশিয়া সফর করেছে। কমিটিতে পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ছিলেন। তারা প্রিশিপমেন্ট ইনস্পেকশনের (পিএসআই) জন্য রাশিয়া গেছেন। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য অতিরিক্ত সচিব নাসির উদৌলার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে চাননি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, হেলিকপ্টার দুটি কেনার চুক্তি হয় ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর। জিটুজি পদ্ধতিতে কেনার মধ্যে কোনো কমিশনভোগী থাকার কথা নয়। সরকার টু সরকার অর্থাৎ বাংলাদেশ সরকার ও রাশিয়া সরকারের মধ্যে চুক্তির মাধ্যমে রাশিয়ার সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে হেলিকপ্টার কেনা হয়। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার টাকা দেবে আর রাশিয়া দেবে হেলিকপ্টার। তাহলে মাঝখানে তো মধ্যস্থতাকারী থাকার কথা নয়। কিন্তু হেলিকপ্টার ক্রয়ে আহসান আহমেদ নামে এক ব্যক্তিকে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে রাখা হয়। মূলত তিনি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের আইজি বেনজীর আহমেদের ক্যাশিয়ার।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং মন্ত্রণালয়ের অধিকাংশ কর্মকর্তা এ চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার বিষয়ে একমত হয়েও শেষ পর্যন্ত তা কার্যকর করা যায়নি। কারণ চুক্তির সিংহভাগ টাকা আগেই রাশিয়াকে বছরভিত্তিক পর্যায়ক্রমে পরিশোধ করা হয়েছে। তারা আরও জানান, রাশিয়া বিশ্বের অন্যতম সুপার পাওয়ার। শক্তিধর একটি পরাশক্তির সঙ্গে কোনো বিষয়ে চুক্তি করে তা থেকে একতরফা বেরিয়ে আসা আন্তর্জাতিক রীতিনীতির পরিপন্থি। এতে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক বিনষ্ট হয়। সরকার সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে।

জিটুজি পদ্ধতিতে হেলিকপ্টার কেনা থেকে কমিশন নেওয়ার বিষয়ে জানতে আহসান আহমেদের সেল নম্বরে (০১৭১৫-২৫০ ৫৫০) কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে কল করা হলে তাও রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপে প্রতিবেদকের পরিচয় দিয়ে কথা বলার জন্য বার্তা প্রেরণ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, হেলিকপ্টার ক্রয় বাবদ ৪০ কোটি টাকা কমিশন পাবে ব্যাংক। এছাড়া ট্যাক্সবাবদ পরিশোধ করতে হবে প্রায় ২৯ কোটি ৪০ লাখ ৬৬ হাজার ৪১ টাকা।

আসাদুজ্জামান খান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দুর্নীতি

Related Articles

Back to top button