দুর্গের মতো বেড়া, নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় ট্রাম্পের অভিষেকের প্রস্তুতি
অনলাইন ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী ২০ জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নিতে চলছেন। তার এই অভিষেক ঘিরে নেওয়া হচ্ছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। গড়ে তোলা হচ্ছে ৩০ মাইল (৪৮ কিমি) লম্বা কালো অস্থায়ী বেষ্টনি, মোতায়েন হচ্ছে ২৫ হাজার বাড়তি আইনপ্রয়োগকারী কর্মকর্তা। অভিষেক অনুষ্ঠানে দর্শকশ্রোতাদের নিরাপত্তা তল্লাশির জন্য বসানো হচ্ছে চেকপয়েন্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল ভবনের সিঁড়িতে আগামী সপ্তাহে সোমবার শপথ নেওয়ার পর হোয়াইট হাউজে যাত্রা করবেন ট্রাম্প । তার আগে দিয়ে এ সপ্তাহান্তে বেশ কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা এরই মধ্যে ঘটেছে। ট্রাম্প বিরোধীরা বিক্ষোভ করেছে। রিপাবলিকানদের সমর্থকরা সমাবেশ করেছে।
তাছাড়া, খোদ ডোনাল্ড ট্রাম্পও গতবছর নির্বাচনি প্রচারের সময় থেকেই হামলার হুমকির মুখে আছেন। তাকে হত্যার চেষ্টা চলেছে একাধিকবার। গতবছর ১৩ জুলাইয়ে আততায়ীর বুলেট থেকে কোনো রকমে প্রাণে রক্ষা পান তিনি। তার ডানকান ছুঁয়ে বেরিয়ে যায় গুলি। আরেকবার গলফ ক্লাবে তাকে হত্যার জন্য ওঁত পেতে থাকা আততায়ী ধরা পড়ে যাওয়ায় বেঁচে যান ট্রাম্প।
আবার নতুন বছর ২০২৫ সাল শুরুর সময়েও সাধারণ আমেরিকানদের ওপর ঘটেছে কয়েকটি হামলার ঘটনা। এর মধ্যে একটি ঘটনায় নিউ অরলিন্সে নববর্ষ উদযাপনের মুহূর্তে মানুষের ভিড়ে সাবেক এক প্রবীণ মার্কিন সেনা ট্রাক চালিয়ে দিয়ে অন্তত ১৪ জনের প্রাণহানি ঘটিয়েছেন।
একইদিনে আরেক ঘটনায় ট্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল হোটেলের সামনে একটি টেসলা সাইবারট্রাক (বৈদ্যুতিক গাড়ি)-এ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে গাড়িচালক মারা যান। সাইবার ট্রাকের চালক ছিলেন সেনাবাহিনীর সক্রিয় সদস্য।
এতসব ঘটনার ঘনঘটায় সোমবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের সিক্রেট সার্ভিস স্পেশাল এজেন্ট ম্যাট ম্যাকুল বলেছেন, আমরা প্রচণ্ড হুমকির এক পরিবেশের মধ্যে আছি।
ট্রাম্প এবং তার সঙ্গে কংগ্রেসের অন্যান্য সদস্যরা যেখানে শপথ নেবেন এবং অন্যান্যরা যারা তা দেখবেন, সেই জায়গাটি হচ্ছে কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিল -যেখানে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারিতে ঘটেছিল তাণ্ডব। ট্রাম্পের হাজার হাজার সমর্থক ভবনের জানালা ভাঙচুর করেছে, আর আইনপ্রণেতারা জান নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে বেঁচেছেন। ২০২০ সালের নির্বাচনের ফল পাল্টানোর চেষ্টাতেই ঘটেছিল ওই দাঙ্গা-হাঙ্গামা।
যদিও এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের কাছে পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছেন ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কমলা হ্যারিস। যে কাজটি ট্রাম্প ২০২০ সালে করেননি। বরং তিনি উল্টো নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে মিথ্যা প্রচার চালিয়ে গিয়েছিলেন।
নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরিতে কাজ করছেন কর্মীরা। ছবি: রয়টার্স
এবারে ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠান ঘিরে কোনও সুনির্দিষ্ট বা সমন্বিত হুমকি আছে কিনা সে সম্পর্কে কিছু জানেন না বলেই জানিয়েছেন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। তবে তারা বলছেন, কোনও আততায়ীর একক হামলার আশঙ্কাতেই মূলত তারা উদ্বিগ্ন। যেমনটি ঘটেছে নিউ অরলিন্সে কিংবা গত সপ্তাহের দুটি পৃথক ঘটনায়।
ক্যাপিটল পুলিশের তথ্যমতে, একটি ঘটনায় এক ব্যক্তি ক্যাপিটল ভবনে চাপাতি নিয়ে ঢোকার চেষ্টা করে গ্রেপ্তার হয়েছেন। আরেক ঘটনায় আরেকজন ব্যক্তি ক্যাপিটল ভবনের কাছে আগুন জালানোর চেষ্টা করে গ্রেপ্তার হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল পুলিশ প্রধান থমাস মাঙ্গার নিরাপত্তা বিষয়ক এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, এরকম একক আততায়ীর হামলার হুমকিই হচ্ছে আগামী সপ্তাহ জুড়ে আমাদের সবচেয়ে সতর্ক অবস্থায় থাকার সবচেয়ে বড় যৌক্তিক কারণ।
সূত্র: রয়টার্স