বোয়েসেলের মাধ্যমে ১০ হাজার কর্মীকে পাঠানো হবে মালয়েশিয়ায়, টাকা ফেরত পাওয়া কর্মীদের দুই তালিকা
অনলাইন ডেস্ক: মালয়েশিয়া সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে দেশটিতে যেতে না পারা বাংলাদেশি কর্মীদের দুটি তালিকা করেছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এই দুই তালিকা অনুযায়ী সরকারি জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের (বোয়েসেল) মাধ্যমে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদের মালয়েশিয়া পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
গত বছরের মার্চে মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা ২০২৩ সালের ৩১ মার্চের পর নতুন করে আর কর্মীর চাহিদাপত্র ইস্যু করবে না। তবে এই সময়ের আগে ইস্যু করা চাহিদাপত্রে বিদেশি কর্মীরা ৩১ মে পর্যন্ত দেশটিতে প্রবেশ করতে পারবে, এই সময়ের পর আর কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
তবে সেই সময়সীমার মধ্যে প্রায় ১৭ হাজার বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি বলে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়। সে সময় তৎকালীন প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী দাবি করেছিলেন, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর গাফিলতির কারণেই মালয়েশিয়া যেতে পারেননি বাংলাদেশি কর্মীরা। অন্যদিকে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ আটাবের পক্ষ থেকে সে সময় বলা হয়, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো-বিএমইটি ও বায়রার মধ্যে সমন্বয়হীনতাই কর্মীদের মালয়েশিয়া যেতে না পারার কারণ।
জানা গেছে, মালয়েশিয়া যেতে না পারা সেই ১৭ হাজার কর্মীর মধ্যে প্রায় ৪ হাজারের মতো কর্মী পরবর্তী সময়ে ই-পাসপোর্টজনিত জটিলতা কাটিয়ে মালয়েশিয়া যেতে সক্ষম হয়েছে। বাকি ১৩ হাজার কর্মীর মধ্যে প্রায় ৩ হাজার কর্মীর মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কারণ তাদের নিয়োগদাতা কোম্পানিগুলো কালো তালিকাভুক্ত। বাকি যে ১০ হাজার কর্মী আছেন, তাদের এখন বোয়েসেলের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়। তাদের মধ্যে ৫ হাজারের বেশি কর্মী মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এজেন্টদের কাছ থেকে টাকা ফেরত পেয়েছেন। বাকিরাও যাতে টাকা ফেরত পায় সে জন্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, মালয়েশিয়া যেতে না পারা কর্মীদের দুটি তালিকা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে যাদের জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ছাড়পত্র ছিল এবং এজেন্সির থেকে টাকা ফেরত পেয়েছে তাদের নাম আছে প্রথম তালিকায়। আর যেসব কর্মী বিএমইটি ছাড়পত্র পাননি, তবে এজেন্সি টাকা পরিশোধ করেছে, তারা আছেন দ্বিতীয় তালিকায়। এর মধ্যে প্রথম তালিকায় থাকা কর্মীদের বোয়েসেলের ব্যবস্থাপনায় কম খরচে মালয়েশিয়া পাঠানোর চেষ্টা চলছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৪টি দেশ থেকে মালয়েশিয়া কর্মী নিলেও একমাত্র বাংলাদেশের কর্মীরাই অব্যবস্থাপনা ও প্রতারণার শিকার হয়েছে। এর জন্য দায়ী সিন্ডিকেট।
এদিকে প্রায় মালয়েশিয়া যেতে না পারা প্রায় ৫ হাজার কর্মী এজেন্সিকে দেওয়া তাদের টাকা ফেরত না পেয়ে উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন কালবেলাকে জানিয়েছে, তারা মন্ত্রণালয়ে কাগজপত্র জমা দিলেও টাকা বা এ সম্পর্কিত তথ্য পাচ্ছেন না। সরকারের কাছে তাদের অনুরোধ, সরকার যেন তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার এবং পুনরায় মালয়েশিয়ায় পাঠানোর ব্যবস্থা করে।
আলাউদ্দিন নামে ভুক্তভোগী এক কর্মী কালবেলাকে বলেন, ‘টাকা ফেরত পেতে আমরা ৬৭ জন একসঙ্গে মন্ত্রণালয়ে কাগজপত্র জমা দিয়েছি। আমরা প্রত্যেকেই ৫-৬ লাখ করে টাকা এজেন্সিকে দিয়েছি। এখন মন্ত্রণালয়ে এসেছি টাকা ফেরত নেওয়ার জন্য এবং পরবর্তী সময়ে পুনরায় মালয়েশিয়া যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য। তবে মন্ত্রণালয় থেকে এখন পর্যন্ত আমরা তথ্য পাচ্ছি না। হাজার হাজার বঞ্চিত ও প্রতারিত মালয়েশিয়াগামী কর্মী রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সরকারকে অনুরোধ করছি।’
এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের একান্ত সচিব সারোয়ার আলম কালবেলাকে বলেন, মালয়েশিয়াগামী যেসব কর্মী বিদেশে যেতে পারেননি, তাদের সংখ্যা ১৭ হাজারের মতো। তাদের মধ্যে সর্বশেষ কর্মীর সংখ্যা ১০ হাজারের মতো রয়েছে, যাদের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার লোক টাকা ফেরত নিয়েছে। বাকিদের টাকা ফেরত দেওয়ার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ বিষয়ে যদি কোনো এজেন্সি মিথ্যা তথ্য দেয়, তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় দুটি তালিকা ধরে এগোচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বঞ্চিত কর্মীদের প্রথমেই তালিকা অনুযায়ী টাকা ফেরত নিতে হবে। পরে এই তালিকা ধরে নতুন করে মালয়েশিয়ার লোক পাঠানোর চেষ্টা করা হবে। সম্ভবত, জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারির মধ্যেই উভয় দেশের মিটিং হবে। তখন যেসব কর্মীদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে বোয়েসেলের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় লোক পাঠানোর বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে পরিকল্পনা করছে। মালয়েশিয়াগামী প্রবাসী কর্মীরা যাতে কম খরচে কাজের সুযোগ পায় এবং পুনরায় এজেন্সির দ্বারা প্রতারণার শিকার না হয়, সেই বিষয়ে মন্ত্রণালয় সজাগ দৃষ্টি রেখেছে। তাছাড়া মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত করার জন্য সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে দ্রুতই সুসংবাদ পাওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে বঞ্চিত প্রবাসীরাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রথমে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য প্রাধান্য পাবে। সূত্র: কালবেলা অনলাইন ডেস্ক