অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে পুঁজিবাজার
অনলাইন ডেস্ক: দেশের পুঁজিবাজার ভীষণভাবে সংকুচিত। অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে এই খাত। এর কারণ হলো দীর্ঘদিন আমরা এ খাতে অদক্ষতা লালন করে আসছি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রয়োজনীয় সংস্কার জরুরি।
এক্ষেত্রে নেতৃত্বকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। সংবাদ সম্মেলনের বিষয় ছিল ‘পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি ও করণীয়’।
বাজারের পরিস্থিতি ও ডিএসইর পরিকল্পনা তুলে ধরতে মূলত সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম ও পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন, শাকিল রিজভী, ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান একেএম হাবিবুর রহমান প্রমুখ। এ সময় ১০ বছরে সংঘটিত অনিয়ম শনাক্ত করতে একটি নিরপেক্ষ ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং’ কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
মমিনুল ইসলাম বলেন, অতীতে অনেককিছু রেগুলেটরের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটি করতে গিয়ে অনেক অনিয়ম হয়েছে। অনেক সময় বাজারে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। আমরা বাজারে হস্তক্ষেপ করছি না। আগামী দিনেও করব না। বাজার বাজারের মতো চলবে। বিনিয়োগকারীদের আচরণের সঙ্গে বাজার চলবে।
তিনি বলেন, গত দেড় দশকে পুঁজিবাজারে সুশাসনের অবনতি সর্বনম্নি স্তরে গিয়েছে। দুই বছর ফ্লোর প্রাইস দেওয়াকে হঠকারী উলে্লখ করে তিনি বলেন, বাজারের বেসিক অবস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। এত পরিমাণ অনিয়ম হয়েছে, সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগবে। দ্রুত সমস্যার সমাধান করব, এত সক্ষমতা এখন আমাদের নেই। তিনি আশা করেন, ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যে ডিএসইর পরিকল্পনার অগ্রগতি সম্পর্কে একটি সম্যক ধারণা দেওয়া যাবে।
ডিএসইর পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেন, ডিমিউচুয়ালাইজেশন (স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা থেকে মালিকানা আলাদাকরণ) আইন পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বিনিয়োগ ও বাজারবান্ধব করতে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে। একই সঙ্গে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের নীতিমালা সংশোধন, বাজার পর্যবেক্ষণ সক্ষমতা বাড়িয়ে নজরদারি বাড়াতে কাজ চলছে। অন্তর্বর্তী সরকার পুঁজিবাজারবান্ধব উলে্লখ করে মমিনুল ইসলাম বলেন, আগামী বাজেটে করছাড়সহ পুঁজিবাজারের জন্য বেশকিছু সুবিধা আসবে।
দুই স্টক এক্সচেঞ্জ একীভূত নিয়ে আলোচনা : ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) একীভূত করার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন ডিএসই চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও ফিলিপাইনের মতো দেশে একটি স্টক একচেঞ্জ। কিন্তু বাংলাদেশে দুটি স্টক এক্সচেঞ্জ। এর যৌক্তিকতা নেই। দুটিকে একটা করলে বেশি দক্ষ ও কার্যকর (ইফিসিয়েন্ট) হয় কি না, তা আমরা দেখব। সিএসইর সঙ্গে আলোচনা করব।
ডিএসই চেয়ারম্যানের এ প্রস্তাবে তাত্ক্ষণিক কোনো বিরোধিতা না করে সিএসই চেয়ারম্যান একেএম হাবিবুর রহমান বলেন, গত অক্টোবরে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অদৃশ্য কোনো চাপ এখনো অনুভব করিনি। পুঁজিবাজার উন্নয়নে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে চাই।
মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, ১০ বছরে ডিএসইতে যেসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে, এর বেশির ভাগের অবস্থা খারাপ। দুর্নীতির মাধ্যমে এসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, ১০ বছরে যেসব শেয়ারের Èপ্রাথমিক গণপ্রস্তাব’ (আইপিও) এসেছে, এর উপর একটি বিশে্লষণ প্রয়োজন। ডিএসইর বর্তমান পর্ষদ পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রভাবমুক্ত মন্তব্য করে তিনি বলেন, এ বোর্ড আগারগঁাওয়ের (বিএসইসির কার্যালয়) প্রভাবমুক্ত। আগের কমিশন ৬০টি ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স দিয়ে জঞ্জালে পরিণত করেছে। তাদের অনেকেই এখন কাজ করতে পারছে না।
ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত পুঁজিবাজারে কী কী অনিয়ম হয়েছে, এর একটা খতিয়ান থাকা উচিত। ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি’ গঠন করা জরুরি। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি তার পূর্ণ ক্ষমতা ব্যবহার করে বাজার উন্নয়নে কাজ করবে এমন প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, এখন কমিশন মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভর করে কাজ করছে। যে কোনো বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলেই বলে দেওয়া হয়, ওমুক মন্ত্রণালয় বিষয়টি দেখবে। অথচ কমিশনকে পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
ডিআর জুলাইয়ে : ২০২৩ সালে ডিএসইর লেনদেন সফটওয়্যারে বড় ধরনের বিভ্রাট দেখা দেয়। সবশেষ গত সপ্তাহে লেনদেন দেড় ঘণ্টা পরে শুরু হয়। ডিএসইর সফটওয়্যার হালনাগাদ ও ব্যাক-আপ রাখতে ডিআর (ডেটা রিকভারি) চালু করার পরিকল্পনা করেছে জুলাইয়ের মধ্যে।
ডিএসই কর্মকর্তাদের দুর্নীতি চিহ্নিত করা হবে : ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, ডিএসইতে পর্ষদ সদস্যরা মিলে ভোটের মাধ্যমে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন। আমরা স্টক এক্সচেঞ্জ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখার চষ্টো করব। এর মাধ্যমে বাজারকে ভালো জায়গায় নিয়ে যেতে চাই। কারসাজির সঙ্গে জড়িত ডিএসইর কর্মকর্তাদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা নদীর মাঝখানে এসে জানতে পারছি নৌকার মাঝি দুর্নীতিগ্রস্ত।
এখন তাকে তো নেৌকা থেকে নামিয়ে দিতে পারব না। তীরে নিয়ে গিয়ে বিচার করা হবে। তিনি বলেন, ডিএসই কর্মকর্তাদের ইনসাইডার ট্রেডিং (ভেতরের তথ্য জেনে লেনদেন) বন্ধে প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হবে। আগে তাদের জবাবদিহি ছিল না। এখন দেখা হবে কার দায় কতটুকু ছিল। তবে হুট করেই নয়। একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিচার করা হবে।