সব পাঠ্যবই পেতে অপেক্ষা দীর্ঘ হচ্ছে
- প্রাথমিকে ৯ কোটি ৬৪ লাখ বইয়ের মধ্যে ছাড়পত্র হয়েছে ৪ কোটি ২৪ লাখ।
- মাধ্যমিকে ৩১ কোটি বইয়ের মধ্যে ছাড়পত্র ২ কোটি ৩৭ লাখ ৫১ হাজার।
অনলাইন ডেস্ক: শিক্ষাবর্ষের ছয় দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের নতুন পাঠ্যবই ছাপা ও বিতরণের অগ্রগতি কম। এর মধ্যে বাংলা মাধ্যমের শিক্ষার্থীর অনেকেই এক থেকে তিনটি করে বই পেলেও বিদ্যালয়গুলোতে ইংরেজি ভার্সনের বই যায়নি। বই ছাপার যে অগ্রগতি, তাতে সব শিক্ষার্থীর সব বই পেতে ফেব্রুয়ারি পেরিয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন ছাপার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এর ফলে সময়সূচি মেনে ক্লাস না হওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের শিখনঘাটতি হতে পারে।
শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এবার বিশেষ একটি পরিস্থিতির কারণে বই ছাপার কাজে দেরি হয়েছে। আগস্টের পর যখন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বই ছাপার প্রক্রিয়া পুরোপুরি চলে; এবার তখন শিক্ষাক্রম পরিবর্তন, পাঠ্যবই পরিমার্জন ও দরপত্র–সংক্রান্ত কাজগুলো হয়েছে। তাই এই বাস্তবতা মেনে এবার শিক্ষকদের বিশেষ দায়িত্ব পালন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের যাতে পড়াশোনায় সমস্যা না হয়, সে জন্য শিক্ষকদের উচিত এনসিটিবির ওয়েবসাইটে দেওয়া পাঠ্যবই সংগ্রহ করে নিয়মিত ক্লাস নেওয়া।
১ জানুয়ারি শুরু হয়েছে নতুন শিক্ষাবর্ষ। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সূত্রমতে, নতুন শিক্ষাবর্ষে চার কোটির মতো শিক্ষার্থীর জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের প্রায় ৪১ কোটি বই ছাপানো হচ্ছে। এর মধ্যে প্রাথমিকের মোট পাঠ্যবই ৯ কোটি ৬৪ লাখের মতো। ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ছাড়পত্র (প্রাক্–সরবরাহ পরিদর্শন বা পিডিআই) হয়েছে ৪ কোটি ২৪ লাখের মতো বই। অবশ্য ছাপা হয়েছে আরেকটু বেশি, ৪ কোটি ৮১ লাখের মতো। এর মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার অগ্রগতি অনেক ভালো; কিন্তু চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ৪ কোটি বেশি বইয়ের মধ্যে ১৬ শতাংশের মতো ছাড়পত্র হয়েছে।
মাধ্যমিকে (মাদ্রাসার ইবতেদায়িসহ) বইয়ের সংখ্যা ৩০ কোটি ৯৬ লাখের মতো। এনসিটিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত মাধ্যমিকের ২ কোটি ৩৭ লাখ ৫১ হাজারের মতো পাঠ্যবইয়ের ছাড়পত্র হয়েছে। তবে ছাপা হয়েছে মোট ৩ কোটি ৮১ লাখের মতো বই।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বাংলা মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা কিছু বই পেলেও ইংরেজি ভার্সনের শিক্ষার্থীরা এখনো নতুন বই পায়নি। সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের রাজউক উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প শাখায় ইংরেজি ভার্সনে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর সন্তান এখনো নতুন বই হাতে পায়নি।
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকে ইংরেজি ভার্সনের মোট পাঠ্যবই ৫ লাখ ৩৬ হাজারের বেশি। আর মাধ্যমিকে তা ২১ লাখ ৬৭ হাজারের মতো; কিন্তু গতকাল পর্যন্ত ইংরেজি ভার্সনের বইগুলো ছাপার কাজ শেষ হয়নি।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান ১ জানুয়ারি এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রাথমিকের বাকি সব বই, ১০ জানুয়ারির মধ্যে মাধ্যমিকের প্রায় আটটি বই এবং ২০ জানুয়ারির মধ্যে সব বই যাবে। এ লক্ষ্যে তাঁরা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
গতকাল এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যবই দিতে একটু সময় লাগছে। দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ১০ জানুয়ারি মধ্যে সব পাঠ্যবই দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য দশম শ্রেণির বই ছাপায় অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য শ্রেণির বই ছাপার কাজও চলতে থাকবে।
এবার বিশেষ পরিস্থিতির কারণে সব পাঠ্যবই দিতে দেরি হবে, সেটা বোঝাই যাচ্ছিল। এটা মেনে নেওয়া ছাড়া উপায়ও নেই। এখন শিক্ষকদের বড় দায়িত্ব পালন করতে হবে
অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
এনসিটিবির সূত্রমতে, অধিকাংশ লটের চুক্তির কাজ শেষে পুরোদমে ছাপার কাজ চলছে। তবে মাধ্যমিকে কিছুসংখ্যক বই ছাপার চুক্তির কাজও এখনো বাকি। প্রসঙ্গত, চুক্তি হওয়ার পর কমপক্ষে ৪০ দিন সময় পান মুদ্রণকারীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মুদ্রণকারী প্রথম আলোকে বলেন, এনসিটিবির হিসাবে প্রায় ৩৪ কোটি বইয়ের ছাড়পত্র বাকি। প্রতিদিন যদি গড়ে ৫০ লাখ করে বইয়ের ছাড়পত্র দেওয়া হয়, তাতেও আরও প্রায় ৬৮ দিন লাগতে পারে। এবার ছাপার কাজ যেমন দেরিতে শুরু হয়েছে, তেমনি এখন আবার কাগজের সংকটও দেখা দিয়েছে। কাগজের মিলগুলো রেশনিং করে কাগজ দিচ্ছে।
তবে এনসিটিবির শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, এখন শুধু বইয়ের সংখ্যা দিয়ে বিবেচনা করলে হবে না, ফর্মা দিয়ে হিসাব করতে হবে। সেই হিসাবে এখন ছাপার অগ্রগতি দ্রুত বাড়ছে।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এবার বিশেষ পরিস্থিতির কারণে সব পাঠ্যবই দিতে দেরি হবে, সেটা বোঝাই যাচ্ছিল। এবার এটা মেনে নেওয়া ছাড়া উপায়ও নেই। এখন শিক্ষকদের বড় দায়িত্ব পালন করতে হবে। ক্লাসের যেন সমস্যা না হয়, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় যাতে ঘাটতি না হয়, সে জন্য অনলাইন থেকে পাঠ্যবই সংগ্রহ করে শিক্ষার্থীদের পড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তাদেরও সহযোগিতা করতে হবে।সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো