সচিবালয়ে কঠোর নজরদারি
অনলাইন ডেস্ক: প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পর নজরদারি বেড়েছে। সতর্ক হয়ে নড়েচড়ে বসেছে অন্যান্য মন্ত্রণালয়, দপ্তর, সংস্থা। সচিবালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কার্যক্রমও বাড়ানো হয়েছে। নিজ প্রতিষ্ঠানের জন্য সর্বোচ্চ সর্তকর্তাসহ বিভিন্ন নিদের্শনাও জারি করেছে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ নথি নিরাপদে সংরক্ষণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গত ২৫ ডিসেম্বর সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুনের ঘটনার পর গতকাল ভবনটি খুলে দেওয়া হয়েছে। ৯ তলা ওই ভবনের পাঁচ তলা পর্যন্ত অফিস চালু হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গতকাল থেকে সেখানে অফিস করেছেন। আগুন লাগার পর থেকে উপদেষ্টা এবং সচিব ছাড়া অন্য কারও গাড়ি সচিবালয় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। গতকাল থেকে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বহন করা গাড়িও প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। পোড়া ভবন পরিদর্শন করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হামিদুর রহমান খান বলেন, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ফ্লোরের সংস্কার কাজ শেষ করতে ১০ থেকে ১২ দিন লাগবে। আমরা চেষ্টা করব যত তাড়াতাড়ি সংস্কার কাজ শেষ করা যায়। অগ্নিকান্ডের পর সচিবালয়ে প্রবেশ কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও সক্রিয় করা হয়েছে। দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়েছে। সচিবালয়ের এমন আগুনে অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানেও টনক নড়ে। এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনেরও নির্দেশনা দিয়ে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো তাদের আওতাধীন দপ্তর-সংস্থায় চিঠি পাঠিয়েছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে রাজউক, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, গণপূর্ত অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সরকারি আবাসন পরিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে ৫ নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়। সচিবালয়ে আগুন লাগার পরিপ্রেক্ষিতে সতর্ক থাকার জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাঁচটি নির্দেশনা দিয়েছে।
বৈদ্যুতিক সুইচ বন্ধ করাসহ গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র নিরাপদে সংরক্ষণের নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিভিন্ন অনুবিভাগ, অধিশাখা ও শাখা পর্যায়ের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহারের পর অফিস কক্ষের বৈদ্যুতিক সুইচগুলো বন্ধ করাসহ অফিসের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র নিরাপদে সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।
অফিস ত্যাগের আগে নিজ অফিস কক্ষের সব বৈদ্যুতিক সুইচ যথাসময়ে বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের জন্য নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ (মাউশি)। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ), বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস), প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডসহ অন্যান্য বোর্ডও সংশ্লিষ্ট অধীন প্রতিষ্ঠানে নির্দেশনার চিঠি পাঠানো হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ২৫ ডিসেম্বর রাতে আগুন লাগার ঘটনায় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের নথিপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিস ছয় ঘণ্টা চেষ্টার পরের দিন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও পুরোপুরি নিভতে সময় লাগে প্রায় ১০ ঘণ্টা।