বাণিজ্যমেলায় দর্শনার্থী বেশি, ক্রেতা কম
অনলাইন ডেস্ক: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচলে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার ২৯তম আসর শুরু থেকেই জমে উঠেছে। মেলার স্থায়ী প্যাভিলিয়ন বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার শুরু থেকেই প্রস্তুত ছিল। এ কারণে মেলার ৯৫ ভাগ স্টল নির্মাণ সম্পন্ন হয়ে গেছে শুরুর দিকেই।
এবারের আসরে ৩৬১টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এবার শুরু থেকেই বাণিজ্যমেলায় দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা গেছে। মেলার চতুর্থ দিন শনিবার ছুটির দিন হওয়ায় বিকাল থেকেই দর্শনার্থীরা প্রবেশ করতে শুরু করেন। মেলায় দর্শনার্থীর কমতি না থাকলেও কমতি ছিল ক্রেতার। বেশির ভাগ দর্শনার্থীই মেলার শেষের দিকে অতিরিক্ত ছাড়ের আশায় পণ্য কিনছেন না। ঘুরে দেখে, খেয়েদেয়ে চলে যাচ্ছেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাণিজ্যমেলা উপলক্ষ্যে পূর্বাচল সেজেছে অপরূপ রূপে। মেলার ভেতরে স্টলগুলোতে ক্রেতা আকৃষ্ট করতে ব্যবসায়ীরা লাল, নীল, হলুদ বাতিসহ নানা রংবেরঙের আলোকসজ্জা করেছেন। বিগত সময়ে ম্যানুয়াল টিকিটের কারণে ভোগানি্ত হলেও এবার মেলায় ই-টিকেটিংয়ের ব্যবস্থা থাকায় দর্শনার্থীরা স্বচ্ছন্দেই মেলায় প্রবেশ করতে পারছেন। বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ব্রান্ডের গৃহস্থালি সামগ্রী, প্রসাধনী, কাপড়, জুতা, খাবারের দোকান, ইলেকট্রনিক্স, ফার্নিচারসহ বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। বিগত বছরগুলোতে শুরুর দিকে দর্শনার্থীর সংখ্যা কম থাকলেও এবার অনেক বেশি। তবে ক্রেতার চেয়ে বেশি দর্শনার্থী হওয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা হতাশা প্রকাশ করেছেন। শনিবার বেশি ভিড় দেখা গেছে আইসক্রিম, কাপড় ও গৃহস্থালি পণ্যের দোকানে। শিশুদের জন্য করা শিশুপার্কেও ভিড় দেখা গেছে।
মেলার প্যাভিলিয়নে যমুনা ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড অটোমোবাইলস লিমিটেডের ম্যানেজার রাজিব সাহা বলেন, বিগত বছরের মতো এবারও বাণিজ্যমেলায় আমাদের উত্পাদিত পণ্যসামগ্রী নিয়ে এসেছি। রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনার, মোটরসাইকেলের পাশাপাশি বেশ কিছু নতুন সাইজের টেলিভিশন এবার মেলায় এনেছি। যমুনা ইলেকট্রনিক্স সব সময় ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে পণ্য বাজারে আনে। বিদেশি যত উন্নত প্রযুক্তি আছে, সেগুলো মাথায় রেখে আমাদের কোম্পানি নিজস্ব কারখানায় আধুনিক পণ্য তৈরি করছে। তিনি আরও জানান, মেলায় যমুনার অনেক পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, মেলায় চতুর্থ দিন ছুটির দিন হওয়ায় দর্শনার্থীর সংখ্যা বেশ ভালো ছিল। শুরুর দিকে প্রত্যাশার চেয়ে তিনগুণ দর্শনার্থীর সমাগম হয়েছে। এবার ইপিবি আগে থেকে স্টল বরাদ্দ দেওয়ায় সিংহভাগ দোকান আগেভাগেই নির্মাণ শেষ হয়েছে। তবে এত দর্শনার্থী থাকার পরও তাদের বেচাবিক্রি তেমন ভালো হচ্ছে না। বিক্রি কম হওয়ার অন্যতম কারণ হিসাবে তারা মনে করছেন তীব্র শীত ও মালামাল নেওয়ার ক্ষেত্রে পরিবহণের ঝামেলা। মেলার অবস্থান ঢাকা থেকে দূরে হওয়ায় অনেকে পরিবহণের ভোগানি্তর কথা চিন্তা করে মালামাল কিনছেন না। এত দর্শনার্থী থাকার পরও যদি বিক্রি ভালো না হয় তাহলে আমাদের লোকসান গুনতে হবে।
কথা হয় জীবন নামে এক জুতা ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তিনি বলেন, মেলায় অনেক দর্শনার্থীর সমাগম হয়েছে। যেটি অত্যন্ত ভালো দিক। কিন্তু দর্শনার্থী থাকলেও বিক্রি হচ্ছে না তেমন একটা। বিক্রি কয়েকদিন পর থেকে বাড়বে বলে আশা করছি।
কথা হয় ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড প্যাভিলিয়নের ইনচার্জ বাপ্পী চেৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, অন্যান্য বারের চেয়ে এবার মেলা অনেক বেশি গুছানো হয়েছে। আমাদের কোম্পানি এখানে মূলত বিক্রির চেয়ে নিজেদের ব্রান্ডের প্রচারকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে মেলায় অংশগ্রহণ করে। মেলায় এবার শুরু থেকেই দর্শনার্থীরা আসছেন, এটা অত্যন্ত ভালো দিক।
কথা হয় উত্তরা থেকে আসা কাওসার মিয়া নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি বলেন, চতুর্থবারের মতো পূর্বাচলে মেলার আসর বসেছে। আমি এবারই প্রথম মেলায় ঘুরতে এসেছি। বাসার জন্য কিছু ফার্নিচার ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য কেনার ইচ্ছা ছিল। এখান থেকে মালামাল নিয়ে যেতে ঝামেলার কথা চিন্তা করে আর নিচ্ছি না। মালামাল নেওয়ার জন্য পিকআপ, ট্রাক পাওয়া যাবে না এখানে। তাই ঝামেলা বাড়াচ্ছি না। কথা হয় বাড্ডা থেকে আসা মিনা আক্তারের সঙ্গে। তিনি ও তার স্বামী ঘুরতে এসেছেন। মেলায় কী কী পণ্যসামগ্রী উঠেছে তা দেখতে এসেছেন। কয়েকদিন পর এসে কিনে নিয়ে যাবেন।
মেলায় প্রবেশের টিকিট ইজাদার ডিজি ইনফোটেকের হেড অব অপারেশন আমিনুল ইসলাম হূদয় বলেন, শীত ও ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে শুক্রবার ২৬ হাজার ৯৭৫ জন এবং শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২১ হাজার ৯শ দর্শনার্থী মেলায় প্রবেশ করেন।