দেশে নব্য ফ্যাসিবাদ আবার চেপে বসেছে: জিএম কাদের
নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, দেশে নব্য ফ্যাসিবাদ আবার চেপে বসেছে। হত্যাকাণ্ডের বিচারের নামে প্রহসন চলছে। তিনি আরও বলেন, যে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমরা সংগ্রাম করলাম, আবার সেই ফ্যাসিবাদ দেখতে পাচ্ছি। আমার মনে হয়, একটি মুক্তিযুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠছে। সভা-সমাবেশ করার অধিকার আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার, অহিংসভাবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পালন করব, এটা আমাদের অধিকার। আমরা একটি রাজনৈতিক নিবন্ধিত দল, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করার অধিকার আমাদের আইনগত অধিকার। যদি কেউ হুমকি দিয়ে থাকে, রাষ্ট্রের দায়িত্ব ছিল নিরাপত্তা নিশ্চিত করার, রাষ্ট্র সেটি পালন করছে না।
গতকাল বুধবার (১ জানুয়ারি) দলটির ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে কাকরাইলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় জিএম কাদের এ কথা বলেন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে রাজধানীর আইডিইবি মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল দলটি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুমতি না পেয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত কর্মসূচি আয়োজন করা হয়। সভা শেষে একটি র্যালি বের হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
জিএম কাদের বলেন, আমি মনে করি, কেউই নিরাপদ নই। কে কখন কীভাবে ফ্যাসিবাদের দোসর হয়ে যাবেন, বলতে পারবেন না। যেভাবে দেশকে বিভক্ত করেছে, সুষ্ঠু নির্বাচন করা আপনাদের পক্ষে কতটা সম্ভব, প্রশ্ন রয়েছে। আপনারা সংস্কার দিতে সক্ষম হবেন না। সংস্কার করতে গেলে জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, আমরা প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সমর্থন দিয়ে মেনে নিলাম। আমরা সবাই তাকে সমর্থন দিলেও তিনি আমাদের মেনে নেননি। বিভাজন করে রাখলেন, একটি ফ্যাসিস্ট পক্ষের শক্তি, আরেকটি বৈষম্যবিরোধী। তারা ধরে নিলেন বিগত ১৬ বছর যারা নির্যাতিত হননি, তারা ফ্যাসিস্ট শক্তির দোসর। এভাবে এক ভাগকে আরেক ভাগের ওপর স্থাপন করলেন। যাদের দোসর আখ্যায়িত করা হলো, তাদের বিনা বিচারে নির্যাতন, তাদের হয়রানি করা, মামলা দেওয়া, তাদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে।
জিএম কাদের বলেন, আমরা আশা করেছিলাম পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সবাইকে নিয়ে বসে দেশ পরিচালনা করবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কিন্তু বিভাজন তৈরি করা হচ্ছে। আমাদের দেশে কোনো সরকার ক্ষমতা ছেড়ে যেতে চায় না, এর অন্যতম কারণ কোনো সরকার ক্ষমতা ছাড়ার পর স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকতে পারে না।
তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যের নামে নিবন্ধিত ৪৮ দলের মধ্যে ১৮টি দলকে বৈঠকে ডাকলেন, ৩০টি দলকে বাদ দিলেন। প্রায় ৫০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে বাইরে রেখে ঐক্য হয় না। আমরা সর্বাÍক সহযোগিতা করার পরও ডাকা হলো না। সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে জাতীয় পার্টির গণতান্ত্রিক অধিকার বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য তিন মাস ধরে কারাগারে। আরেকজন নেতাকে মিথ্যা হত্যা মামলা দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার-অনাচার করা হচ্ছে। আমরা এটাকে ফ্যাসিবাদ দেখছি। নব্য ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আমার মনে হয়, আরেকটি আন্দোলনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হচ্ছে।
জিএম কাদের বলেন, বলা হচ্ছে আগে আমরা হত্যার বিচার করব, তারপর নির্বাচন। দেশে হত্যার বিচারের নামে প্রহসন করা হচ্ছে। তারা যাদের দোসর মনে করছে, তার নামেই মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। বিচারের ক্ষেত্রে বলা হয় ১০ জন দোষী ছাড়া পেয়ে গেলেও একজন নির্দোষ লোক যেন সাজা না পায়। আমরা দেখছি উলটো। প্রতিহিংসার আগুন ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিপক্ষকে ফাঁসানো হচ্ছে। আশঙ্কা হয়, প্রতিপক্ষকে নির্মূল করাই সমাধান, তাহলে কি ৫০ ভাগ লোককে নিশ্চিহ্ন করা হবে। তাদের যেনতেনভাবে ফাঁসি দেওয়া হবে। পাকিস্তান চেয়েছিল তারা পারেনি, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ব্যক্তিগত শত্রুতার পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এসব বিচার করতে ৫ থেকে ১০ বছর সময় লাগতে পারে, হত্যার বিচার বলে কালক্ষেপণ করার কোনো সুযোগ নেই।
এ সময় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমরা শান্তিতে বিশ্বাসী। সভা করার জন্য ডিএমপির কাছে আবেদন দিয়েছিলাম। তারা মৌখিকভাবে অনুমতি দেয়। পরে অনুমতি বাতিল করা হয়। ১ হাজার ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছে গণতন্ত্রের জন্য। এরই ফল আজকের সরকার; কিন্তু আমরা কেন এ কর্মসূচি করতে দেওয়া হলো না।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে এ পতাকা থাকত না। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছি। যার যে অবদান, তা স্বীকার করতে হবে।