পুরোনো বিপিএলই নতুন মোড়কে
অনলাইন ডেস্ক: মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের যেখানে-সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ময়লা-আবর্জনা। মাঠে নেই স্পাইডার ও বাগি ক্যামেরা। টিকিট নিয়ে হয়েছে জলঘোলা, হাতাহাতি এমনকি স্টেডিয়ামের ফটক ভাঙার মতো ঘটনা। এসব নিয়েই গতকাল শুরু হয়েছে একাদশ বিপিএল। কিন্তু এবার তো এমন হওয়ার কথা ছিল না।
বিসিবি শুরু থেকেই এবার সমর্থকদের নতুন কিছুর স্বাদ দিবে বলে প্রতিজ্ঞা করেছিল। তবে দেখা গেল দেশের ক্রিকেট সংস্থাটির সেই প্রতিজ্ঞা মুখের বুলিতেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। বাস্তবে অবস্থা বেশ শোচনীয়। উদ্বোধনী ম্যাচে টসের সময়ে এক দলের অধিনায়ক তো অনুশীলন জার্সি পরেই হাজির। তাতে ‘বিপিএল হবে আর সমালোচনা থাকবে না’ কথা থেকে বের হতে পারেনি বিসিবি।
যদিও গতকাল উদ্বোধনী ম্যাচে ফরচুন বরিশাল-দুর্বার রাজশাহী প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচ উপহার দিয়েছে। ২০০ রান ছোঁয়া ব্যবধান ভেদ করেছে গেলবারের চ্যাম্পিয়ন দল বরিশাল। চার-ছক্কায় মুখোরিত হয়েছে গ্যালারি। স্বস্তি কেবল এখানেই। বাকি জায়গাতে নাজুক অবস্থা। রাজশাহীর অধিনায়ক এনামুল হক বিজয় যখন টসের জন্য মাঠে এসেছিলেন তখন তার গায়ে ছিল অনুশীলন জার্সি। জানা গেল, তখনো দলের হাতে এসে পৌঁছায়নি মূল জার্সি। তাই বাধ্য হয়ে অনুশীলন জার্সি পরেই এসেছেন। ম্যাচ শেষে এই বিষয়ে তেমন মুখ খুলতে চাননি তিনি। কেবল জানিয়েছেন সবকিছু ইতিবাচকভাবে দেখছেন।
এবারের বিপিএল শুরুর আগে থেকেই ময়লা-আবর্জনার বিষয়ে বিশেষ সচেতন থাকতে দেখা গিয়েছিল বিসিবিকে। বিসিবি পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম জানিয়েছিলেন, অন্যবারের তুলনায় ময়লা-আবর্জনা কম হবে। গ্যালারির একটি অংশ থাকবে যেখানে কোনো ময়লা থাকবে না। ‘জিরো ওয়েস্ট জোন’ ঘোষণা দেওয়া সেই অংশটিতে গিয়ে ভিন্নতা দেখা যায়নি। অন্য স্থানের মতো সেখানেও যত্রতত্র আবর্জনা পড়ে থাকতে দেখা গেছে। স্টেডিয়ামের এক নম্বর ফটক দিয়ে ঢুকেই চোখে পড়লো পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি অস্থায়ী। বুথ বসানো হয়েছে। পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখতে বিভিন্ন লিফলেট ও তথ্য তারা প্রচার করছেন। কিন্তু দর্শকদের মধ্যে সেটি নিয়ে তেমন আগ্রহ দেখা গেল না। পাশেই ছয়টি ডাস্টবিন রাখা হয়েছে। কিন্তু সেগুলো ব্যবহার করছেন না তেমন কেউ।
এছাড়া বিসিবি আগেই জানিয়েছিল টুর্নামেন্টের শুরু থেকে স্টেডিয়ামের বিভিন্ন অংশে ‘মুগ্ধ পানি কর্নার’ রাখা হবে। সেখানে খেলা দেখতে আসা দর্শকরা বিনামূল্যে পানি পাবেন। উদ্বোধনী দিন থেকেই প্রতিশ্রুতি অনুসারে সেটি ছিল, তবে তার আশপাশে স্তূপ করে রাখা হচ্ছে পানি খাওয়ার ওয়ান টাইম গ্লাস ও প্লাস্টিকের বোতল। দুই-একটি ডাস্টবিন থাকলেও তা ব্যবহার হয় প্রয়োজনের তুলনায় কম। তাতে আবর্জনা আরো বেশি হচ্ছে। পরিষ্কার করার জন্য কয়েক জনকে দেখা গেলেও সংখ্যায় সেটি অপ্রতুল। এ দিকে খাবারের মানে সন্তুষ্টি না এলেও দাম ছিল তুলনামূলক কম। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়ায় ইচ্ছামতো দাম রাখার সুযোগ তারা পাচ্ছেন না। এর বাইরে বিপিএলের প্রথম দিনে স্পাইডার ও বাগি ক্যামেরার দেখা মেলেনি। গেল বিপিএল সম্প্রচারের ক্ষেত্রে এই ক্যামেরাগুলো রাখা হয়েছিল।
যা নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট ছিল দর্শকরা। তবে মাঠে বসানো হয়েছে ডিজিটাল বিজ্ঞাপন বোর্ড, যা খেলার সৌন্দর্য কিছুটা বাড়িয়েছে। সবমিলিয়ে বিভিন্ন দৈন্য দশার মধ্য দিয়েই শুরু হয়েছে এবারের বিপিএল। যেখানে টিকিট নিয়ে বিসিবির অব্যবস্থাপনা বেশ ভুগিয়েছে প্রথম দিনের দর্শকদের। বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ জানিয়েছিলেন এবার ভিন্ন বিপিএল হবে, নতুন বিপিএল হবে। উদ্বোধনী দিনে তার কথার সঙ্গে মাঠের বিপিএলের মিল তেমন একটা পাওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত মিল টানার অনুষঙ্গ পাওয়া যায় কিনা, সেটি দেখতেই সবাই মুখিয়ে আছে।