জুলাই গণআন্দোলনে মানবতাবিরোধী অপরাধ

শেখ হাসিনার মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ পর্যায়ে

অনলাইন ডেস্ক: সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ পর্যায়ে। প্রসিকিউশনের ৪৭তম সাক্ষী হিসেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম। সাক্ষ্য শেষে তাকে জেরা করছেন আসামি পক্ষের রাষ্ট্রনিযুক্ত কৌঁসুলি।

রবিবারও জেরা চলবে। নাহিদ ইসলামের জেরা শেষে এই মামলায় সাক্ষ্য দেবেন তদন্ত কর্মকর্তা। তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য প্রদান ও জেরা শেষে মামলাটি যুক্তিতর্ক পর্যায়ে যাবে। যুক্তিতর্ক শেষ হলে রায় ঘোষণার জন্য দিনক্ষণ নির্ধারিত করবেন বিচারপতি মো. গোলাম মূর্তজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট গাজী এম এইচ তামিম ইত্তেফাককে বলেন, ৪৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত হয়েছে। জব্দ তালিকার দই-একজন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেবেন। এরপরই মামলাটি যুক্তিতর্ক পর্যায়ে যাবে। যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের জন্য দিন ধার্য করবে ট্রাইব্যুনাল।

উচ্চ আদালতের রায়ে সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহাল হওয়ায় আন্দোলনে নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তারা আওয়ামী লীগ সরকারকে সময় বেঁধে দেয় কোটা পদ্ধতি সংস্কারের জন্য। কিন্তু সরকার তাতে সায় দেয়নি। একপর্যায়ে কোটা আন্দোলন রূপ নেয় সরকার পতনের আন্দোলনে। আন্দোলন দমাতে ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালায়। এতে বিপুলসংখ্যক মানুষের প্রাণহানি হয়। গুরুতর আহত হন ২৫ হাজারের বেশি মানুষ। তীব্র গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট দেশত্যাগ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পালিয়ে যান আওয়ামী লীগ সরকারের অনেক মন্ত্রী, এমপি ও দলীয় নেতারা।

ঐ বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের যাত্রার পর পুনর্গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্তে নিয়োগ দেওয়া হয় তদন্ত কর্মকর্তা। গঠিত হয় প্রসিকিউশন টিমও। জুলাইয়ের মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ পেয়ে ট্রাইব্যুনালে বিবিধ মামলা করেন চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এম তাজুল ইসলাম। দুটি মামলায় প্রাথমিক অপরাধের উপাদান পেয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৭ অক্টোবর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। তদন্ত শেষে গত ১২ মে শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে এম আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত সংস্থা।

অভিযোগ আমলে নিয়ে গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনাসহ তিন জনের বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। ৩ আগস্ট চিফ প্রসিকিউটরের সূচনা বক্তব্যের পরই সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। খোকন চন্দ্র বর্মন যিনি যাত্রাবাড়ী এলাকায় ৫ আগস্ট পুলিশের গুলিতে গুরুতর জখম হন তিনি প্রথম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন। গত দেড় মাসে ৪৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য দিয়েছেন। জুলাই আন্দোলনকালে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনে দায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি দিতে ট্রাইব্যুনালে আবেদন জানিয়েছেন সাক্ষীরা। আসামি থেকে রাজসাক্ষী হয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনও।

Related Articles

Back to top button