ডাকাতি হত্যা দস্যুতা বাড়ছেই
অনলাইন ডেস্ক: দেশে খুন, ডাকাতি, দস্যুতা বেড়ে যাওয়ায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগজনক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এসব আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে মানুষের মধ্যে। লেক, নদী বা খোলা মাঠ থেকে উদ্ধার হচ্ছে লাশ। যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযান, র্যাব-পুলিশের তৎপরতাও কাজে আসছে না।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনে সামাজিক অস্থিরতা, রাজনৈতিক বিরোধ, আর্থিক টানাপড়েনের সঙ্গে রয়েছে হতাশা, পূর্বশত্রুতা, ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। পাশাপাশি পেশাগত অপরাধীদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অভ্যন্তরীণ সংকটে পড়া পুলিশের কাজের ধীরগতি।
সর্বশেষ গতকাল চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে নোঙর করে রাখা একটি জাহাজে পাঁচজনের গলা কাটা লাশ উদ্ধার করেছে নৌ পুলিশ। এ ছাড়া সেখান থেকে গুরুতর আহত তিনজনকে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে আরো দুজন মারা যান। এর আগে গত বৃহস্পতিবার কেরানীগঞ্জে ব্যাংকে ঢুকে কর্মকর্তাদের জিম্মি করে ১৮ লাখ টাকা ডাকাতির চেষ্টায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।
পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে দস্যুতার মামলা হয়েছিল ২১২টি।
চলতি বছর হয়েছে ২৩১টি। গত বছর ডাকাতির মামলা হয়েছিল ৪৩টি। এ বছর দুই মাসে ডাকাতির মামলা হয়েছে ১১১টি, যা আগের বছরের তুলনায় ৬৮টি বেশি।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছরের নভেম্বর মাস পর্যন্ত দেশে তিন হাজার ৮০৪টি হত্যাকাণ্ড হয়েছে। এর মধ্যে ডিএমপিতে ৫১৪টি হত্যা মামলা হয়।
চলতি বছরের (জুলাই-নভেম্বর) পর্যন্ত সারা দেশে হত্যা মামলা হয় দুই হাজার ২৭১টি।
পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সারা দেশে খুনের শিকার হয়েছেন ৫৮৩ জন, অক্টোবর মাসে ৩৯৯ জন ও নভেম্বরে ৩৩৭ জন। ২০২৩ সালের এই তিন মাসে খুনের ঘটনা আরো কম ছিল। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে খুন হয়েছিল ২৩৮ জন, অক্টোবরে ২৫৮ জন ও নভেম্বরে ২২৭ জন। একই সময়ে ঢাকায় চলতি বছরের নভেম্বরে খুনের মামলা হয়েছে ৫৫টি, অক্টোবরে ৫৭টি ও সেপ্টেম্বরে ১৪৮টি। ২০২৩ সালের এই সময়ে খুনের ঘটনায় মামলা ছিল যথাক্রমে নভেম্বরে ১৭টি, অক্টোবরে ১৯টি ও সেপ্টেম্বরে ১২টি।
তবে ডিএমপির মুখপাত্র ও ডিসি মিডিয়া মোহাম্মদ তালেবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, চলতি বছরের নভেম্বরে রাজধানীতে ২৭টি ও অক্টোবরে ২১টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া সেপ্টেম্বর মাসে ৪৭টি খুনের ঘটনা ঘটে।
সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অপরাধপ্রবণতা বাড়ে-কমে। পুলিশের পরিসংখ্যানে যদি বাড়ার বিষয়টি দেখা যায় তা হলে বেড়েছে বলেই ধরে নিতে হবে।’
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর কালের কণ্ঠকে বলেন, অপরাধ কখনো বাড়ে, আবার কখনো কমে। এটি একটি স্বাভাবিক প্রবণতা। অপরাধের যেসব কারণ, সেগুলোকে সামাজিকভাবে ও ফৌজদারি বিচারের মাধ্যমে মোকাবেলা করা হয়। অপরাধের মাত্রা কমিয়ে আনার পাশাপাশি অপরাধীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পুলিশ তৎপর।
ঢাকায় ছিনতাই বেড়েই চলেছে
গত ১৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুর শেখেরটেকের ৬ নম্বর সড়ক দিয়ে কোচিং সেন্টার থেকে বাসায় ফেরার পথে হাসিব নামের এক তরুণকে ব্যস্ত সড়কেই ধারালো অস্ত্র ঠেকিয়ে চার ছিনতাইকারী তার মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। ছিনতাইকারীরা তাকে মারধরও করে। এর এক দিন আগে ১৬ ডিসেম্বর হাতিরঝিল এলাকায় ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে মো. রাকিব নামের এক গার্মেন্টসকর্মী নিহত হন।
এ বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকার ছিনতাইপ্রবণ এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করে কারা ছিনতাই করে তাদের চিহ্নিত করছি। তাদের আইনের আওতায় আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।’
ফুট প্যাট্রল, গাড়িতে প্যাট্রল ও মোটরসাইকেল প্যাট্রল অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন শীতের রাত, গভীর রাতেও ছিনতাই হচ্ছে। বিশেষ করে দূরপাল্লার যেসব গাড়ি ঢাকায় আসছে সেসব গাড়ির যাত্রীরা ছিনতাইয়ের কবলে পড়ছে।
তিনি আরো বলেন, মোবাইল প্যাট্রলগুলো যেন ঠিকঠাক মতো চলে, তা নিশ্চিতে পুলিশের প্রতিটি বিভাগের ডিসি, এডিসি ও এসিকে নজরদারি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রতি রাতে তাঁরা গাড়ি নিয়ে তদারকি করছেন। এ ছাড়া ডিএমপি কন্ট্রোলরুম থেকে ওয়্যারলেসে প্যাট্রলগুলোর লোকেশন নেওয়া হচ্ছে এবং তারা সজাগ আছে কি না সেটিও তদারকি করা হচ্ছে।
বেড়ে চলেছে খুন
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সম্প্রতি খুনের সংখ্যা বাড়ছে। গত ১৮ ডিসেম্বর যশোরের শার্শা সীমান্ত এলাকা থেকে তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। একই দিন ঢাকার অদূরে পূর্বাচলের একটি লেক থেকে দুই তরুণ-তরুণীর লাশ উদ্ধার করা হয়। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম ও মুন্সীগঞ্জ থেকে পৃথক দুই ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। ১৬ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জে দুই যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।