মৌসুমীর সঙ্গে জনপ্রিয় তারকা দম্পতির সন্তান, ছবিটিও তুলেছেন এক নায়িকা
অনলাইন ডেস্ক: হাস্যোজ্জ্বল মৌসুমী মেতে উঠলেন তিন শিশুকে নিয়ে। একসঙ্গে তিন বাচ্চাকে সামলানো মুশকিল। আদর-ভালোবাসা দিয়ে দুরন্ত তিন শিশুকেই শান্ত করলেন। ছুটতে থাকা শিশুরা হঠাৎ ঘিরে ধরল এই নায়িকাকে। মৌসুমীকে শিশুদের ঘিরে ধরার মুহূর্তটি দেখে আরেক নায়িকা দৌড়ে বাসায় আসেন। উদ্দেশ্য ক্যামেরা নিয়ে এসে মুহূর্তটি ফ্রেমবন্দী করা।
তিনি সফল হয়েছিলেন। সেই ছবিটিই বেশ কয়েক দিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। কিন্তু ছবিটি দেখে অনেকেই ধাঁধায় পড়ে গিয়েছেন। কারণ, সেই সময়ে মৌসুমীর একমাত্র সন্তান ফারদিনের জন্ম হয়েছে। তাহলে পাশের দুটি শিশু কে?
ফেসবুকের বেশ কিছু গ্রুপে ছবিটি নিয়ে ভক্তদের নানা রকম মন্তব্য। কেউ লিখেছেন, অমিত হাসানের সন্তান, কেউ লিখেছেন নাঈম-শাবনাজ, বাপ্পারাজসহ অনেকের কথা। জানা গেল, মৌসুমীর পাশের দুই শিশু নাঈম-শাবনাজ দম্পতির মেয়ে। ছবিটি নিয়ে শাবনাজের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, মৌসুমীর কাছে তাঁর দুই মেয়ে। সময়টা ২০০১ সাল।
শাবনাজ বলেন, ‘আমার বড় মেয়ে তখন খুবই চঞ্চল। আর ছোটটা তো মাত্র ৯–১০ মাসের হবে। সে চুপচাপ মৌসুমীর কোলেই ছিল। কিন্তু বড় মেয়ে খুব চঞ্চল হওয়ায় ছুটে বেড়াচ্ছিল। ফারদিনের সঙ্গে খেলছিল। একসময় দেখলাম, সে মৌসুমীর পাশে শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে, ছোট মেয়ে মৌসুমীর কোলে। তার পাশে ফারদিন। তখন দ্রুত ক্যামেরা এনে ফ্রেমবন্দী করি।’
সেই সময় দুই দম্পতির ওপর ফিচার ছাপা হয়। তাঁর জন্য নাঈম-শাবনাজ ও ওমর সানী-মৌসুমী দম্পতির একসঙ্গে ছবি তোলার প্রয়োজন ছিল। তখন মৌসুমীরা এসেছিলেন নাঈম-শাবনাজদের বাসায়। শাবনাজ বলেন, ‘আমি কিন্তু নিয়মিত ছবি তুলি না। কিন্তু যখন ভালো কোনো মুহূর্ত পেতাম, সেটা নিজেই ফ্রেমবন্দী করে রাখতাম। অনেক সহকর্মীর ছবি তোলা আছে। বাবার কাছ থেকে ছবি ওঠানো শেখা।’
পরিবারের সঙ্গেই সময় কাটে ওমর সানী ও মৌসুমীর। মেয়ে ফাইজার সঙ্গে ওমর সানি ও ছেলে ফারদিনের সঙ্গে মৌসুমী
পরিবারের সঙ্গেই সময় কাটে ওমর সানী ও মৌসুমীর। মেয়ে ফাইজার সঙ্গে ওমর সানি ও ছেলে ফারদিনের সঙ্গে মৌসুমী
এই নায়িকা আরও বলেন, ‘বাবার কাছ থেকেই শেখা স্মৃতিকে ধরে রাখা। বাবা গোছানো ও পরিপাটি অবস্থায় আমার কোনো ছবি তুলতেন না। যখন দেখতেন স্বাভাবিকভাবে বের হচ্ছি বা বাসায় কোনো কাজ করছি, তখন বাবা ছবি তুলতেন। সেভাবেই মৌসুমীর সঙ্গে তিন শিশুকে দেখেই ছবি তোলা। অনেকেই মনে করে, এটা সাজানো–গোছানো ছবি। আসলে যেভাবে পেয়েছি, সেভাবেই তুলেছি। ছবিটা এখনো আমার পছন্দের একটি ছবি।’
কথায় কথায় নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় এই নায়িকা ফিরে গেলেন অতীতে, সিনেমার ব্যস্ত দিনগুলোতে। যখন তারকাদের মধ্যে সম্পর্ক ছিল আন্তরিকতার। তাঁরা নিজেদের পাশাপাশি পরবর্তী প্রজন্মের কথাও ভাবতেন। শাবনাজ বলেন, ‘তখন এমন একটা সময়, আমি আর নাঈম সিনেমা থেকে সরে আসছি। কিন্তু মৌসুমী ও ওমর সানী তখনো নিয়মিত কাজ করছে। তারাও জনপ্রিয়। কিন্তু একসঙ্গে ছবি তোলার কথা বলা হলে মৌসুমী কিন্তু না বলতে পারত, আমিও না করতে পারতাম। আমরা সেটা করিনি। আমরা সব সময় আন্তরিকতার সঙ্গে থেকেছি, শুধুই এটাই চেয়েছি পরবর্তী প্রজন্মকে উৎসাহ দিতে, তাদের মধ্যেও যেন মিল মহব্বত ও যোগাযোগ ভালো থাকে। আমাদের দেখে তারা ভালো ধারণা পাবে, এটাই চাইতাম।’
‘চাঁদনী’ সিনেমা দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন নাঈম-শাবনাজ। সেই সময় থেকেই গত তিন দশকের বেশি সময় সহকর্মীদের সঙ্গে এখনো আগের মতোই সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। এখনো তাঁরা নিয়মিত যোগাযোগ করেন, আড্ডা দেন। শাবনাজ বলেন, ‘আমাদের সম্পর্কে প্রফেশনাল কোনো কিছু নেই। আমাদের মধ্যে আত্মিক সম্পর্কটাই বেশি ছিল। বন্ধুত্বটা রক্ষা করে চলেছি। কখনোই কাউকে নিয়ে কোনো বাজে মন্তব্য করিনি। সেই ৩০ বছর ধরে বাপ্পারাজ, মৌসুমী, ওমর সানী, নাঈম, আমিন খান, সম্রাট, অমিত হাসানসহ আরও অনেকেই মিলে নব্বইয়ের দশকের একটা গ্রুপ আমরা। কর্মক্ষেত্র থেকে এই বন্ধুরাও কিন্তু পরিবারের মতোই। কয়েক দিন আগেই আলমগীর ভাইয়ের জন্মদিনে আমরা গেলাম। তিনি পছন্দ করে বলেই তো সবার যাওয়া।’
তবে এই সময়ে সম্পর্কগুলোর মধ্যে পেশাদারত্ব বেশি মনে করেন শাবনাজ। যে কারণে হয়তো অনেক অভিনয়শিল্পীদের বন্ধুত্ব তৈরি হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘অনেকের ফেসবুক স্ট্যাটাস বা অনেকের প্রসঙ্গে প্রায়ই জানা যায়, একা আছেন। কেউ কেউ ইগো ধরে রাখছেন, অন্যের সঙ্গে মিশছেন না। এগুলো দেখলে বা শুনলে খারাপ লাগে। কর্মক্ষেত্রেও তো বন্ধুর দরকার আছে। সেটা তৈরি করাটা খুবই প্রয়োজন। এই যে আমরা নব্বইয়ের দশকের শিল্পীরা এখনো এক জায়গায় হলে সেই সময়ে ফিরে যাই, হাসি ঠাট্টা করি, একসঙ্গে দুটো ডাল–ভাত খাই, এটা দিন শেষে প্রশান্তি দেয়। এগুলোই স্মৃতি হয়ে থাকে।’