সমুদ্র সৈকতে মুক্ত বিহঙ্গ নারী ফুটবলাররা

অনলাইন ডেস্ক: বাংলাদেশের সাফ নারী চ্যাম্পিয়ন ফুটবলাররা ছিলেন একেবারে অজ পাড়াগাঁয়ের মেয়ে। গ্রামে পর্দার ভেতরে ছিল তাদের জীবন। সেই মেয়েদের জীবন বদলে দিয়েছে ফুটবল। খোলা আকাশে মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়ে বেড়াচ্ছেন এখনকার নারী ফুটবলাররা। নেই কোনো বাধা, জীবন আনন্দ সবকিছু বদলে গেছে। ফুটবল খেলতে এসে জীবনে কত কিছু দেখেছেন তারা। জাপানের মতো সুন্দর দেশে খেলতে গিয়ে চোখে লেগে আছে অনেক স্মৃতি। আধুনিক সভ্যতার কত কিছুই না চোখে পড়েছিল সাবিনা, সানজিদাদের চোখে।

দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, সিংগাপুর, থাইল্যান্ডের মতো দেশে দেশে খেলতে গিয়ে হাজারো মুগ্ধতা এখনো মনের স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে। কিন্তু দেশের মধ্যে থাকা পৃথিবীর বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত দেখা হয়নি এদের অনেকেরই। সমুদ্রের বালিতে হাঁটা হয়নি তাদের। সেনাবাহিনী প্রধান এবং বিওএর সভাপতি ওয়াকার-উজ-জামানের উদ্যোগে সানজিদাদের সমুদ্র দেখা হয়েছে। সূর্য ডোবা দেখা হয়েছে। কীভাবে সাগরের গভীরে আগুনের মতো লাল সূর্যটা ডুবে যায়, তা দেখার অভিজ্ঞতা আগে ছিল না মারিয়া, তহুরা, কৃষ্ণাদের।

শনিবার রাতে কক্সবাজারের ইনানীতে সশস্ত্র বাহিনী এবং বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক বেওয়াচ হোটেলে সাফ নারী চ্যাম্পিয়ন দলকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। চ্যাম্পিয়ন ফুটবলারদের সংবর্ধনার সঙ্গে প্রতিশ্রুত অর্থ পুরস্কার ১ কোটি টাকা পুরস্কার দেওয়া হয়। বিওএর নির্বাহী কমিটির মিটিং শেষে চ্যাম্পিয়ন দলের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়।

বিওএর সভা চলাকালীন বিকালে খেলোয়াড়রা বিচে চলে যান। গিয়ে দেখেন সাবিনাদের জন্য গোলপোস্ট বসানো, মাঠ রেডি। কঠোর বেষ্টনীর মধ্যে একপাশে রূপনা চাকমা এবং অন্য পাশে অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের খেলার অ্যাকশন ছবি দিয়ে লেখা হয় ‘তোমাদের জন্য বাংলাদেশ গর্বিত’।

মনিকা, রূপনা চাকমা, কৃষ্ণা, মারিয়া, শামসুন নাহার, মাসুরা পারভীন, সুমাইয়া, সাবিনারা সেখানে গিয়ে ফুটবল খেলেছেন। সাইকেল চালিয়েছেন। ঘোড়ায় চড়েছেন। বীচ বাইক চালিয়েছেন কৃষ্ণ। ফুটবলাররা একের পর এক ছবি তোলেন, তাদের ফেসবুকে ছবি আপলোড করেন।

সানজিদা বলেন, ‘আমি কখনো কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত দেখিনি। জাপান, চীন, কোরিয়া যখন গিয়েছিলাম দেখেছি। থাইল্যান্ডেও দেখেছি।’ কোন সমুদ্রসৈকত দেখতে সুন্দর? সানজিদা বলেন, ‘একেকটা একেক রকম। আমাদেরটায় অন্যরকম ফিলিংস। আমরা সী বাইক চালিয়েছি। সবচেয়ে ভালো লেগেছে সমুদ্রের গর্জন। অন্যরকম আওয়াজ, রোমাঞ্চ ছড়ায়। শিহরণ জাগায়। সূর্য ডুবে গেলে আমরা বেওয়াচ হোটেলে ফিরে সংবর্ধনার জন্য প্রস্তুত হই।’

রাতে জমকালো সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী প্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে নারী খেলোয়াড়রা ছবি তোলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেনাপ্রধান বলেন, এই জয়ের অনুপ্রেরণা নিয়ে বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল ভবিষ্যতে আরও এগিয়ে যেতে পারবে। ভবিষ্যতে শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবেন নারী ফুটবলাররা। সেই সঙ্গে সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ আসরে নারী ফুটবল দলের এই সাফল্য সার্বিকভাবে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে নতুন প্রেরণার সঞ্চার করবে।’

প্রত্যেক ফুটবলারকে ৪ লাখ টাকা করে দেওয়া হয়। সাফের সেরা খেলোয়াড় ঋতুপর্ণা চাকমা এবং সাফের সেরা গোলরক্ষক রূপনা চাকমাকে ৪ লাখ টাকা ছাড়াও আরো ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা অর্থ পুরস্কার তুলে দেন বিওএর সভাপতি ওয়াকার-উজ-জামান। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ছিলেন হকি ফেডারেশনের সভাপতি বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন, সাঁতার ফেডারেশনের সভাপতি নৌবাহিনীর প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান, বাফুফের সভাপতি তাবিথ আউয়াল।

Related Articles

Back to top button