কর্ণফুলী গ্যাসের বিল বকেয়া ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা

অনলাইন ডেস্ক: ২০২১-২২ অর্থবছরে গ্যাস বিপণন করে মুনাফা অর্জন করেছিল ১ হাজার ৬৩৮ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে মুনাফা কমে অর্জন হয়েছে ৩৭৪ কোটি টাকা। কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানিতে পরিচালনা খরচ বাড়লেও গ্যাস বিপণন বাদ আয় ক্রমশ কমে যাচ্ছে। গ্যাস বিপণন কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে নানা অনিয়ম, সিস্টেম লস, অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে গ্যাস চুরি ও গ্যাস বরাদ্দ কমে যাওয়াসহ নানা কারণে কোম্পানিকে লাভজনক করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। সরকারি ও বেসরকারি খাতে গ্যাস বিল বকেয়া বেড়ে প্রায় ২২০০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। চাহিদা থাকলেও গ্যাস সরবরাহ ২৭০ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে এসেছে। কোম্পানিতে বর্তমানে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, কোম্পানিতে অনাদায়ী বকেয়া বেড়ে প্রায় ২২০০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। বকেয়ার মধ্যে ৮০ শতাংশ শিল্প কারখানায়। এদের মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎকেন্দ্র, সার কারখানাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে বকেয়ার পরিমাণ বেশি। এছাড়া বেসরকারি ক্যাপটিভ পাওয়ার, কাফকো, শিল্প কারখানা, সিএনজি ফিলিং স্টেশন, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, চা বাগানে বকেয়া রয়েছে।

জানা গেছে, সিইপিজেডে অবস্থিত একটি বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গত চার বছরে প্রায় ২৪৬ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। তাদের ৩০ কিস্তিতে বকেয়া পরিশোধের আবেদন অনুমোদন করা হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি দুই বছরে মাত্র একটি কিস্তি পরিশোধ করে আর বকেয়া টাকা পরিশোধ করেনি। কোম্পানিটির বিরুদ্ধে মামলা করলে আদালতের রায় কেজিডিসিএলের পক্ষে এসেছে। তারপরও বকেয়া পরিশোধ করছে না প্রতিষ্ঠানটি।

কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে কোম্পানির বছরে পরিচালনা খরচ প্রায় ১৭০ কোটি টাকা। আয়ব্যয় মিলে এখন কাছাকাছি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া ঘনঘন কোম্পানির শীর্ষ পদ এমডি পরিবর্তনে কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ ব্যাহত হচ্ছে। কোম্পানিতে দক্ষ লোক থাকলেও সমপদমর্যাদার অন্য কোম্পানি থেকে এমডি নিয়োগের কারণে শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।

কোম্পানির রাজস্ব বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, কোম্পানির আয় বলতে গ্যাস বিক্রি বাবদ বছরে প্রায় ১০৮ কোটি টাকার মতো মার্জিন পাওয়া যায়। আর তার সঙ্গে কোম্পানির অন্য খাত থেকে কিছু আয় হয়ে থাকে। গ্যাসের বরাদ্দ কমার কারণে মার্জিনও কমে গেছে।

এদিকে দীর্ঘদিন যাবত শতাধিক শিল্প-কারখানায় সংযোগ থাকলেও গ্যাস নিচ্ছে না। এসব কারখানায় মিটারও রয়েছে। গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতেও কারখানা কর্তৃপক্ষ রাজি হচ্ছে না। কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (বিপণন উত্তর) মো. সোলায়মান বলেন, কাঁচামাল সংকট, ব্যাংক ঋণ, মূলধন সংকটসহ নানা কারণে অনেক শিল্প-কারখানা বন্ধ রয়েছে। কিছু কারখানায় আমি পরিদর্শন করেছি। আমরা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতেও পারছি না।

আমাদের লোক গিয়ে মিটার মনিটরিং করছে। এখন এসব কারখানার তালিকা করে কোম্পানির বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য পাঠাব।’ তবে বকেয়া বিল উদ্ধারের উদ্যোগ সম্পর্কে তিনি কিছু বলেননি।

প্রসঙ্গত, কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানিতে সব মিলিয়ে ৬ লাখ ২ হাজার ৩৭৫টি গ্যাস সংযোগ রয়েছে। তার মধ্যে আবাসিক সংযোগ রয়েছে ৫ লাখ ৯৮ হাজার, শিল্প ১১৮১টি, ক্যাপটিভ পাওয়ার ২০১টি, বাণিজ্যিক ২৯১১টি ও সিএনজি ৭০টি।

Related Articles

Back to top button