‘আ.লীগ হিন্দুদের ওপর হামলা করে সেই ছবি পশ্চিমা বিশ্বে বিক্রি করতে চায়’

নিজস্ব প্রতিবেদক: গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকি বলেছেন, ফ্যাসিস্টদের শক্তি খুব একটা বেশি না। ভারতের শক্তিতে শক্তিশালী হয়ে এখন তারা নানান ষড়যন্ত্র করছে। আওয়ামী লীগ এখন হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করে সেই ছবি পশ্চিমা বিশ্বে বিক্রি করতে চায়। এ ষড়যন্ত্র আমাদের মোকাবেলা করতে হবে।

তিনি বলেন, ভারতের মিডিয়া এখন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লেগে গেছে। আর পশ্চিমাদের বোঝাতে চাইছে এখানে কোনো সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষ নিরাপদে নাই। এ ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে আমাদের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

শুক্রবার বিকালে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় গণসংহতি আন্দোলনের আয়োজনে গণসংলাপ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

জুনায়েদ সাকি বলেন, মুসলমানদের সংখ্যা বেশি, কাজেই তাদের দায়িত্বও বেশি। সব ধর্মের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে। তাদের কেউ যেন বঞ্চনার শিকার না হয়। বাংলাদেশে যদি একজন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান কোনভাবে অপমানিত হয়, আক্রান্ত হয় তাহলে এটা মুসলমানদের জন্য গর্বের ব্যাপার মোটেই না। কাজেই আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টে আমাদের ছাত্র-শ্রমিকরা আত্মত্যাগ করেছেন একটা সশস্ত্ররাষ্ট্র শক্তির বিরুদ্ধে। যারা টিয়ারশেল, গ্যাস, লাঠিচার্জ, ছড়্ড়া গুলি, সরাসরি মানুষ মরে সেই রকম গুলি তারা ছুড়েছে। সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। হেলিকপ্টার থেকে গুলি করেছে। দূর থেকে লক্ষ্য করে গুলি করে হত্যা করেছে।

তিনি বলেন, আমরা একটা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত চাই। যে বন্দোবস্ত শেখ হাসিনা বানিয়ে দিয়ে গেছে। কিংবা ৫৩ বছর ধরে যে বন্দোবস্ত চলছে। এই যে একটা স্বৈরাচারী বন্দোবস্ত এটাকে একটি ফ্যাসিস্ট বন্দোবস্ত করেছে শেখ হাসিনা। সংবিধানকে এমনভাবে বানিয়েছে যে সংবিধান পকেটে ঢুকিয়ে যা ইচ্ছা তাই করা যায়। তারপর রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো সব পকেটে ঢুকিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের জিডিপি মানে পুরো অর্থনীতির যে আকার ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি। সেই ৫০০ মিলিয়নের ডলারের আড়াইশ মিলিয়ন ডলার তারা মেরে দিয়ে লুট করে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। এই হচ্ছে আমাদের দেশের শাসন চিত্র।

সাকি বলেন, আমরা কি সবাই নিশ্চিত করে বলতে পারি যে আমরা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে পৌঁছতে পারব। আমরা কি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি এই দেশে আবার ফ্যাসিবাদ ফিরে আসবে না? কোনটা ঘটবে এটা আপনাদের ওপর নির্ভর করে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর জেলা গণসংহতি আন্দোলনের আহ্বায়ক আমজাদ হোসেন। সদস্য সচিব লিটন হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য মনির উদ্দীন পাপ্পু, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দীপক রায়, কালিয়াকৈর উপজেলার আহবায়ক মো. আশরাফুল ইসলাম খোকন প্রমুখ।

জুনায়েদ সাকি বলেন, রাষ্ট্রের লক্ষ্য হচ্ছে তার নাগরিকদের জন্য সাম্য। মানবিক মর্যাদা হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টান চাকমা কিংবা নারী-পুরুষ যেই হোন না কেন আপনার নাগরিকের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করবে রাষ্ট্র। স্বাভাবিক ন্যায়বিচার, ধনী-গরিব বৈষম্য এখানে থাকবে না। আপনি আদালতে গেলে ন্যায়বিচার পাবেন।

তিনি বলেন, এ দেশের জনগণ সাম্য মানবিক মর্যাদা সামাজিক ন্যায়বিচার পায় না। কারণ জনগণের শক্তি নাই। জনগণের নিজস্ব রাজনৈতিক শক্তি নাই। আজকেও আমরা যদি জনগণের নিজস্ব রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলতে না পারি তাহলে এই যে, পুরোনো বন্দোবস্ত ফ্যাসিস বন্দোবস্ত, স্বৈরাচারী বন্দোবস্ত নানানভাবে আবার ফিরে আসবে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি লাগবে। যারা ক্ষমতায় গিয়ে লুটেপুটে খাবে না। যারা দুর্নীতিকে বিদায় দেওয়ার চেষ্টা করবে। যারা আইনকানুন এমনভাবে বানাবে যে আইন আপনার ক্ষমতাকে কেড়ে না নিয়ে বরং জনগণকে ক্ষমতাশালী করবে। যে আইন শাসকদের জনগণের কাছে জবাবদিহিতা করতে বাধ্য করবে। জনগণের সেই রাজনৈতিক শক্তি দরকার।

Related Articles

Back to top button