বিশ্বব্যাপী সাইবার হামলা বেড়েছে ৭৫%, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা-গবেষণা খাত

অনলাইন ডেস্ক: ২০২৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বিশ্বব্যাপী প্রতিটি প্রতিষ্ঠান সাপ্তাহিক গড়ে ১ হাজার ৮৭৬টি সাইবার আক্রমণের সম্মুখীন হয়েছে। এ সংখ্যা ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় ৭৫ শতাংশ ও আগের প্রান্তিকের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান চেক পয়েন্টের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে।

প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, এ সময় সাইবার হামলায় সবচেয়ে বড় লক্ষ্যবস্তু ছিল শিক্ষা ও গবেষণা খাত। এ ধরনের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে গড়ে ৩ হাজার ৮২৮টি সাপ্তাহিক আক্রমণ রেকর্ড করা হয়েছে। এর পরেই ছিল সরকার/সামরিক ও স্বাস্থ্যসেবা খাত। এসব প্রতিষ্ঠান সপ্তাহে যথাক্রমে ২ হাজার ৫৫৩ ও ২ হাজার ৪৩৪টি আক্রমণের সম্মুখীন হয়েছে। গত প্রান্তিকে সবচেয়ে বেশি সাইবার হামলা বেড়েছে হার্ডওয়্যার শিল্পে, যা বার্ষিক হিসাবে ১৯১ শতাংশ।

চেক পয়েন্ট বলছে, কোনো অঞ্চলই সাইবার হুমকির বাড়তি প্রবণতা থেকে মুক্ত নয়। তৃতীয় প্রান্তিকে আফ্রিকা ছিল সাইবার হুমকির সবচেয়ে বড় শিকার। এ অঞ্চলের প্রতিষ্ঠানগুলোয় প্রতি সপ্তাহে গড়ে ৩ হাজার ৩৭০টি আক্রমণ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ৯০ শতাংশ বেশি। এরপর আছে এশিয়া-প্যাসিফিক, প্রতি সপ্তাহে গড়ে ২ হাজার ৮৬৩টি আক্রমণ হয়েছে। ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকায়ও আক্রমণের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন খাতেও দ্রুত বাড়ছে সাইবার হামলা। যেখানে গত বছরের তুলনায় সাইবার হামলা বেড়েছে ৫৬ শতাংশ। এ অঞ্চলে প্রতি সপ্তাহে প্রতিটি সংগঠনে গড়ে ১ হাজার ৩০০টি আক্রমণ ঘটছে, যা আগের প্রান্তিকের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি আক্রমণের শিকার হয় শিক্ষা ও গবেষণা খাত, গড়ে ২ হাজার ২৩৯টি। এ সংখ্যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ।

গত প্রান্তিকে বিভিন্ন ধরনের সাইবার আক্রমণের মধ্যে র‍্যানসমওয়্যার আক্রমণ ছিল পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় কিছুটা কম। র‍্যানসমওয়্যার আক্রমণের মাধ্যমে হ্যাকাররা কম্পিউটার বা নেটওয়ার্কে ম্যালওয়্যার প্রবেশ করিয়ে ফাইল এনক্রিপ্ট বা লক করে দেয়, ফলে ব্যবহারকারী সেগুলোয় আর প্রবেশ করতে পারে না। গত প্রান্তিকে এমন ১ হাজার ২৩০টি ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। এ সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উত্তর আমেরিকা। মোট র‍্যানসমওয়্যার আক্রমণের ৫৭ শতাংশই ছিল ওই অঞ্চলে। এরপর ইউরোপ, ২৪ শতাংশ ও এশিয়া-প্যাসিফিক ১৩ শতাংশ। এ ধরনের আক্রমণে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছে ম্যানুফ্যাকচারিং খাত। এরপর আছে স্বাস্থ্যসেবা খাত ও খুচরা/পুনর্বিক্রয় খাত।

তৃতীয় প্রান্তিকে সাইবার হুমকির এ তথ্য ইঙ্গিত দেয় যে প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে এসব আক্রমণ ভবিষ্যতে আরো বাড়বে। তাই বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে তাদের সাইবার প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করতে হবে এবং সাইবার প্রতিরোধের একটি সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। চেক পয়েন্টের প্রতিবেদন বলছে, সাইবার আক্রমণের সংখ্যা ও তীব্রতা দুটোই উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। সাইবার অপরাধীরা তাদের কৌশলগুলো উন্নত করে চলেছে। তাই তাদের থেকে এগিয়ে থাকা শুধু পরামর্শযোগ্য নয়, এটি অপরিহার্য। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক্ষেত্রে নিরাপদ থাকতে উন্নত নিরাপত্তা টুল ব্যবহার; কর্মীদের সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক প্রশিক্ষণ; সফটওয়্যার, সিস্টেম ও ডিভাইস আপডেট রাখা প্রয়োজন। এছাড়া প্রতিষ্ঠানে ‘জিরো ট্রাস্ট সিকিউরিটি’ বাস্তবায়ন করা জরুরি, যেখানে নেটওয়ার্কে প্রবেশের আগে সব ব্যবহারকারী ও ডিভাইসের কঠোর পরিচয় যাচাই নিশ্চিত করা হবে।

Related Articles

Back to top button