২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায় আজ
অনলাইন ডেস্ক: একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর আজ রবিবার রায় ঘোষণা করবে হাইকোর্ট। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চের আজকের কার্যতালিকায় মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য রয়েছে। গত ২১ নভেম্বর এই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর হাইকোর্টে শুনানি গ্রহণ শেষ হয়। এরপর মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য সুনির্দিষ্ট দিন ধার্য না করে রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের আজকের কার্যতালিকায় মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য আসল।
এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল রাখার আবেদন জানানো হয়েছে। অন্যদিকে আসামিপক্ষের কৌঁসুলিরা আসামিদের সাজার রায় বাতিল করে খালাস দেওয়ার আবেদন করেছেন। আসামিপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও মো. শিশির মনির।
অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান বলেন, মামলার দ্বিতীয় অভিযোগপত্রে যাদের আসামি করা হয়েছে, সেটি আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। এই অভিযোগপত্র ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দেওয়া হয়নি। সরাসরি জজ আদালতে দেওয়া হয়। সে জন্য ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী এটা গৃহীত হতে পারে না। এছাড়া ঘটনাস্থলে কে গ্রেনেড হামলা করেছে তা চিহ্নিত করা যায়নি। এ নিয়ে কারো সাক্ষ্য বা কোনো আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেই। তারেক রহমানের বিষয়ে শুনানিতে তিনি বলেছিলেন, যদিও ওনার কোনো আপিল আদালতের সামনে বিচারাধীন নেই। কিন্তু আদালত যদি মনে করে যে, এ মামলার কোনো আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হয়নি বা দায়সারা গোছের চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে মামলা প্রমাণ না হলে, খালাস পাওয়ার যোগ্য হলে আদালত খালাস দিতে পারে। এটা ভারত, পাকিস্তান ও আমাদের সুপ্রিম কোর্টের রায়ের নজির আছে।
শিশির মনির বলেন, মুফতি হান্নানের দ্বিতীয় জবানবন্দির ভিত্তিতে অধিকতর যে তদন্ত হয়েছে, সেটির আইনগত ভিত্তি নেই। সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাজা দেওয়া হয়েছে। এ মামলায় আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নির্যাতনের মাধ্যমে আদায় করা হয়েছে। আশা করি, আসামিরা খালাস পাবে।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। এতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলটির অনেক নেতাকর্মী আহত হন। নিহত হন ২৪ জন। এ ঘটনায় মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের ১১ জুন দেওয়া প্রথম অভিযোগপত্রে বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন ও হুজি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে মামলাটি অধিকতর তদন্ত করা হয়। দুই বছর তদন্তের পর ২০১১ সালের ৩ জুলাই ৩০ জনকে আসামি করে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করা হয়। সেখানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আরো ৩০ জনকে যুক্ত করলে মোট আসামির সংখ্যা দাড়ায় ৫২ জনে। এরপর বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, তারেক রহমানকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হয়রানি করতে এবং রাজনীতি থেকে দূরে রাখতেই এই মামলায় শেখ হাসিনার নির্দেশে তদন্ত কর্মকর্তা আসামির তালিকায় যুক্ত করেছেন। ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর দুটি মামলায় ১৯ জনকে ডাবল মৃত্যুদণ্ড দেয় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূরউদ্দিন। যাবজ্জীবন দেওয়া হয় ১৯ জনকে। এই রায় বাতিল চেয়ে আপিল করেন কারাবন্দি আসামিরা। ডেথ রেফারেন্স আসে হাইকোর্টে।