বিশ্ববিখ্যাত এসিসি ব্র্যান্ডের কম্পিউটার পণ্য তৈরি করছে ওয়ালটন ডিজিটেক
নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্বব্যাপী পরিচিত ইউরোপীয় ব্র্যান্ড এসিসি ১৯৬৮ সাল থেকে মানসম্পন্ন বৈদ্যুতিক গৃহস্থালি যন্ত্রপাতি তৈরি ও সরবরাহ করে আসছে। কোম্পানিটি বিস্তৃত পরিসরে পণ্য উৎপাদনের জন্য বেশ পরিচিত। এখন থেকে নিজস্ব ব্র্যান্ডের পাশাপাশি এসিসি ব্র্যান্ডেও প্রিমিয়াম ক্যাটাগরির ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, মনিটরসহ বিভিন্ন কম্পিউটার পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করবে ওয়ালটন ডিজিটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। বাংলাদেশের শীর্ষ প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদনকারী, বাজারজাতকারী ও রফতানিকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন ২০২২ সালে এসিসিসহ অর্ধশতাধিক বছরের ঐতিহ্যবাহী ইউরোপীয় তিনটি ইলেকট্রনিকস ব্র্যান্ডের স্বত্ব লাভ করে। অর্থাৎ ওয়ালটন তার বাজারে এ ব্র্যান্ডগুলোর প্রতিনিধিত্ব ও বিতরণ করার আনুষ্ঠানিক অনুমতি পায়, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক সাফল্য হিসেবে বিবেচিত। এসিসির ওয়েবসাইট বলছে, নির্ভরযোগ্যতা, কর্মক্ষমতা ও উদ্ভাবনী ডিজাইনের জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কোম্পানিটি। এসিসির লক্ষ্য ইউরোপে ব্যবহৃত সর্বোত্তম মান অনুসরণ করে সর্বোচ্চ মানের হোম অ্যাপ্লায়েন্স তৈরি করা। তারা শক্তি সাশ্রয়ী বৈদ্যুতিক গৃহস্থালি যন্ত্রপাতির একটি বিস্তৃত পরিসর উৎপাদন করছে। ইউরোপীয় মানের ফ্রিজ, এয়ার কন্ডিশনার, টেলিভিশন, ওয়াশিং মেশিন, ফ্যান, ওভেন ও অন্যান্য বৈদ্যুতিক ডিভাইস থেকে শুরু করে এমন পণ্য তৈরির চেষ্টা করছে, যা প্রতিদিনের জীবনকে উন্নত করবে এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয় করবে।
১৯৬৮ সালে ইতালির বেলুনো শহরে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়। দুবছর আগে এসিসিসহ জানুসি ইলেকট্রোমেকানিকা ও ভার্ডিকটারের স্বত্ব লাভ করে ওয়ালটন। আন্তর্জাতিক বিডিংয়ে বেশ কিছু নামকরা বৈশ্বিক কোম্পানিকে হটিয়ে ইউরোপের জনপ্রিয় এ ব্র্যান্ডগুলো সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় ইনভার্টার ও ফিক্সড স্পিড কম্প্রেসর ম্যাফ্যাকচারিং প্লান্ট, গবেষণা ও উন্নয়ন, মেধাসম্পদ (ডিজাইন ও সফটওয়্যার লাইসেন্স), ৫৭টি দেশে ট্রেডমার্কসহ ইতালিয়া ওয়ানবাও-এসিসি এসআরএল কোম্পানির কাছ থেকে ওয়ালটন স্বত্ব লাভ করে। এরই মধ্যে এসিসি ব্র্যান্ডে টেলিভিশন, এয়ারকন্ডিশনার ও ওয়াশিং মেশিন বাজারজাত শুরু করেছে ওয়ালটন। এবার প্রতিষ্ঠানটি ক্রেতাদের জন্য এসিসি ব্র্যান্ডে কম্পিউটার পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করতে যাচ্ছে।
প্রাথমিকভাবে এসিসি ব্র্যান্ডের জন্য চার মডেলের ল্যাপটপ, দুই মডেলের ডেস্কটপ ও এক মডেলের মনিটর উৎপাদন করবে ওয়ালটন। এসিসি ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ ও ডেস্কটপগুলোয় ব্যবহৃত হয়েছে বিশ্বখ্যাত চিপসেট নির্মাতা ইন্টেলের থারটিন ও ফোরটিন জেনারেশন এবং এআই আল্ট্রা চিপসেট সমৃদ্ধ কোরআই থ্রি, কোরআই ফাইভ ও কোরআই সেভেন প্রসেসর। পর্যায়ক্রমে এসিসি ব্র্যান্ডের অন্যান্য আইটি পণ্যও উৎপাদন করবে ওয়ালটন ডিজিটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
এসিসি ব্র্যান্ডটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠার কারণ হলো এটি উচ্চমানের ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী পণ্য তৈরি করে। কোম্পানির পণ্যগুলো ইউরোপীয় মান অনুযায়ী উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি হয়, যা দীর্ঘস্থায়ী ও কার্যকর। এসিসি মূলত সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য সরবরাহ করে ও এর গুণমানের জন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য ব্র্যান্ড হয়ে উঠেছে। এসিসি বলছে, তারা পরিবেশবান্ধব ও টেকসই পণ্য তৈরিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কোম্পানিটি এমন পণ্য তৈরি করে যা কম শক্তি ব্যবহার করে, এতে কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমে এবং পরিবেশ রক্ষা হয়। ইতালি থেকে শুরু হওয়া এসিসি আন্তর্জাতিকভাবে বিস্তৃত হয়েছে ও ইউরোপে এর শক্তিশালী উপস্থিতি রয়েছে। এখন ওয়ালটনের সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায়ও তাদের বিস্তার ঘটাচ্ছে।
ওয়ালটন বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, যা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইলেকট্রনিকস ও প্রযুক্তিপণ্যের জন্য একটি বিশ্বস্ত নাম। ১৯৭৭ সালে যাত্রা করে ওয়ালটন আজ দেশের অন্যতম বৃহৎ ও সফল প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। গাজীপুরে অবস্থিত তাদের অত্যাধুনিক কারখানা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ ও আধুনিক কারখানা হিসেবে বিবেচিত। ওয়ালটন প্রধানত ফ্রিজ, টেলিভিশন, এয়ার কন্ডিশনার, ওয়াশিং মেশিন, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, ফ্যান, ওভেন ও অন্যান্য হোম অ্যাপ্লায়েন্স তৈরি করে। কোম্পানিটি বলছে, তাদের পণ্যগুলোয় সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, যা বিশ্বমানের গুণগত মান নিশ্চিত করে। প্রতিষ্ঠানটি দেশীয় অর্থনীতিতে বিশাল অবদান রাখছে, বিশেষত কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও স্থানীয় শিল্পের উন্নয়নে। ওয়ালটনের কারখানায় প্রতিটি পণ্যের মান পরীক্ষা করা হয় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পণ্য রফতানি করে ওয়ালটন গ্লোবাল ব্র্যান্ড হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করছে। ওয়ালটনের পণ্যগুলো দামে সাশ্রয়ী হলেও গুণগত মানে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। পরিবেশবান্ধব উৎপাদন প্রক্রিয়া ও শক্তি সাশ্রয়ী পণ্য তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি টেকসই উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। তিনটি ঐতিহ্যবাহী ইউরোপীয় ব্র্যান্ডের স্বত্ব লাভের মাধ্যমে তাদের বৈশ্বিক অবস্থান আরো মজবুত করেছে। বর্তমানে কোম্পানিটি স্থানীয় বাজারে আরো উদ্ভাবনী পণ্য সরবরাহ ও আন্তর্জাতিক বাজারে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি দেশের প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ও ভবিষ্যতে আরো বড় সাফল্যের স্বপ্ন দেখছে।
ওয়ালটনের সঙ্গে এসিসির অংশীদারত্ব তাদের পণ্যের মান ও উৎপাদন ক্ষমতা আরো বাড়িয়েছে। এসিসি এখন ওয়ালটনের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার গ্রাহকদের ইউরোপীয় মানের পণ্য সরবরাহ করছে। এসিসির লক্ষ্য হলো প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে ক্রেতাদের জীবনমান উন্নত করা। এটি এমন পণ্য তৈরি করে, যা পরিবেশবান্ধব হওয়ার পাশাপাশি প্রতিদিনের জীবনকে আরো সহজ করে তোলে। এসিসি ব্র্যান্ড এখন বাংলাদেশে ওয়ালটনের মাধ্যমে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে, যা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে গুণগত মানের জন্য একটি মাইলফলক।