পাশবিক নির্যাতনের পর মাদ্রাসাছাত্রকে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ
অনলাইন ডেস্ক: রংপুরের গণেশপুরে এক মাদ্রাসাছাত্রকে পাশবিক নির্যাতনের পর শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার বকুলতলা জান্নাতবাগ হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের তিন তলার একটি পরিত্যক্ত কক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয় সিয়াম নামের ওই শিক্ষার্থীর মরদেহ।
নিহতের পরিবারের অভিযোগ, পাশবিক নির্যাতনের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে ওই শিক্ষার্থীকে। এ ঘটনায় তদন্তে নেমেছে সিআইডি ও রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানা পুলিশ।
জানা গেছে, আরবি শিক্ষার জন্য সপ্তাহ তিনেক আগে সিয়াম নামের এক ১০ বছরের শিশুকে রংপুর নগরীর বকুলতলা জান্নাতবাগ মাদ্রাসায় ভর্তি করান বাবা ভুট্টা মিয়া। বৃহস্পতিবার বিকালেও সিয়ামের সঙ্গে ফোনে কথা বলে পরিবারের লোকজন। অথচ রাত ৮টার দিকে খবর পান সিয়াম অসুস্থ। পরে পরিবারের লোকজন মাদ্রাসায় এলে জানানো হয় সিয়াম মারা গেছে।
নিহতের পরিবারের অভিযোগ, পাশবিক নির্যাতনের পরে নির্যাতন চালিয়ে শ্বাসরোধ করে সিয়ামকে হত্যা করা হয়েছে।
সিয়ামের চাচা আনোয়ার ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর আমাদের খবর দেওয়া হয় আমার ভাতিজা অসুস্থ। আমরা দ্রুত মাদ্রাসায় গেলে হুজুর জানান- সিয়াম মারা গেছে। পরে হাসপাতালে এসে দেখি ওর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মলদ্বার দিয়েও রক্ত ঝরছে। এটা স্পষ্ট আমার ভাতিজা সিয়ামকে পাশবিক নির্যাতনের পরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। আমরা দোষীদের শাস্তি চাই।
সিয়ামের বাবা ভুট্টু মিয়া বলেন, আমরা গরিব মানুষ। টাকাপয়সা নাই। ইচ্ছা ছিল ছেলেকে আরবি শেখাব। তাই তিন সপ্তাহ আগে এই মাদ্রাসায় ভর্তি করাই। বৃহস্পতিবার বিকালেও বাচ্চার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। কী কী লাগবে আনতে বলছে। অথচ সন্ধ্যার সময় হুজুর ফোন দিয়ে বলে সিয়াম অসুস্থ তাড়াতাড়ি আসেন। পরে এসে শুনি আমার বাবা আর নাই। এ সময় ছেলের হত্যার বিচার দাবি করে হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশ প্রশাসনের কাছে আকুতি জানান তিনি।
মাদ্রাসাশিক্ষক গোলাম রসুল বলেন, একটা ছেলে যে বিকাল পর্যন্ত খেলাধুলা করেছে কিভাবে কি হলো বুঝতে পারছি না। এটি নির্মম হত্যার ঘটনা। এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
পুলিশ ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ জানায়, বৃহস্পতিবার মাগরিবের নামাজের পর নিয়মিত ক্লাস চলাকালে মাদ্রাসার শিক্ষক সিয়ামকে দেখতে না পেয়ে সবাই মিলে তাকে খোঁজাখুঁজি করে। একপর্যায়ে আব্দুর রহমান ওরফে আবদুল্লাহ নামের এক শিক্ষক মাদ্রাসার সদ্য নির্মিত ৩ তলার পরিত্যক্ত কক্ষে অচেতন অবস্থায় দেখতে পান সিয়ামকে। পরে তাকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানকার কর্মরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি মেট্রোপলিটন থানার ওসি আতাউর রহমানের দেওয়া প্রাথমিক তথ্যমতে জানা গেছে, নিহত সিয়ামকে পাশবিক নির্যাতনের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।
তবে আসামি শনাক্তের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এ পর্যন্ত সন্দেহজনক আচরণের জন্য আব্দুর রহমান ওরফে আব্দুল্লাহসহ ৪ জনকে আটক করেছি। প্রাথমিকভাবে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। খুব শিগগিরই প্রকৃত উন্মোচন করা হবে।