দক্ষিণ কোরিয়ার নির্মাণ ও মৎস্য খাতে যেতে পারছেন না প্রায় ৩০০০ বাংলাদেশি
অনলাইন ডেস্ক: দক্ষিণ কোরিয়া শ্রমবাজারে বাংলাদেশি কর্মীরা কাজ করছেন দীর্ঘদিন ধরে। দেশটিতে বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের (বোয়েসেল) মাধ্যমে সরকারিভাবে উৎপাদশিল্পে শ্রমিক যাচ্ছেন। এই প্রক্রিয়ার আওতায় নতুন চালু হওয়া নির্মাণ ও মৎস্য খাতে নিবন্ধিত ২ হাজার ৯২৩ প্রার্থী যেতে পারছেন না দক্ষিণ কোরিয়ায়।
কয়েকজন প্রার্থী অভিযোগ করে বলেন, অব্যবস্থাপনা ও দক্ষিণ কোরিয়ায় সঠিক প্রচার-প্রচারণার অভাবে বাংলাদেশ থেকে নির্মাণ ও মৎস্য খাতে কর্মী নিচ্ছেন না দেশটির নিয়োগকর্তারা। ফলে দীর্ঘ পরিশ্রম, অর্থ ব্যয় করে ভাষা পরীক্ষা ও স্কিল টেস্টে উত্তীর্ণ হয়েও তাদের লালিত স্বপ্ন ধূলিস্যাৎ হতে যাচ্ছে।
ইপিএস প্রোগ্রাম কী?
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি লাখ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চলনশক্তি হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারিভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি শ্রমিকরা গমন করেন। তবে সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে তরুণদের মাঝে। কোরিয়ান ভাষা শিক্ষাসহ প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিয়ে সরকারিভাবে তারা দেশটিতে গমন করেন।
বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের (বোয়েসেল) মাধ্যমে কয়েক ধাপে প্রার্থী নির্বাচনের পর দক্ষিণ কোরিয়ায় যেতে পারেন অদক্ষ ও দক্ষ কর্মীরা। মূলত স্বচ্ছ প্রক্রিয়া, কম খরচে যাওয়া আর উচ্চ বেতনের সুযোগ থাকায় দেশটির প্রতি আগ্রহ বাড়ছে তাদের।
২০০৭ সালে দক্ষিণ কোরিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি সম্পাদিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে বোয়েসেল এবং কোরিয়া সরকারের পক্ষে হিউম্যান রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস অব কোরিয়া (এইচআরডি কোরিয়া) এই অভিবাসন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।
দুটি পক্ষ প্রতিবছর এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেমের (ইপিএস) আওতায় ভাষা পারদর্শী ও লটারির জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। প্রার্থীরা ই-৯ ক্যাটাগরিতে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেন। কোরিয়া সরকার কর্তৃক নির্ধারিত কোটার চেয়ে রেজিস্ট্রেশনকৃত প্রার্থী বেশি হলে লটারির মাধ্যমে কোরীয় ভাষা পরীক্ষা অংশগ্রহণের জন্য প্রার্থী নির্বাচন করা হয়। প্রার্থীরা কোচিং সেন্টারে বা নিজ উদ্যোগে ভাষা শিখে নির্ধারিত তারিখে প্রথম ধাপে কোরীয় ভাষা পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হন। দ্বিতীয় ধাপে স্কিল টেস্টে (শারীরিক ও কাজে অভিজ্ঞতা পরীক্ষা) উত্তীর্ণ হতে হন। এরপর এইচআরডি কোরিয়া উত্তীর্ণ প্রার্থীদের রোস্টারভুক্ত করে। এরপর এইচআরডি কোরিয়া বছরে চার থেকে পাঁচবার ভিসা প্রদানের তারিখ ঘোষণা করে। তার আগে কোরিয়ার নিয়োগকর্তারা কোরিয়ায় অবস্থিত ইপিএস সেন্টারে গিয়ে ১৬টি দেশের শ্রমিকের জন্য আবেদন করেন। সেই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশি রোস্টারভুক্তরা কাজের ভিসা পেয়ে থাকেন।
শর্ত অনুযায়ী, এসএসসি পাস তরুণদের যাওয়ার সুযোগ থাকলেও উচ্চশিক্ষিত তরুণরাও নাম লেখাচ্ছেন টাইগার অর্থনীতির দেশ দক্ষিণ কোরিয়ায়। বর্তমানে উৎপাদন (ম্যান্যুফ্যাকচারিং) ও শিপ বিল্ডিং খাতে কর্মী পাঠাচ্ছে বোয়েসেল। এ মুহূর্তে প্রায় ৩০ হাজার কর্মী উচ্চ বেতনে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প-কারখানায় চাকরি করছেন দক্ষিণ কোরিয়ায়। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে দেশের অর্থনীতিতে। আগে দক্ষিণ কোরিয়ায় ৪ বছর ১০ মাসের জন্য সুযোগ পেলেও ২০২৪ সাল থেকে একজন ই-৯ কর্মী কোরিয়ার শ্রম আইন মেনে ১০ বছর থাকার সুযোগ পাচ্ছেন। প্রতিটি খাতে সর্বনিম্ন বেতন ১ লাখ ৮০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা। থাকা-খাওয়ার মালিক বহন করেন।
চলমান এই প্রক্রিয়ার মধ্যে গত জানুয়ারিতে ইপিএসের আওতায় বোয়েসেল-এইচআরডি কোরিয়া নতুন দুটি খাত চালু করে বাংলাদেশে। একটি হলো নির্মাণ (কনস্ট্রাকশন) খাত, অন্যটি মৎস্য (ফিশারিজ) খাত। ঘোষণার পর ফেব্রুয়ারিতে ভাষা পারদর্শী ও লটারির জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তিতে নির্মাণ, মৎস্য, উৎপাদন ও শিপ বিল্ডিং খাতে দরখাস্ত আহ্বান করা হয়।
নির্ধারিত সময়ে অনলাইনে নিবন্ধন করে বোয়েসেলের অনুকূলে ৩৫০০ টাকা করে পরীক্ষা ফি জমা দেন প্রার্থীরা। গত মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত নতুন দুটি খাতের ভাষা পারদর্শী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে নির্মাণ খাতে ভাষা পরীক্ষা দেন ৪ হাজার ২৬৮ জন। এর মধ্যে ভাষা পরীক্ষা ও স্কিল টেস্টে উত্তীর্ণ হয়ে রোস্টারভুক্ত হয়েছেন ১০৪৫ জন। আর মৎস্য খাতে ভাষা পরীক্ষা দেন ৭ হাজার ৭৬০ জন। এর মধ্যে ভাষা পরীক্ষা ও স্কিল টেস্টে উত্তীর্ণ হয়ে রোস্টারভুক্ত হয়েছে ১ হাজার ৮৭৮ জন প্রার্থী।
গত আগস্টে সবাই রোস্টারভুক্ত হওয়ার সেপ্টেম্বর ও নভেম্বরে দুবার ভিসা ইস্যু অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু দ্রুততার সঙ্গে বোয়েসেল সব কার্যক্রম সম্পন্ন করলেও কোরিয়ান নিয়োগকর্তারা আশানুরূপ ভিসা দেননি এ দুটি খাতে। তারা অন্যান্য দেশ থেকে চাহিদা অনুযায়ী কর্মী নিলেও বাংলাদেশ থেকে দুটি ইস্যু মিলিয়ে মৎস্য খাতে ভিসা দিয়েছেন আনুমানিক ৫টি। তবে নির্মাণ খাতে এখনো কাউকে ভিসা দেননি।
বিষয়টি নিয়ে দুটি খাতের রোস্টারভুক্ত ২ হাজার ৯২৩ জন প্রার্থী হতাশায় পড়ে গেছেন। তারা বলছেন, কোরিয়ায় উৎপাদন খাতে লোকের চাহিদা থাকলেও নির্মাণ ও মৎস্য খাত নতুন হওয়ায় মালিকরা তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
নির্মাণ-মৎস্য খাতে রোস্টারভুক্তদের অভিযোগ ও দাবি
এ বিষয়ে নির্মাণ (কনস্ট্রাকশন) খাতের রোস্টারভুক্ত প্রার্থী সাইফুল ইসলাম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা উৎপাদনে আবেদন করিনি ভেবেছি নতুন খাত হিসেবে কোরিয়ান মালিকরা দ্রুত ভিসা দেবেন। কিন্তু দুটি ভিসা ইস্যু পার হলেও নির্মাণ খাতে কোনো ভিসা দেয়নি। অনেকেই বলে কোরিয়ায় এখন শীতকাল, তুষার পড়ে, এ জন্য মালিকরা কোনো লোক নিচ্ছেন না। কিন্তু অন্যান্য দেশ থেকে ইস্যু হয়েছে। বোয়েসেলের প্রতি অনুরোধ, যেকোনো শর্তে আমরা যেতে রাজি। তারা যেন সঠিক প্রচার-প্রচারণা ও এজেন্ট নিয়োগ দেন দক্ষিণ কোরিয়ায়।
নির্মাণ প্রার্থী ফাহিম মুনতাসীর বলেন, বোয়েসেল ইপিএস কর্মী প্রেরণে যথাসম্ভব চেষ্টা চালালেও, আমাদের প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও দূতাবাসের এ বিষয়ে অবহেলার কোনো কমতি নেই। এজেন্ট নিয়োগের ব্যাপারে বোয়েসেলকে আমরা স্মারলিপি দিয়েছি। এ সত্ত্বেও তারা বিষয়টি নিয়ে কোনো ধরনের সিদ্ধান্তে উপনীত হচ্ছে না। তাদের কাছে গেলে বা ফোন করলে তারা আমাদের বুঝ দিয়ে বিদায় দেয়। জানি তারা আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করছে। কিন্তু ইস্যুর সময় ভিসার পরিমাণ শূন্য দেখলে কীভাবে বুঝব তারা চেষ্টা করছে? তারা সব সময় বলে মালিক না নিলে কী করার আছে? ভাগ্য-রিজিকে হলে যাবা। নির্মাণ খাতে অন্য দেশের লোক যেতে পারলে আমাদের এই অবস্থা কেন?
নির্মাণ প্রার্থী আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, ইপিএস হাজারো মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তের স্বপ্নপূরণের জায়গা। অনেক কষ্টের পর রোস্টার হয়েছি। কিন্তু এই পর্যন্ত দুটি ইস্যু চলে গেল, একজনেরও ইস্যু হলো না কন্সট্রাকশন খাতে। কত আশা নিয়ে প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৬ ঘণ্টা করে পড়াশোনা করে পাস করে রোস্টার হয়েছি। নতুন খাতে লোক যদি পাঠাতে না পারে বোয়েসেল, প্রচার-প্রচারণা না চালিয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকে, তাহলে নতুন খাত আনল কেন তারা? আমাদের ভবিষ্যৎ কী? আমরা তো আন্দোলন কর তে চাই না। কিন্তু ধৈর্যহারা হয়ে অনেকে আন্দোলনে নামলে তো ইপিএসেরই ক্ষতি হবে।
নির্মাণ খাতের এক নারী প্রার্থী উলফাত আরা বলেন, আমি জীবনের এমন একটি পর্যায়ে এসে নারী হয়ে নির্মাণ শিল্পের কাজ কঠিন জেনেও ইপিএসের মাধ্যমে কোরিয়ায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি। দুটি সন্তান নিয়ে স্বামীর সামান্য রোজগারে জীবন যখন দুর্বিষহ অবস্থায়, তখন রোস্টারভুক্ত হয়ে আশায় বুক বেঁধে আছি। কত স্বপ্ন দেখছি। বোয়েসেল আমার সেই স্বপ্ন সত্যি করবে, সেটাই বিনীত অনুরোধ।
মৎস্য খাতের প্রার্থী আবদুল খালেক দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বোয়েসেল ইপিএস কর্মীদের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করছে। কিন্তু আগের কিছু ইপিএস কর্মী সামান্য বিষয়ে, বাড়তি বেতনের লোভে কোম্পানি পরিবর্তন করে মালিকের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ায়। তাই দিন দিন বাংলাদেশ থেকে লোক নেওয়ার হার কমে যাচ্ছে। এ বছর নতুন দুটি খাত যুক্ত হওয়ায় আমরা খুবই আশায় ছিলাম ভালো কিছু হবে কিন্তু তুলনামূলক কোনো ইস্যুই হয়নি দুটি খাতে। আমরা বোয়েসেলের সব শর্ত মেনে নিয়ে যেকোনো উপায়ে দুটি খাতের ইস্যু বৃদ্ধি চাচ্ছি। বোয়েসেল নতুন দুটি খাতের জন্য কোরিয়ায় এখন পর্যন্ত এজেন্ট নিয়োগ করেনি। যেখানে অন্য দেশগুলো এজেন্টের মাধ্যমে বাজার দখল করে নিচ্ছে। আশা করি দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে বোয়েসেলে এজেন্ট নিয়োগ করে ইস্যু বাড়াবে।
মৎস্য প্রার্থী মোশারফ সরকার বলেন, বর্তমানে মৎস্য ও কন্সট্রাকশন খাতে প্রায় ৩ হাজার রোস্টার থাকলেও গত তিন মাসে ইস্যুর হার ১ শতাংশেরও কম! আপাতত কোরিয়াতে অবস্থানরত কর্মীরা এজেন্ট হিসেবে বিভিন্ন হ্যাচারি ও নির্মাণ সংস্থা ভিজিট করে নতুন দুই খাতের ইস্যু বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে! সেসব কোম্পানি ভিজিটের তথ্যচিত্র বোয়েসেল বিভিন্ন পেজে প্রচার করতে পারে। আমরা বোয়েসেলের দিকে তাকিয়ে আছি যে তারা আমাদের অল্প সংখ্যক লোক দ্রুত পাঠিয়ে এই খাত দুটিকে জনপ্রিয় করে তুলবে।
যা বলছে কর্তৃপক্ষ
জানতে চাইলে বোয়েসেলের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (আইটি) মো. নূরুল ইসলাম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় রোস্টারভুক্তদের প্রতিযোগিতার মধ্যে চাকরি হয়। বিষয়টা এমন না যে আমি একটা পণ্য কিনলাম, সেটা পার্সেল করে পাঠিয়ে দিলাম। এ ক্ষেত্রে প্রার্থীদের ধৈর্য ধরতে হবে। আমাদের ৬০ শতাংশ কর্মী তিন মাসের মধ্যেই কোম্পানি পাল্টিয়েছে। এ জন্যই আজ এ অবস্থা। ৪০ শতাংশ কর্মী এখনো এক কোম্পানিতে দীর্ঘদিন কাজ করে বিদায় এই খাত টিকে আছে।
তিনি আরও বলেন, চলতি বছর কোরিয়ায় সব দেশের জন্য ৩০ হাজার শ্রমিকের কোটা বরাদ্দ হয়েছে। বাংলাদেশে নতুন করে মৎস্য ও নির্মাণ খাত চালু হয়েছে। বাংলাদেশের বরাদ্দ পাওয়া কোটা যেন পূরণ করা যায়, সে জন্য নতুন দুটি খাতের পরীক্ষা দ্রুত নিয়ে দ্রুত রোস্টার করেছি তাদের। একই সঙ্গে আবেদন করা উৎপাদন ও লটারির পরীক্ষা পিছিয়ে দিয়েছি আমরা। গত আগস্টে দেশের সংঘাতময় পরিস্থিতিতেও আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নতুন দুটি খাতের কর্মীদের রোস্টারের জন্য কাজ করেছি। অথচ প্রার্থীরা বলছে আমরা কোনো কাজ করছি না। এই লোকগুলো অকৃতজ্ঞের মতো সারা দিন ফেসবুকে আমাদের সমালোচনা করে।
ইস্যু বাড়ানোর উদ্যোগ বিষয়ে বোয়েসেলের এই কর্মকর্তা বলেন, ইতোমধ্যে আমরা দক্ষিণ কোরিয়ার গণমাধ্যমে সব খাত নিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছি। দক্ষিণ কোরিয়ান কোম্পানিগুলোর কাছে এজেন্ট পাঠানো এবং ইস্যু বৃদ্ধিকরণের জন্য আমরা কোরিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের কাছে চিঠি লিখেছি। এইচআরডি কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। তারা জানিয়েছে যে রোস্টারভুক্তরা সঠিক তথ্য জানে না। বাংলাদেশের নতুন খাত নিয়ে কোরিয়ান মালিকরা শুরু থেকেই অবগত আছে। আস্তে আস্তে ইস্যু বাড়বে। আমরা আমাদের কর্মীদের দক্ষতার সব প্রমাণ পাঠাচ্ছি দেশটিতে। মালিকদের জন্য ক্রেস্ট পাঠাচ্ছি, আমাদের শ্রমদক্ষতা নিয়ে ভিডিও ডকুমেন্টারি তৈরি করছি মালিকদের কাছে পৌঁছানোর জন্য।
প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপ নিয়ে নুরুল ইসলাম বলেন, কিছুদিন আগে নির্মাণ খাতের ১০-১২ জন প্রার্থী আমার কাছে এসেছে। তাদের বলেছি, লোকাল এজেন্সি কর্মীর কাছ থেকে আগে টাকা নেয় আর বোয়েসেল দক্ষিণ কোরিয়ায় পাঠানোর পর সার্ভিস চার্জ গ্রহণ করে। আসলে আমাদের সবচেয়ে বড় ভুল হয়েছে কনস্ট্রাকশন ও মৎস্য খাত চালু করা। তবু আমি বলব, তারা যেন ধৈর্য ধরে। তারা যেতে পারলে বোয়েসেলের লাভ, দেশের লাভ এবং কর্মীরও লাভ। যেহেতু একজন কর্মীর রোস্টারের মেয়াদ দুই বছর থাকে, তাই সামনে অনকে সময় আছে। এর মধ্যে তারা ধৈর্য ধরলে ভালো কিছু আশা করা যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বোয়েসেলের নির্বাহী পরিচালক (যুগ্ম সচিব) ও ভারপ্রাপ্ত এমডি মো. শওকত আলী দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা এ বিষয়টা নিয়ে খুবই উদ্যোগী হয়ে কাজ করছি। প্রার্থীরা যেতে পারছে না, তাই তারা অভিযোগ করতেই পারে। আজও আমরা আমাদের দূতাবাসকে চিঠি পাঠিয়েছি। এ ছাড়া এইচআরডি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় মিটিং করছি। তারা তাদের দেশের কেভি (দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যবসায়িক সংগঠন) প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলছে।
রোস্টারভুক্ত প্রার্থীরা এজেন্ট নিয়োগ ও প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে বোয়েসেলর গাফিলতি ও উদ্যোগ নেই বলে দাবি করছে, এটা কতটা সঠিক? এর উত্তরে তিনি বলেন, আমরা দূতাবাসের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। চেষ্টা করছি দক্ষিণ কোরিয়ায় আমাদের যারা পুরোনো কর্মী আছেন, তাদের এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেব। কিন্তু বাঙালি বিভিন্ন কমিউনিটি এসব নিয়ে ঝামেলা করে। এক পক্ষকে বললে আরেক পক্ষ ষড়যন্ত্র শুরু করে। তাই আমরা নতুনভাবে প্রচারের উদ্যোগ নিচ্ছি। বোয়েসেল সব খরচ বহন করবে। এ জন্য মন্ত্রণালয় ও উপদেষ্টা মহোদয়কেও অবহিত করেছি। আশা করছি দ্রুত ইস্যু বাড়ানো সম্ভব হবে। বিভিন্ন দেশের চেয়ে এই দেশে বেতন বেশি, প্রায় ২ লাখ টাকার ওপরে। আমরা তাদের পাঠাতে পারলে আমাদেরই লাভ।