তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের হামলা-ভাঙচুর যাত্রাবাড়ী রণক্ষেত্র
অনলাইন ডেস্ক: গতকাল সোমবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের (ডিএমআরসি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন শতাধিক। ২৫ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ডিএমআরসি কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় কয়েকজন নিহত হওয়ার দাবি করলেও পুলিশ বলছে কেউ মারা যায়নি। গতকাল সোমবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের ঘটনায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি যাত্রাবাড়ী-ডেমরায় ৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
সংঘর্ষ চলাকালে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে হামলা, প্রতিষ্ঠানটির চেয়ার, কম্পিউটার-ল্যাপটপ ভাঙচুর করেছে বলে অভিযোগ করেছেন কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা। কলেজটির বিভিন্ন সামগ্রী ও সরঞ্জাম নিয়ে যেতে দেখা যায় তাদের। সংঘর্ষে কলেজের আশপাশের সড়কগুলোতে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এতে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এদিকে ভাঙচুর ও গুলীভর্তি ম্যাগাজিন চুরির অভিযোগে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের আট হাজার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ।
জানা গেছে, সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে এ বিক্ষোভ করেন। তাদের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরাও যোগ দেন। পরে দুপুর ১২টার পর তাদের একটা অংশ যাত্রাবাড়ীতে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ অভিমুখে রওনা দেন। তারা শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শত শত শিক্ষার্থী গিয়ে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা চালান। সেখানে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনতা এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ বাধে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর থেকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মোল্লা কলেজে নির্বিঘেœ ভাঙচুর চালায়। তাদের বাধা দেওয়া বা রাস্তায় আটকাতে পুলিশের তেমন কোনো ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়নি। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মাইকিং করে মোল্লা কলেজে ভাঙচুর চালায়। ঘটনাস্থলে দেখা যায়, শুরুতে হামলাকারী শিক্ষার্থীরা কোনো প্রতিরোধের মুখে পড়েননি। দুপুর ১টার কিছু আগে তাদের ধাওয়া দেয় মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। তখন সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আশপাশের সড়কে তীব্র যানজট ছড়িয়ে পড়ে। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাজ করছে। পুলিশ সদস্যরা সেখানে উপস্থিত আছেন। ডিএমআরসি কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফ সামীর সাংবাদিকদের জানান, সোমবার দুপুরের দিকে কলেজে ভাঙচুর ও আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। তাদের কোটি টাকার ওপরে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কত ক্ষতি হয়েছে তা নিজের চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না বলে অভিযোগ করেন। পুলিশের কাছে কোনো সহায়তা চেয়েছিলেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রোববার রাতে কলেজের প্রিন্সিপাল ও চেয়ারম্যান পুলিশের কাছে সহযোগিতা চান। কিন্তু পুলিশ আমাদের আশানুরূপ সহযোগিতা করেনি। যদি প্রশাসন সহযোগিতা করতো তাহলে এই ভয়াবহ অবস্থা হতো না। হতাহতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমাদের বাচ্চা ছেলের ওপর হামলা চালিয়েছে। হতাহত শতাধিক।
স্থানীয়রা জানান, শুরুতে যদি পুলিশ হামলাকারীদের নিবৃত করতো তাহলে এই ধরনের ভয়াবহ অবস্থা হতো না। আগে থেকে পুলিশের প্রস্তুতি ছিল না অথবা পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল। পরে এ বিষয়ে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ঘোষণার পর থেকে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে ছিল। পুলিশ ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করছে।
বিজিবি মোতায়েন : যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা এলাকায় শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় ছয় প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেল ৪টায় বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা এলাকায় ছয় প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এর আগে, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজ ভাঙচুরের প্রতিবাদে সোমবার ‘মেগা মানডে’ ঘোষণা করে এ দুটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ঘোষণা অনুযায়ী ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা, ব্যাপক ভাঙচুর চালায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
গুলীভর্তি ম্যাগাজিন চুরি, মামলা : এদিকে ভাঙচুর ও গুলীভর্তি ম্যাগাজিন চুরির অভিযোগে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের আট হাজার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। রোববার পুলিশের উপ-পরিদর্শক এ কে এম হাসান মাহমুদুল কবীর বাদী হয়ে রাজধানীর সূত্রাপুর থানায় এই মামলা করেন। গতকাল সোমবার আদালতের সূত্রাপুর থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখারুম সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, রোববার (২৪ নবেম্বর) ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের ৭-৮ হাজার শিক্ষার্থী বেআইনি জনতাবদ্ধে মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রসহ দাঙ্গা সৃষ্টি করে সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করে। সরকারি অস্ত্রের (পিস্তল) গুলীভর্তি ম্যাগাজিন চুরি, সরকারি ডিউটিতে ব্যবহৃত এপিসি গাড়ি ভাঙচুর করে ক্ষতিসাধন করে। কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের ওপর আক্রমণ করা, জীবননাশের হুমকি দেওয়া এবং ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করে। এছাড়া পুলিশের আর্মড পুলিশ কার (এপিসি) ও ডিউটিরত পুলিশের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে মোট দুই লাখ ৭০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। এতে পেনাল কোড ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫(৩) ধারার অপরাধ আনা হয়েছে।
দুই কলেজ বন্ধ ঘোষণা : ব্যাপক হামলা-ভাঙচুর ও সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এরমধ্যে সোহরাওয়ার্দী কলেজে দুদিন এবং কবি নজরুল কলেজে একদিন শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের (ডিআরএমসি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী ও নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদের চলমান সংঘর্ষের মধ্যে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠান দুটি। গতকাল সোমবার বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ ড. কাকলী মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, সোম ও মঙ্গলবার কলেজের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, আগামীকালের অনার্সের ফাইনাল পরীক্ষাও স্থগিত থাকবে। অধ্যাপক কাকলী অভিযোগ করে বলেন, আমার আক্ষেপ করে বলতে হচ্ছে গতকাল (রোববার) থেকে আজ পর্যন্ত আমার ক্যাম্পাসে কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়নি। আমি এখন যাত্রাবাড়ী এসেছি। এখানে আমার শিক্ষার্থীরা আটকা পড়েছে। তাদের উদ্ধার করতে হবে। কিন্তু নিরাপত্তা ইস্যু থাকায় আমাকে ভেতরে যেতে দিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর আগে রোববার অধ্যক্ষের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনিবার্য কারণবশত ২৫ ও ২৬ নবেম্বর কলেজের সব শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। এদিকে, কবি নজরুল সরকারি কলেজও অনিবার্য কারণবশত মঙ্গলবারের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে ওয়েবসাইটে নোটিশ দিয়েছে। সোমবার কলেজের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনিবার্য কারণবশত আগামীকাল (২৬ নবেম্বর) কবি নজরুল সরকারি কলেজের শ্রেণি পাঠদান বন্ধ থাকবে।
পুলিশের বক্তব্য : কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের তিনজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ। তবে এ সংঘর্ষের ঘটনায় কেউ নিহত হয়নি বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। নিহত হওয়ার অপপ্রচার থেকে সবাইকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছে ডিএমপি। ওই তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে প্রায় ২৫ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিএমপি। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৬ নবেম্বর ডেমরার ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিৎ হাওলাদার ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি হয়। পরে গত ১৮ নবেম্বর তার মৃত্যু হয়। ওইদিন রাতে তার পরিবার ও কলেজের কিছু শিক্ষার্থী ভুল চিকিৎসায় তার মৃত্যু হয়েছে অভিযোগে হাসপাতালে ভাঙচুর চালায়। ২০ নবেম্বর পুনরায় ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের ৫০০/৬০০ শিক্ষার্থী ওই হাসপাতালে এসে ভাঙচুর চালায়। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এ সময় প্রতিবাদকারীদের চাপে হাসপাতালের পরিচালক ৪ জন ডাক্তার ও ২ জন শিক্ষার্থীসহ অভিজিতের চিকিৎসা সংক্রান্ত একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এতে আরও বলা হয়, ওই সময় হাসপাতাল চত্বরে অবস্থানরত ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করে। সন্ধ্যার পর স্থানীয় শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করতে আসে। এ সময় ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা তা না মানায় উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের দুই ছাত্র আহত হয়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গত ২৪ নবেম্বর আনুমানিক দুপুর ২টার দিকে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পুনরায় ভাঙচুর চালায়। এক পর্যায়ে তারা শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর এবং লুটপাট চালায়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের প্রায় ১২-১৫ হাজার শিক্ষার্থী শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও বাহাদুর শাহ পার্কে জমায়েত হয়। তারা আনুমানিক বেলা ১১টার দিকে ডেমরার ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করে। আগে থেকে পুলিশ ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের সামনে অবস্থান করে। কিন্তু উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাধা প্রতিহত করে লাঠিসোঁটাসহ ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের দিকে অগ্রসর হলে যাত্রাবাড়ী মোড়ে পুলিশ পুনরায় বাধা দেয়। তারা বাধা অতিক্রম করে ওই কলেজে পৌঁছে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়।
ডিএমপি জানায়, ৩৫টি বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে ইউনাইটেড কলেজ অব বাংলাদেশ (ইউসিবি) নামে একটি ফোরাম গঠিত হয়। অপরপক্ষে রাজধানীর ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা কলেজ, মিরপুর বাংলা কলেজ ও সরকারি কবি নজরুল কলেজ মিলে সাত কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের একটি জোট রয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে শিক্ষার্থী অভিজিতের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ৩৫ কলেজের ফোরাম ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও পরস্পরের প্রতি ঘৃণার মনোভাব সৃষ্টি হয়। ডিএমপি জানায়, উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ২৫ নবেম্বর সকাল ৭টা থেকে রাজধানীর সূত্রাপুর ও ডেমরা এলাকায় পর্যাপ্ত জনবল মোতায়েন করা হয়। মোতায়েন করা পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। তবু উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাধা অতিক্রম করে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের দিকে অগ্রসর হয়ে ওই কলেজে হামলা চালায়। পুলিশ যেকোনও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য অতিরিক্ত বল প্রয়োগ থেকে বিরত থাকে। পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে চলে যাওয়ার আশঙ্কায় পুলিশ শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। তা সত্ত্বেও উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং হামলা ও লুটতরাজে জড়িয়ে পড়ে।
এর আগে, সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফ সামীরের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে তিন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়। এরপর তিনি যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র সঙ্গে আলাপকালেও তিন শিক্ষার্থী নিহতের দাবি করেন। কলেজের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ গভীর শোক ও ক্ষোভের সঙ্গে জানাচ্ছে যে, আজ আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক নৃশংস হামলা চালানো হয়েছে। তথাকথিত সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বহিরাগত একদল সন্ত্রাসী প্রবেশ করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এ হামলায় তিনজন শিক্ষার্থী নির্মমভাবে প্রাণ হারায় এবং শতাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক আহত হন। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর, যাদের মধ্যে কয়েকজনকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সূত্র: দৈনিক সংগ্রাম