সব জেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি গঠন শুরু

অনলাইন ডেস্ক: দেশব্যাপী জেলা কমিটি গঠন করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। থানা পর্যায়ে কমিটি গঠন করছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। এ জন্য ৯টি নির্দেশনা দিয়েছে তারা। কমিটির সদস্যদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৫০ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে পঞ্চাশোর্ধ্ব নাগরিকেরা একটি পরামর্শক কমিটির মাধ্যমে নাগরিক কমিটির সঙ্গে কাজ করতে পারবেন।

প্রথমে কোটা সংস্কার আন্দোলন, সেই আন্দোলন থেকে সরকার পতনের এক দফা দাবি। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গণঅভ্যুত্থানের মুখে সরকার প্রধান দেশত্যাগ করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন দেশের ছাত্র-জনতা। শেখ হাসিনা সরকার পতনের এক মাস ১১ দিন পর গত ১৩ সেপ্টেম্বর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের শক্তিকে সংহত করে দেশ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে আহ্বায়ক ও আখতার হোসেনকে সদস্যসচিব করে ৫৫ সদস্যের জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠন করা হয়। গত ২২ সেপ্টেম্বর আবদুল্লাহকে আহ্বায়ক এবং আরেক সমন্বয়কারী আরিফ সোহেলকে সদস্য সচিব করে ৪ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কেন্দ্রীয় কমিটি গত শনিবার জেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন শুরু করেছে। কুষ্টিয়া জেলায় ১১১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে এই কার্যক্রম শুরু হলো। পর্যায়ক্রমে অন্য জেলাগুলোতেও কমিটি গঠন করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এমন অবস্থার মধ্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে, আসলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা কোন পথে যাচ্ছেন?

এমন প্রশ্নের জবাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি জাতীয় প্ল্যাটফরম হিসেবে থাকবে। যদি কেউ কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে চায় তবে তিনি এই প্ল্যাটফরমের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না। আর জেলায় জেলায় কমিটি গঠন করছি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছাত্র-জনতাকে সংগঠিত করতে। সকলকে নিয়ে একটি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতেই জেলায় জেলায় কমিটি দেওয়া হচ্ছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা গত ৮-১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মুন্সীগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, সিলেট, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহীসহ দেশের ৪৪টি জেলা সফর করেছেন। এসব জেলায় ‘গণ-অভ্যুত্থানের প্রেরণায় শহিদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছাত্র-নাগরিক মতবিনিময় সভা’ শিরোনামে সভা হয়। প্রতিটি সভায় শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। সভায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও সহসমন্বয়কদের কাছে রাষ্ট্র সংস্কারের বিভিন্ন দিক নিয়ে নিজেদের নানা প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন। বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলা, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা ও জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের চেতনা রক্ষাসহ বিভিন্ন দাবি ও প্রস্তাব এসেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আয়োজিত জেলা পর্যায়ের মতবিনিময় সভাগুলোয়। এসব দাবি ও প্রস্তাব এক জায়গায় এনে এখন একটি প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলছে। এর পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা আলোচনা করে এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করবেন।

জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও মুখপাত্র সামান্তা শারমিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘থানা পর্যায়ের কমিটি গঠনের নির্দেশনা’। এগুলোর মধ্যে আছে জাতীয় নাগরিক কমিটির থানা পর্যায়ের সব কমিটি ‘প্রতিনিধি কমিটি’ হিসেবে পরিচিতি পাবে; প্রতিনিধি কমিটির সবাই ‘থানা প্রতিনিধি’ নামে পরিচিতি পাবেন; প্রতিটি প্রতিনিধি কমিটি গঠনের ৬০ দিনের মধ্যে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে; জেলা পর্যায়ের থানা কমিটির সর্বনিম্ন সদস্যসংখ্যা হবে ২১ ও মহানগরের থানা কমিটি সর্বনিম্ন ৩১ সদস্যবিশিষ্ট হবে; সব কমিটিতে সর্বনিম্ন ২৫ শতাংশ নারী, ৫ শতাংশ শহিদ পরিবার বা আহত অভ্যুত্থানকারী, ৫ শতাংশ সংখ্যালঘু, ৫ শতাংশ কৃষক-শ্রমিক শ্রেণি ও এলাকাভিত্তিক সব জাতিসত্তার প্রতিনিধিত্ব রাখার পাশাপাশি প্রতিনিধি কমিটি থেকে আহ্বায়ক কমিটিতে রূপান্তরিত হতে হলে সব ক্রাইটেরিয়া (শর্ত) পূরণ করতে হবে। জাতীয় নাগরিক কমিটির অন্য নির্দেশনাগুলো হলো থানা কমিটিতে শিক্ষক, আইনজীবী, লেখক, চিকিত্সক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, গৃহিণী ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে তরুণ নেতৃত্বের সমন্বয় করতে হবে; পঞ্চাশোর্ধ্ব সম্মানিত নাগরিকেরা একটি পরামর্শক কমিটির মাধ্যমে জাতীয় নাগরিক কমিটির সঙ্গে কাজ করবেন; থানা পর্যায়ের কমিটিতে থাকার ক্ষেত্রে ঐ থানার নিবাসী হতে হবে এবং আওয়ামী লীগের কোনো অংশীজন বা সুবিধাভোগী কমিটিতে থাকতে পারবে না এবং অভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করতে হবে। সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক

Related Articles

Back to top button