ঢামেকে প্রতিদিন আসছে ১০ হাজার রোগী, সামাল দিতে হিমশিম

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের সর্ববৃহত্ সরকারি চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল। সারা দেশ থেকে এখানে রোগী আসে চিকিৎসা নিতে। সুচিকিৎসার জন্য সুনাম থাকায় প্রাচীন এই হাসপাতালটির বারান্দা, মেঝে ও সিঁড়িতে রাত কাটিয়ে হলেও সেবা নিতে চায় রোগীরা। দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীদের শেষ ভরসাস্থল এই হাসপাতাল। রোগীরা প্রত্যাশা করে—সরকারি দেশসেরা এই হাসপাতালে তারা সব ধরনের চিকিৎসাসেবা পাবে। প্রতিদিন জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগ মিলে ১০ সহস্রাধিক রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসে।

প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক রোগীর চাপ সামলাতে হাসপাতালের চিকিত্সক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব সময় হিমশিম খেতে হয়। চিকিৎসাসেবা সামাল দিতে গিয়ে ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেশির ভাগই ছুটি পান না। এমনকি হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও উপপরিচালক আশরাফুল আলমকেও প্রতিদিনই ১৮ ঘণ্টা হাসপাতালে থাকতে হয়। মাঝেমধ্যে রাতেও হাসপাতালে থাকতে হয় তাদের।

এই হাসপাতালে রয়েছে তীব্র শয্যাসংকট। নেই পর্যাপ্ত জনবল। এত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও হাসপাতালটি সাধারণ মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে। কারণ, দুর্ঘটনায় আহত, আগুনে দগ্ধ, জটিল ও দুরারোগ্যসহ নানা রোগে আক্রান্ত রোগী এই হাসপাতালে পৌঁছাতে পারলে চিকিৎসাসেবা পাবেনই—এমনটা মনে করে সবাই। আর তাই সারা দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে প্রতিদিন বহু রোগী ছুটে আসে এই হাসপাতালে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিত্সকরা জানান, ঢাকার বাইরে প্রতিটি জেলা সদরে রয়েছে সরকারি হাসপাতাল, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে রয়েছে চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র। জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলায় সিজার ও অন্যান্য জেনারেল সার্জারিরও ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ সরকারি হাসপাতালে দুপুরের পর কোনো অপারেশন হয় না। বেশির ভাগ রোগীকেই ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। এসব রোগীর ৮০ ভাগই আসেন ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে। তারা আরো জানান, প্রতিদিনই রোগীর চাপ বাড়ছে। বর্তমানে চলছে ডেঙ্গুর মৌসুম। এছাড়াও পরিবেশগত ও ভেজাল খাদ্যের কারণ ছাড়াও বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে ক্যানসার, কিডনি, লিভারসহ জটিল সব রোগীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। সাধারণ ও জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য আলাদা বিশেষায়িত ইউনিট রয়েছে ঢাকা মেডিকেল হাসাপাতালে। এছাড়াও দেশের যে কোনো দুর্যোগের সময় কিংবা দুর্ঘটনায় হতাহতদের এই হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়ে থাকে। রোগীদের ধারণা, এখানে চিকিৎসা নিতে এলে শয্যা না থাকলেও করিডোরে থেকে হলেও চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেও এই হাসপাতালে অনেক হতাহতের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এখনো অনেকে এখানে ভর্তি রয়েছেন। করোনার সময়েও এই হাসপাতালের ভূমিকা ছিল সবার ঊর্ধ্বে। প্রচণ্ড রোগীর চাপ সামলাতে মহাখালীতে করোনার সময় আলাদাভাবে প্রতিষ্ঠিত ১ হাজার ৫৪ শয্যার বিশেষায়িত করোনা (ডিএনসিসি) হাসপাতালটি ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অধীনে দেওয়ার জন্য প্রস্তাব করেছে।

ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল থেকে ডাক্তার, নার্স, ও কর্মচারীদের সেখানে ৩ শিফটে দায়িত্ব পালনের জন্য পদায়ন করা হবে। বিষয়টি নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও আলোচনা করেছে। সেটি বাস্তবায়নের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রস্তাব পাঠাচ্ছে বলে জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯৪৬ সালের ১০ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ চালু হয়। এই ভবনটি বহু পুরোনো এবং জরুরি সংস্কার করা আবশ্যক। ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের জনবলের তীব্র সংকট রয়েছে। তারপরেও বিরামহীনভাবে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন ডাক্তার-নার্সসহ স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা। দেশের সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবা পাওয়ার শেষ ভরসাস্থল এটি। সেই আস্থা ধরে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা এই জনবল দিয়ে সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ক্যাম্পাসে আরো ৫ হাজার বেডের একটি হাসপাতাল তৈরি করার কার্যক্রম চলছে। এই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হলে জনবলসহ অবকাঠামো বৃদ্ধি পাবে। রোগীদের শয্যা পেতে কোনো সমস্যা থাকবে না। রোগীরা বিনা মূল্যে একই ছাতার নিচে অত্যাধুনিক চিকিৎসা পাবে।

Related Articles

Back to top button