যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারণ করবে সাত অঙ্গরাজ্য

অনলাইন ডেস্ক: মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁদের ৫ নভেম্বরের নির্বাচনের দিকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা দুজন আধুনিক যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী।

চলতি বছর নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ভর করছে মূলত হাতে গোনা কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের ওপর। ভোটের এক সপ্তাহের কম সময় বাকি থাকলেও প্রতিদ্বন্দ্বীরা তাঁদের মধ্যকার ব্যবধান কমিয়ে আনতে পারেননি।

মার্কিন সংবিধানের অধীন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের নিজস্ব ভোট রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জটিল ইলেকটোরাল কলেজ ব্যবস্থার অধীন প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে জনসংখ্যার ভিত্তিতে নির্দিষ্টসংখ্যক ইলেকটর (নির্বাচক) থাকেন। ৫০টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে ৪৮টির জন্য নিয়ম হলো—যিনি পপুলার ভোটে (সাধারণ নাগরিকদের ভোট) জিতবেন, তিনিই সে অঙ্গরাজ্যের সব কটি ইলেকটোরাল ভোট পাবেন; সেখানে পপুলার ভোটের ব্যবধান যত কমই হোক না কেন।

নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীকে জয়ী হওয়ার জন্য ৫৩৮টি ইলেকটোরাল ভোটের মধ্যে ২৭০টি ভোট পেতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলো বড় প্রভাব রাখে। এ বছর দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যের সংখ্যা সাত। একনজরে দেখা নেওয়া যাক এসব রাজ্যের খুঁটিনাটি।

পেনসিলভানিয়া একসময় ডেমোক্র্যাটদের জন্য অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য অঙ্গরাজ্য ছিল। কিন্তু ইদানীং এর চেয়ে হাড্ডাহাড্ডি পরিস্থিতি আর কোথাও নেই।

২০১৬ সালে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প অঙ্গরাজ্যটিতে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ পয়েন্টে জয়ী হন। সেখানে ২০২০ সালে ১ দশমিক ২ শতাংশ পয়েন্টে জয়ী হন ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেন।

ফিলাডেলফিয়া ও পিটার্সবার্গের মতো ক্ষয়িষ্ণু শিল্পনগরগুলোর জন্য পরিচিত পেনসিলভানিয়া। কয়েক দশক ধরে অব্যাহতভাবে শিল্প উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণে সংকটে রয়েছে অঙ্গরাজ্যটি।

ট্রাম্প ও হ্যারিস পূর্বাঞ্চলের এই অঙ্গরাজ্যে বারবার প্রচারণা চালিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে তাঁদের একমাত্র বিতর্কটি সেখানেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল। গত জুলাই মাসে পেনসিলভানিয়ায় অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে বন্দুকের গুলির লক্ষ্য হন ট্রাম্প। তিনি এ রাজ্যে গ্রামাঞ্চলের শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীকে কাছে টানতে চেষ্টা করছেন। ছোট শহরগুলো অভিবাসীদের দখলে চলে যাচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন।

দক্ষিণ-পূর্বের এ অঙ্গরাজ্য ২০২০ সালের নির্বাচনে টান টান নির্বাচনী এলাকা হিসেবে ভূমিকা রেখেছে। সেখানকার নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক এখনো জারি আছে। ওই সময় জর্জিয়ার কৌঁসুলিরা ট্রাম্পকে নির্বাচনে হস্তক্ষেপের একটি মামলায় অভিযুক্ত করেছিলেন; যদিও ট্রাম্পের কপালগুণে নির্বাচনের পর পর্যন্ত মামলাটি স্থগিত রাখা হয়েছে।

২০২০ সালের নির্বাচনে জো বাইডেন প্রথম কোনো ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসেবে অঙ্গরাজ্যটিতে জয়লাভ করেন। এর আগে ১৯৯২ সাল থেকে ডেমোক্রেটিক পার্টির কোনো প্রার্থী অঙ্গরাজ্যটিতে জিততে পারেননি।

এবারের নির্বাচনে জর্জিয়ায় জনমিতিগত পরিবর্তন কমলা হ্যারিসকে সুবিধা দিতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। তিনি সেখানকার সংখ্যালঘু ভোটারদের সমর্থন আদায়ে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বের অঙ্গরাজ্যটিতে ১৯৮০ সালের পর শুধু একবার ডেমোক্রেটিক পার্টি জয়লাভ করেছিল। তবে কমলা হ্যারিসের বিশ্বাস, এবার তাঁর দল নর্থ ক্যারোলাইনায় ভালো করবে।

নর্থ ক্যারোলাইনার জনসংখ্যা এখন এক কোটির বেশি। সেখানে দিন দিন জনসংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি আরও বৈচিত্র্যময় হচ্ছে, যা ডেমোক্র্যাটদের জন্য সুবিধাজনক।

এই অঙ্গরাজ্যে রিপাবলিকান পার্টির গভর্নর প্রার্থী একটি কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ায় দলের নেতাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, এ কারণে সেখানে অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরে যেতে পারেন ট্রাম্প।

প্রতিবেশী জর্জিয়ার মতো নর্থ ক্যারোলাইনাতেও ঘূর্ণিঝড় হেলেনের ক্ষয়ক্ষতি উড়োতাসের মতো অজানা প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে পারে। এই ঘূর্ণিঝড়ে নর্থ ক্যারোলাইনার শহরগুলো সম্প্রতি লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। এ অঞ্চলের ভোটাররা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়-পরাজয়ে বড় প্রভাব রাখতে পারেন।

মিশিগান একসময় ডেমোক্র্যাটদের শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল। ২০১৬ সালের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে সেখানে পাশার দান উল্টে দেন ট্রাম্প। তবে ২০২০ সালে জো বাইডেন আবারও সেখানে রিপাবলিকানদের পরাজিত করেন। তাঁর বড় সমর্থক ছিল বড়সড় কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠী ও ইউনিয়নভুক্ত শ্রমিকেরা।

তবে এবার কমলা হ্যারিস মিশিগানের প্রায় দুই লাখ আরব-আমেরিকানের সমর্থন হারানোর ঝুঁকিতে আছেন। কারণ, গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার যুদ্ধে বাইডেন ও কমলার অবস্থানের জন্য তাঁদের নিন্দা করেছেন এ জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা।

২০২০ সালের নির্বাচনে এই অঙ্গরাজ্যে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে সবচেয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছিল। সেখানে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেন মাত্র ১০ হাজার ৪৫৭ ভোটে জয়ী হয়েছিলেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যাশা, বাইডেন-কমলা প্রশাসনের অভিবাসননীতির ফলে জনমনে যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে, তার কারণে অ্যারিজোনায় ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন বাড়বে। অঙ্গরাজ্যটি মেক্সিকো সীমান্তবর্তী।

কমলা গত সেপ্টেম্বরে অ্যারিজোনার সীমান্ত পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি অবৈধ অভিবাসন রোধে গত বছর দ্বিপক্ষীয় সীমান্ত বিল পুনরুজ্জীবিত করার প্রতিশ্রুতি দেন।

২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচারণার সময় অঙ্গরাজ্যটিকে খুব একটা গুরুত্ব দেননি ডেমোক্রেটিক পার্টির তৎকালীন প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। সেখানে পরাজিত হতে হয়েছিল তাঁকে।

তবে ২০২০ সালের নির্বাচনের চিত্র ছিল ভিন্ন। ওই বছর রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন জো বাইডেন।

তবে ট্রাম্প মনে করছেন, এবার অঙ্গরাজ্যটিতে জয়লাভ করা সম্ভব। রিপাবলিকানদের গ্রীষ্মকালীন জাতীয় সম্মেলনও উইসকনসিনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

বাইডেন যখন নির্বাচনী দৌড়ে ছিলেন, তখন উইসকনসিনে ট্রাম্প এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু কমলা আসার পর প্রতিদ্বন্দ্বিতা উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

নেভাডা অঙ্গরাজ্যের জনসংখ্যা ৩১ লাখ। ২০০৪ সালের পর সেখানে রিপাবলিকানরা একবারও জিততে পারেননি। তবে হিস্পানিক ভোটারদের সমর্থন আদায়ে ট্রাম্পের অগ্রগতি দেখে রক্ষণশীলেরা অনেকটাই নিশ্চিত যে এবার সেখানে রিপাবলিকানরা দৃশ্যপট বদলে দিতে পারবেন।

এবার বাইডেন যখন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ছিলেন, তখন ট্রাম্প এ অঙ্গরাজ্যে বেশ ভালো অবস্থান তৈরি করেছিলেন। কিন্তু কমলা হ্যারিস ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী মনোনীত হওয়ার পর সেখানে রিপাবলিকানদের জেতার সম্ভাবনা অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে। অঙ্গরাজ্যটিতে ছোট ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে সহায়তার জন্য অর্থনৈতিক পরিকল্পনা দিয়েছেন কমলা। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।

Related Articles

Back to top button