রেলের চাকরির সঙ্গে করছেন ওকালতি, নিয়মের তোয়াক্কা না করে ১৩ বছর পার
অনলাইন ডেস্ক: চট্টগ্রামে এক রেল কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তথ্য গোপন করে চাকরিতে যোগদান এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘ ১৩ বছর যাবৎ বেতন ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জিনিয়া নাসরিন নামে ঐ কর্মকর্তা বর্তমানে পূর্বাঞ্চলীয় রেলের সদর দপ্তরে আইন শাখায় আদালত পরিদর্শক (সিটিআই গ্রেড-১) পদে কর্মরত।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, জিনিয়ার নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা একটি মামলা বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়া তিনি রেলের চাকরির পাশাপাশি সক্রিয়ভাবে আইন পেশায় জড়িত, যা এই সংস্থার চাকরি নীতিমালার পরিপন্থি।
জিনিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে পূর্বাঞ্চলীয় রেলের মহাব্যবস্থাপক নাজমুল আলম ইত্তেফাককে বলেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে জিনিয়া নাসরিন দাবি করেছেন, তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ইত্তেফাককে তিনি বলেন, তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে সংবাদমাধ্যমে কিছু বলতে চাই না। আমার যা বলার তদন্ত কমিটির সামনে বলব।
জানা গেছে, কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগ নেতা শেখ লোকমান হোসেনের মেয়ে জিনিয়া নাসরিন ২০১১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর রেলের চাকরিতে যোগ দেন। তিনি চট্টগ্রাম জেলা বারের সদস্যপদ গ্রহণ করেন তার আগের বছর, অর্থাৎ ২০১০ সালের ১৫ ডিসেম্বর। ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সনদ নবায়ন ফি ও বার্ষিক চাঁদা পরিশোধ করেছেন। দ্বৈত পেশায় জড়িত অভিযুক্ত হওয়ার পর এ বছর ৭ মার্চ তিনি তার অন্তর্ভুক্তি (এনরোলমেন্ট) সনদ স্থগিত করার জন্য বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের কাছে আবেদন করেন যা এখনো প্রক্রিয়াধীন।
সূত্র জানায়, জিনিয়া নাসরিনের দ্বৈত পেশায় নিয়োজিত থাকার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় গত ২৮ আগস্ট আইন কর্মকর্তা (পূর্ব) এর দপ্তর থেকে পূর্বাঞ্চলীয় রেলের মহাব্যবস্থাপক ও চিফ পার্সোনেল অফিসারের নিকট নথি উপস্থাপন করা হয়। এতে জিনিয়াকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে রেলপথ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তদন্ত কমিটি গঠন করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব করা হলেও এই প্রস্তাবকে পাশ কাটিয়ে নামমাত্র তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়, যা রেলের সার্ভিস রুলের পরিপন্থি।
রেলের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অভিযোগ করেন, পিতার রাজনৈতিক পরিচয়ের সুবাদে রেলের চাকরিতে যোগ দেন জিনিয়া। কর্মক্ষেত্রে সুবিধা লাভের আশায় তিনি সবসময় নিজেকে সাবেক রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের লোক হিসেবে পরিচয় দেন।
পূর্ব রেলের চিফ পার্সোনেল অফিসার (সিপিও) জাকির হোসেনও জিনিয়াকে কর্মক্ষেত্রে ‘বিশেষ পক্ষপাতিত্ব’ দেখান, যে কারণে রেলের চাকরির পাশাপাশি নিয়ম বহির্ভূতভাবে আইন পেশায় জড়িত থাকলেও এ নিয়ে জিনিয়াকে কখনো কর্তৃপক্ষের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়নি। এছাড়া সম্প্রতি বিভাগীয় অনুমতি ছাড়াই এক নারী সহকর্মীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করে ব্যাপক আলোচিত হয়েছেন জিনিয়া।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জিনিয়া নাসরিন বলেন, পূর্ব রেলের সদর দপ্তরের আইন শাখার একজন মহিলা সহকর্মীর অশালীন কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় একটি মহল ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। তারা দুদকসহ বিভিন্ন জায়গায় বানোয়াট অভিযোগ দিয়ে আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করার চেষ্টা করছে। বাবার পরিচয়ে নয়, সম্পূর্ণ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় আমি রেলের চাকরি পেয়েছি। চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে কখনো আইন পেশাতেও জড়িত হইনি।